সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির ৪৩ জন স্থায়ী বহিষ্কার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুন ২০২৩, ৭:১৮:৫৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বর্তমান ও সাবেক ৪৩ নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে বিএনপি। বহিস্কৃতদের মধ্যে একজন মেয়র প্রার্থী এবং ৩৮ জন পুরুষ কাউন্সিলর ও ৪ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন।
বিষয়টি গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দৈনিক জালালাবাদকে নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর করা চিঠিতে এ বহিষ্কারের কথা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা ‘বেঈমান’, ‘বিশ্বাসঘাতক’ ও ‘মীরজাফর’ হিসেবে চিহ্নিত থাকবেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে গত শনিবার রাতে সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি নেতাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল দলটি। বিএনপি জানিয়েছে, কারণ দর্শানোর নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের জবাব চেয়ে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যে পাঁচজন নেতা জবাব দিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে কেউ সরে আসেননি। এ কারণে ওই ৪৩ নেতাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপি জানিয়েছে, দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অনেক দিন রহস্য রাখার পর শেষ পর্যন্ত গত ২০ মে নির্বাচন বর্জন করেন। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদেও দলগতভাবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা না করার দলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সতর্ক করে বিএনপি সিলেটের ৩২ নেতাকে চিঠি দিয়েছিল। দলের এমন অবস্থানের মুখে সেখানে কাউন্সিলর পদে ভোট করতে আগ্রহী ১৫ জন নেতা অবশেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপরও সিলেটে দলটির ৪২ জন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সোমবার এসব নেতাকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির যে ৪২ জন নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, এর মধ্যে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. ছালাহ উদ্দিন মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। অন্যরা কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব নেতার মধ্যে জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতা রয়েছেন।
কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. ছালাহ উদ্দিন লিখেছেন, ‘আমি এবার সিলেট সিটির নির্বাচন করতে ইচ্ছুক ছিলাম না। কিন্তু জনগণের চাপের মুখে আমার নির্বাচন করতে হচ্ছে। জনগণের ভাষ্য নৌকাকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেওয়া যাবে না। তাই বাধ্য হয়ে জনগণের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে গিয়ে আমাকে এ নির্বাচন করতে হচ্ছে। এই অবৈধ সরকারের পতন ঘটাতে আমাকে সিলেট সিটির মেয়র নির্বাচিত হওয়া প্রয়োজন।’
এদিকে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মহানগর মহিলা দলের সভাপতি রোকসানা বেগম নোটিশের জবাবে লিখেছেন, ‘ভোটারদের চাহিদার দিক বিবেচনা নিয়ে আমার এ প্রার্থী হওয়াকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আমি ওয়াদা করছি, বর্তমানের মতো ভবিষ্যতেও দলের আদর্শের প্রতি অবিচল থাকব।’
আজীবন বহিস্কৃতদের মধ্যে রয়েছেন মেয়র প্রার্থী ও ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সালাউদ্দিন রিমন। সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে যারা বহিস্কৃত হয়েছেন তারা হলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ তৌফিফুল হাদি, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য নজরুল ইসলাম মুনিম, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জল, ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব তুহিন, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট রুকশানা বেগম শাহনাজ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক উসমান হারুন পনির, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা গোলাম মোস্তফা কামাল, গউছ উদ্দিন পাখি, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন নাদিম, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মুফতি কমর উদ্দিন কামু, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিঠু, ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক আহবায়ক মো. কামাল মিয়া, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য খালেদ আকবর চৌধুরী, আমিনুর রহমান খোকন, শাহেদ সিরাজ, ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান জুবের, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য আব্দুর রহিম মতছির, মুজিবুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সালমান চৌধুরী শাম্মী, ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রহমান মামুন।
এমসি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বদরুল আজাদ রানা, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য হুমায়ুন কবির সুহিন, ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি সেলিম আহমদ রনি, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আব্বাস, বরইকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আমিন সেলিম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু মিয়া, বরইকান্দি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি সানর মিয়া, টুলটিকর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল মুকিত, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট হেদায়েত হোসেন তানবীর, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য দুলাল আহমদ, জেলা বিএনপি নেতা দেলওয়ার হোসেন জয়, মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি আব্দুল হাছিব, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সহক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক সুমন আহমদ সিকদার, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপি নেতা সাহেদ খান স্বপন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপি নেতা ইউনুস মিয়া বরইকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক নেতা নুরুল ইসলাম মাসুম।
এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে যারা বহিস্কৃত হয়েছেন- জেলা মহিলা দলের সভাপতি সালেহা কবির শেপী, মহানগর মহিলা দলের সহ-সভাপতি রুহেনা বেগম মুক্তা, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট ইউনিটের সদস্য অ্যাডভোকেট জহুরা জেসমিন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি কামরুন নাহার তান্নি।