সিসিক নির্বাচনে ৪১ প্রার্থীকে বিএনপির শোকজ : হচ্ছেন আজীবন বহিস্কার!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০২৩, ১২:০১:১৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়া ৪১ জন প্রার্থীকে দলের কেন্দ্র থেকে ২৪ ঘন্টার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তদের মধ্যে ১ জন মেয়র প্রার্থী, ৩৬ জন কাউন্সিলার প্রার্থী ও ৪ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলার প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে এসকল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আজীবন বহিস্কারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ইতোমধ্যে রোববার বরিশাল সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিএনপির ১৯ জন প্রার্থীকে কেন্দ্র থেকে আজীবন বহিস্কার করা হয়েছে। এর আগে গাজীপুর সিটি নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীদের আজীবন বহিস্কার করেছিল বিএনপি।
এদিকে শনিবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ৪১ টি নোটিশ পৃথকভাবে স্ব স্ব প্রার্থীদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঐ নোটিশে বলা হয়েছে- বিগত ১৫ বছর ধরে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ দেশপ্রেমিক জনগণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলন করে আসছে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর যাবৎ কারাভোগ করছেন। নিপীড়ক সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন এবং প্রায় ৫০ লক্ষ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানি করছে। ইতিমধ্যে আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে গুম করে রাখা হয়েছে। এমতাবস্থায় বিএনপি এই অবৈধ সরকারের অধীনে কোন প্রকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অথচ আপনি দলের একজন সদস্য হয়ে ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা করে এই সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেছেন। সুতরাং কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা, তার কারণ দর্শিয়ে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে একটি লিখিত জবাব দলের কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দেওয়ার জন্য আপনাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।
সিসিক নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির নোটিশ প্রাপ্ত প্রার্থীরা হলেন- মেয়র পদপ্রার্থী ও ২৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সালাহ উদ্দিন রিমন, মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি, বর্তমান সদস্য ও ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি ও ২৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার পদপ্রার্থী এডভোকেট রুকশানা বেগম শাহনাজ, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও ৩৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিরার প্রার্থী আলতাফ হোসেন সুমন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৩৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী উসমান হারুন পনির, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও ২৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী গোলাম মোস্তফা কামাল, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও ৩৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী গউছ উদ্দিন পাখি, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ৩৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী দেলওয়ার হোসেন নাদিম, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী মুফতি কমর উদ্দিন কামু, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী মিজানুর রহমান মিঠু, ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী মো : কামাল মিয়া, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী খালেদ আকবর চৌধুরী, ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী আমিনুর রহমান খোকন, ওয়ার্ড বিএনপি নেতা ও ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী শাহেদ সিরাজ, ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী সাঈদুর রহমান জুবের, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও ১১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী আব্দুর রহিম মতছির, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও ১৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী মো: মুজিবুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী সালমান চৌধুরী শাম্মী, ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি ও ২৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী মামুনুর রহমান মামুন, এম সি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ২২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী বদরুল আজাদ রানা, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও ২৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী হুমায়ুন কবির সুহিন, ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি ও ২৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী সেলিম আহমদ রনি, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী আলী আব্বাস, বরইকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ৩০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী জাবেদ আমিন সেলিম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৩০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী রাজু মিয়া, বরইকান্দি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি ও ৩০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী সানর মিয়া, সদর উপজেলার টুলটিকর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৩১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী মো: আব্দুল মুকিত, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আইন সম্পাদক ও ৩২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী এডভোকেট হেদায়াত হোসেন তানভীর, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ও ৩২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী দুলাল আহমদ, সাবেক সিলেট জেলা বিএনপি নেতা ও ৩৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী দিলওয়ার হোসেন জয়, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও ৪০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী আব্দুল হাছিব, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক ও ৪২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী সুমন আহমদ শিকদার, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপি নেতা ও ২৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী সাহেদ খান স্বপন, বরইকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক নেতা ও ৩০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী নুরুল ইসলাম মাসুম, জেলা মহিলা দলের সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের ২২,২৩,২৪ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলার প্রার্থী সালেহা কবির শেপি, মহানগর মহিলা দলের সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের ১০,১২,১২ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলার প্রার্থী রুহেনা খানম মুক্তা, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট ইউনিটের সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের ১০,১২,১২ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলার প্রার্থী এডভোকেট জহুরা জেসমিন, ১৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের ১৬,১৭,১৮ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলার প্রার্থী কামরুন্নাহার তিন্নি।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, কেন্দ্র থেকে ৪১ জনকে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে ২৪ ঘন্টার সময় দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে যারা নির্বাচন থেকে সরে না আসলে কেন্দ্র থেকে যথানিয়মে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে প্রার্থী হওয়াদের কেন্দ্র থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। আমার বিশ^াস তারা দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
অতীতেও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় অনেক নেতাকর্মী বহিস্কার হয়েছেন। পরবর্তীতে তারা সকলেই আবার দলে ফিরেছেন। এবারও কি আগের মতই হবে নাকি ব্যতিক্রম এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, এবারের বিষয়টা অবশ্যই ভিন্ন। কারণ অতীতে দেশ ও দল এতটা সঙ্কটের মূখে পড়েনি। এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তাই দল বাধ্য হয়েই সকল নির্বাচন বয়কট করেছে। নির্বাচনে অংশ না নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের বার বার সতর্ক করা হয়েছে। শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। এরপরও যারা নির্বাচনে অংশ নিবেন তাদের ব্যাপারে দলের স্থায়ী কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ফলে অতীতের বহিস্কার ও দলে ফেরার সাথে বর্তমান প্রেক্ষাপটের ভিন্নতা রয়েছে।