সিলেটে হিট স্ট্রোকে ১ জনের মৃত্যু
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মে ২০২৩, ১০:০৭:৫৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : গত কয়েকদিন থেকে সারাদেশের মতো সিলেটে বেড়েছে তাপমাত্রা। ঘরে-বাহিরে কোথাও নেই স্বস্তি। প্রচ- রোদে জনজীবন অতিষ্ট। এতে বেড়েছে ‘হিট স্ট্রোকের’ ঝুঁকি। গতকাল বুধবার নগরীতে ‘হিট স্ট্রোকে’ এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। এনিয়ে সিলেটে চলতি মাসে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে একজন নারী ও চারজন পুরুষ।
এদিকে গতকাল গরমে ‘হিট স্ট্রোক’ করে বৃদ্ধ মারা যাওয়ার পর থেকে সিলেটে ‘হিটস্ট্রোক’ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে এই আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ এরআগে মারা যাওয়া সকলেই ছিলেন শ্রমজীবী। তারা মাঠে কাজ করছিলেন। সর্বশেষ গতকাল বুধবার বিকাল ৩টায় সিলেট নগরীর লালবাজারে ‘হিট স্ট্রোক’ করে ক্রিপেশ রায় (৬০) নামের এক বৃদ্ধ মারা যান। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আনন্দপুর গ্রামে। বিষয়টি নিশ্চিত করে এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে- অতিরিক্ত গরমে ওই ব্যক্তি মৃত্যু হয়েছে।
এ অবস্থায় আগামী তিন-চারদিনের মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস দিতে পারেনি আবহাওয়া বিভাগ। এছাড়া আগামী দু-একদিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কোনো কোনো স্থানে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়ে তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং সেটি অব্যাহত থাকতে পারে। আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। সারাদেশে তাপমাত্রা বাড়ার পাশাপাশি গরমেরে তীব্রতা আরো কয়েকদিন থাকবে। গতকাল বুধবার সিলেটে তাপমাত্রা ছিলো ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালের গরম রীতিমতো আপদ (হ্যাজার্ড) থেকে দুর্যোগে রূপ নিচ্ছে। তারা বলছেন, অতি উষ্ণ তাপের মধ্যে কেউ যদি টানা ছয় ঘণ্টা থাকেন, তাহলে তার শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, ফুসফুস ও যকৃতের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। এমনকি হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে। তাদের এই আশঙ্কার সত্যতা অনেকটাই এখন দেখা মিলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এটি বাড়তে বাড়তে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পেরিয়ে গেলেই হিটস্ট্রোক হতে পারে। এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। দ্রুত চিকিৎসা না দিলে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।
হিটস্ট্রোকের প্রধান কারণ পানি শূন্যতা। এর লক্ষণগুলো হলো-মাথা ঝিমঝিম করা, বমি, অবসাদ ও দুর্বলতা, মাথাব্যথা, মাংসপেশির খিঁচুনি, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি। হিটস্ট্রোকের রোগীর ত্বকে ঘাম থাকে না, ত্বক খসখসে, শুষ্ক ও লাল দেখায়, পাশাপাশি হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্টও হতে পারে। ছোটো শিশু, বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি, দিনমজুরদের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে তাদের পরামর্শ হলো-পানিশূন্যতা যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে, গরমে ও রোদে প্রচুর পরিমাণ পানি, ডাবের পানি, স্যালাইন খেতে হবে। বিদ্যালয়ে বা খেলার মাঠে শিশুদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। দুপুরের প্রচ- রোদে ভারী কাজ বা শারীরিক ব্যায়াম করা যাবে না। বাইরে বেরোলে সাদা বা হালকা রঙের কাপড় পরতে হবে এবং ছাতা ব্যবহার করতে হবে।