সহসা কমছেনা লোডশেডিং
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুন ২০২৩, ৯:৫৬:৫৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: তীব্র তাপদাহের সঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিং বিপর্যস্ত করে তুলেছে জনজীবন। নগরের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা গ্রামাঞ্চলে। সেখানে দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। খোদ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দেশব্যাপী চলমান তীব্র লোডশেডিংকে অসহনীয় উল্লেখ করেছেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান লোডশেডিং থাকবে জুন মাসজুড়েই। প্রাথমিক জ্বালানি গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বন্ধ আছে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহ স্বাভাবিক হলে আগামী মাসে লোডশেডিং কমে আসবে। তবে একেবারে বন্ধ হবে, তা বলা যাচ্ছে না।
এদিকে, চলমান লোডশেডিংয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শিল্পকারখানা ও কৃষকরা। গ্রামাঞ্চলে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প চলছে না। ফলে সময়মতো সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা। বিকল্প ব্যবস্থায় সেচ দেওয়ার কারণে বেড়ে যাচ্ছে চাষের খরচ। অন্যদিকে, শিল্পকারখানাগুলোতে এমনিতেই গ্যাসের সংকট তীব্র। তারও পর লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকে। এছাড়া চিকিৎসাসেবা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে ১৪ হাজার থেকে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি প্রায় দেড় হাজার থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট। ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুতে গ্যাসের সরবরাহও আগের চেয়ে কমেছে। মূলত ডলার সংকটে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানি বিঘ্নিত হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে মাস দুয়েক সময় লাগবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি আরও বাড়বে। কারণ হিসেবে জানান, দেশের সবচেয়ে বড় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এটি। এ কেন্দ্র থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো রাজধানীতে। কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে, বাড়বে লোডশেডিং। কয়লা সংকটের কারণে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ কেন্দ্রটির একটি ইউনিট গত ২৫ মে বন্ধ হয়ে যায়। অন্য ইউনিটটি বন্ধের পথে।
এদিকে, পেট্রোবাংলার গ্যাস সরবরাহের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গশনিবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর চাহিদা ছিল ২ হাজার ১৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে গ্যাসের অভাবে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিল পরিশোধ করতে না পারায় উদ্যোক্তারা জ্বালানি তেলও আমদানি করতে পারছে না। এ কারণে ফার্নেস অয়েল থেকে কমবেশি দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। যেখানে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ৪ হাজার মেগাওয়াটি উৎপাদন করার ক্ষমতা রয়েছে।
পিডিবি থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, শনিবার সারা দেশে ১ হাজার ১৭৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ২৭০, চট্টগ্রামে ১২৪, খুলনায় ১৬০, কুমিল্লায় ১৯০, ময়মনসিংহে ১৮১, সিলেটে ১৩৭, বরিশাল ৪৩ ও রংপুরে ৭২ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে।