সিলেটে বাড়ছে মসলার দাম
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুন ২০২৩, ৩:৩১:১৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : আসন্ন ঈদুল আযহার পশু কুরবানীকে কেন্দ্র করে এবার অস্থির হতে শুরু করেছে মসলার বাজার। জিরা, ধনিয়া, গোলমরিচ, দারুচিনি, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, তেজপাতার দাম কেজিতে বেড়েছে দ্বিগুণ। ভারত থেকে আমদানি বন্ধ রাখা এবং সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে মসলার দাম বাড়ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে ভোক্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা কুরবানী আগে দাম বাড়াতে পারবে না বলে আগেভাগেই মাংসের অত্যাবশ্যকীয় মসলা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যাতে সরকারের তদরকি সংস্থার চাপে দাম কমাতে হলে মোটা অঙ্কের লাভ রেখে কমাতে পারেন।
মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন মসলার দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ২ মাস আগে জিরার কেজি ছিল ৩২০-৩৫০ টাকা। এখন ৭০০-৭৫০ টাকা। সিলেটে কেজিতে ৭০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ধনিয়া ১৯০ টাকা, কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়, কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে দারুচিনির দাম এখন ৫৬০-৫৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকা। এটার দাম দুই মাস আগে ছিল ১৫০ টাকা। প্রতি কেজি সরিষা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৭০ টাকা, মেথি ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, আলু বোখারা ৪৮০ থেকে ৫৩০-৫০০ টাকা, কিশমিশ ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, কাঠবাদাম ৭৩০ থেকে ৭৮০ টাকা, কাজুবাদাম ৮২০ থেকে ৯৫০ টাকা, পাঁচফোড়ন ১৫০ থেকে ২০০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব মসলার দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা।
মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লবঙ্গ-এলাচের দাম। ২ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি লবঙ্গ ৩০০ ও এলাচ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ ২৬০০ ও লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকা।
গেল রোজার ঈদে সিলেটে প্রতি কেজি আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ২ সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি আদা ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-৩০০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি রসুন কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালিঘাট ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় সারাদেশের ন্যায় সিলেটে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৯০-৯৫ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। তবে আমদানীর খবরে সিলেটেও পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। বর্তমানে ৭৫-৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। যদিও নতুন আমদানী করা পেঁয়াজ এখনো সিলেটে এসে পৌঁছায়নি। আমদানীর পেঁয়াজ সিলেটে আসলে দাম আরো কমবে।
নগরীর বিভিন্ন পাইকারী দোকানদারদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ৩ সপ্তাহের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তাই আমদানি করা মসলা পণ্যের দাম বাড়ছে। বর্তমানে রেট বেড়ে যাওয়ায় আমদানিকারকরাও বিপাকে পড়েছেন। তবে সরবরাহ বেড়ে গেলে মসলার দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের চাপে কুরবানীর আগে কোনো অজুহাতে ব্যবসায়ীরা মসলা পণ্যের দাম বাড়াতে পারছেন না। এখন ব্যবসায়ীরা কৌশলী হচ্ছেন। আগেভাগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যাতে প্রশাসনের চাপে কমাতে হলে অতিরিক্ত মুনাফা রেখেই কমাতে পারেন। আমাদের দাবি হচ্ছে, প্রশাসনের এখন থেকে বাজার তদারকি করা। তাহলে তাদের চালাকি ধরা পড়বে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সিলেটের উপ পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, বাজারের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। গেল রোজার ঈদেও আমরা প্রতিদিন অভিযান চালিয়েছি। কুরবানীর ঈদেও সেটা বজায় থাকবে। সিলেটের সব মসলা খাতুনগঞ্জ বাজার থেকে আনা হয়। ক্রয়মুল্যের সাথে বিক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এছাড়া বাজার দর স্বাভাবিক রাখতে আমরা আমদানি মূল্য, বিক্রয়মূল্য সবকিছু খতিয়ে দেখব।