চিনিতে দিশেহারা, কমছে পেঁয়াজ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুন ২০২৩, ১২:১০:২৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : নগরীতে দেখা মিলছেনা প্যাকেটজাত চিনির। খোলা চিনির দেখা মিললেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। অভিযোগ উঠেছে, ব্যবসায়ীরা চিনির দাম ইচ্ছেমতো বাড়ালেও বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না সরকার কিংবা বাজার মনিটরিং টিম। শেষ পর্যন্ত স্বস্তি ফিরেছে পেঁয়াজের দামে। বর্তমানে সিলেটে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ কেজি দরে।
শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে প্যাকেটজাত চিনি নেই। খোলা চিনি রয়েছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। অর্থাৎ কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি।
গত মাসের ১০ তারিখে খোলা চিনির মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু একমাস পরও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেশি নেওয়ার কথা স্বীকার করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। জানতে চাইলে সুবিদবাজারের এক মুদি দোকানী বলেন, প্যাকেটজাত চিনি এখন চোখেই দেখি না। কোম্পানির কাছে চাইতে চাইতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তিন থেকে চার মাস ধরে কোম্পানি প্যাকেটজাত চিনি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আমরা এখন আর এই চিনি বিক্রি করছি না।
খোলা চিনি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন জানিয়ে তিনি বলেন, এক কেজি চিনি আমার কেনাই পড়ে ১৩০ টাকা। আমি সরকার নির্ধারিত দরে কীভাবে বিক্রি করব! কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা লাভে বিক্রি করি।
একই ধরনের কথা বললেন কানিশাইলের আরেক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, প্যাকজাত চিনি বিক্রি করি না। খোলা চিনি বিক্রি করছি ১৪০ টাকা কেজিতে।
সরকারের বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খোলা চিনি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ কিংবা দুই সপ্তাহ নয়, এক মাস আগেও রাজধানীতে একই দরে খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে। তবে এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২২ সালের ৮ জুন রাজধানীতে চিনি বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। সেই হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে কেজি প্রতি চিনির দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
এদিকে চিনির বাজারের এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। আম্বরখানা বাজারে চিনি কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পেঁয়াজ, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় আজ সাধারণ মানুষের নিঃশ্বাস যায় যায় অবস্থা।
বন্দরবাজারস্থ কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতা বলেন, চিনির দাম বাড়ানোর সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন- নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি না করলে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীরা সঠিক দামে চিনি বিক্রি করছে কি না অভিযান চালিয়ে তা দেখা হবে। কিন্তু, আজ পর্যন্ত কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ক্ষুব্ধ ঐ ক্রেতা আরও বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। দোকানদারদের যখন বলি মন্ত্রী চিনির দাম নির্ধারণ করেছেন ১২০ টাকা কেজি, আপনি বেশি দামে বিক্রি করছেন কেন? দোকানদার বলেন, মন্ত্রীর কাছে যান। সেখান থেকে চিনি নিয়ে আসেন, আমার কাছে আসছেন কেন?
আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান মূল্যের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১০ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা নির্ধারণ করে। যা আগে ছিল ১০৪ টাকা। আর প্যাকেটজাত পরিশোধিত চিনির দাম কেজি প্রতি ১০৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২৫ টাকা করা হয়।
এদিকে পেঁয়াজের দামে স্বস্থি ফিরলে এখনো চড়া নিত্যপণ্যের বাজার। বর্তমানে মাছ, মাংস, সবজিসহ সবকিছুই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে বাজেট ঘোষণার পরপরই নিত্যপণ্যের বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানান ক্রেতারা। তারা বলছেন, প্রতি বছরই বাজেট ঘোষণার পর তার প্রভাব পড়ে নিত্যপণ্যের বাজারে। এখন বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। এ ছাড়া মাছের বাজারও চড়া। নতুন করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়া ক্রেতাদের জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলুর কেজি ৪০ টাকা, রসুন ১৬০ টাকা, কাচামরিচ ১২০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০-৭০ টাকা, করলার কেজি ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বেগুন ৪০-৫০ টাকা, ডিমের ডজন ১৪০ টাকা, পিয়াজ ৬০-৬৫ টাকা, আদা ২৫০-২৮০ টাকা, কাঁকড়ল ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, গরুর মাংস ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৯৫০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাঙ্গাশ মাছ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, তেলাপিয়া মাছের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। তেল, চিনি, আটা-ময়দার দামও বাড়তি।
ক্রেতারা জানান, বাজেটে ঘোষণার সাথে সাথেই সবকিছুর দাম বাড়তি। এখন আবার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে বাজেটে। এর প্রভাব বাজারে পড়তে শুরু করেছে। ১ জুলাই থেকে বাজেট কার্যকরের কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা এখনই অনেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
মদীনা মার্কেটে কাঁচা বাজারে আসা ক্রেতা সবুজ বলেন, কয়েকমাস ধরে অতিরিক্ত দামে সবকিছু ক্রয় করতে হচ্ছে। এখন আবার শুরু হয়েছে বাজেটের উত্তাপ। আমাদের সাধারণ জনগণের কথা কেউ ভাবছে না। আগে যে পরিমাণ কেনাকাটা করতাম তার তিন ভাগের এক ভাগও কিনতে পারছি না।
ক্রেতা নাজমা আক্তার বলেন, আগে এমনিতেই জনগণ প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খেতো। এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমাদের। সবকিছু সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আসলে সুস্থ জীবন-যাপনও সহজ হয়ে যেতো। এখন তো আমরা অসুস্থ জীবন-যাপন করছি। এদিকে বেতন বাড়ে না। মাস শেষ হওয়ার আগে টাকা খরচ হয়ে যায়। নিত্যপণ্য আমাদের সবসময় প্রয়োজন হয়। বাজেট ঘোষণার পর আরও শঙ্কা বেড়ে গেছে। এই শহরে টিকে থাকতে পারবো কিনা সেই শঙ্কায় আছি।