চায়ের আতঙ্ক ‘রেড স্পাইডার’
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুন ২০২৩, ১:০০:০০ অপরাহ্ন
খরায় ১ মাস পেছালো চা উত্তোলন
স্টাফ রিপোর্টার : টানা খরায় ১ মাস পিছিয়েছে চলতি মৌসুমের চা উত্তোলন। বৃষ্টির অভাবে সিলেটের চা বাগানগুলোতে দেখা দিয়েছে ক্ষতিকর ভাইরাস ‘রেড স্পাইডার’। ওষুধে কমানো যায়নি এই ভাইরাস। শেষ পর্যন্ত আশির্বাদের বৃষ্টিতে চা শিল্পে ফিরেছে প্রাণ। দূর হয়েছে চা’এর আতঙ্ক ‘রেড স্পাইডার’ ভাইরাস। কুড়ি ছাড়তে শুরু করেছে মরতে মরতে বেচে থাকা ছারা গাছে। আরো দুয়েকদিন বৃষ্টি হলে চা উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে প্রত্যাশা চা বাগান সংশ্লিষ্টদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে মে মাসের শুরুতে পুরোদমে চা পাতা উত্তোলন শুরু হয়। এবার কাঙ্খিত সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় মে মাসে পুরোদমে চা উত্তোলন শুরু করতে পারেন নি বাগান সংশ্লিষ্টরা। উল্টো অনাবৃষ্টির কারণে চা বাগানে ক্ষতিকর ভাইরাসের উপদ্রব দেখা দেয়। এতে বিপাকে পড়েন বাগান মালিকরা। ওষুধ ছিটানোর পরও বৃষ্টি না থাকায় কোনভাবেই ‘রেড স্পাইডার’ ভাইরাস দূর করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ গেল বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ভাইরাসমুক্ত হয়ে ছাড়া গাছে নতুন কুড়ি দেখা দিয়েছে। পরিমাণে এই বৃষ্টি অল্প হলেও কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। এই বৃষ্টির আশীর্বাদে দুটি পাতা একটি কুঁড়িতে ভরে উঠবে প্রতিটি চা বাগান। এমনটাই প্রত্যাশা চা বাগান মালিকদের।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরছিল। শুক্রবার ও শনিবার বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বাড়তে থাকে। রোববার আরো বাড়ছে বৃষ্টি। টানা ৩/৪ দিনের বৃষ্টিপাতের ফলে গাছ-গাছালিতে প্রাণ ফিরেছে, বিশেষ করে সিলেটের চা বাগানগুলোতে।
রোববার নগরীর কয়েকটি চা বাগান ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ খরার পর স্বস্তির বৃষ্টি পেয়ে শুষ্ক চা বাগানে এখন অনেকটাই সবুজ হয়ে এসেছে। বৃষ্টিধারা গায়ে মেখে চা বাগানের পুরো সেকশনে চোখ মেলেছে দুটি পাতা একটি কুঁড়িরা। এই প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাত চা বাগানের জন্য অনেক উপকারী বলে জানিয়েছেন চা বাগান সংশ্লিষ্টরা। চা বাগান সংশ্লিষ্টরা বলেন, দীর্ঘ খরার পর এই বৃষ্টি যেন আশীর্বাদ হিসেবেই এসেছে।
তারা জানিয়েছেন, কয়েক মাসে তীব্র খরা ও নানা রোগের কারণে চা উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল। মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে লাল মাকড়সার আক্রমণসহ পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। সব মিলিয়ে মৌসুমের শুরুতে সিলেটে অর্ধেকের কম উৎপাদন হচ্ছে। লাল মাকড়সা ও কীটপতঙ্গ চা পাতার রস খায়। এতে পাতাগুলো মরে যাওয়ার আগে শুকিয়ে যেতে শুরু থাকে। ফলে উৎপাদন কমে যায়। টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলে পরিবেশ ঠাণ্ডা হলে এই ভাইরাসটি দূর হয়।
এ বিষয়ে তারাপুর চা বাগানের ব্যাবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী দৈনিক জালালাবাদকে জানান, বৃষ্টির অভাবে চা উত্তোলন ১ মাস পিছিয়ে গেছে। আমরা সাধারণত মে মাসের ১ম সপ্তাহে চা পাতা উত্তোলন শুরু করি। গেল বছরেও এই সময়ে চা উত্তোলন শুরু হয়। কিন্তু এবার জুন মাসের ১০ তারিখে এসেও পুরোদমে চা উত্তোলন শুরু করা যায়নি। এতে কমেছে চা উৎপাদন। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সিলেটের চা বাগানগুলোর খুব উপকার হয়েছে। আরো দুয়েকদিন বৃষ্টি হলেও রেড স্পাইডার নামক ভাইরাসটি দুর হয়ে যাবে। এতে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ও বাগান কর্তৃপক্ষ উপকৃত হবেন।
বাংলাদেশীয় চা সংসদ (বিটিএ) সিলেট ব্রাঞ্চ-এর চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলি দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ও অধিক তাপমাত্রার কারণে বাগানে নতুন পাতা না আসায় উৎপাদন কমে গিয়েছিল। নতুন কুঁড়ি না আসা, পানির সংকট, লাল মাকড়সার আক্রমণ প্রায় সব চা বাগানেই ছিল। এই বৃষ্টিপাতের ফলে চা গাছগুলো সজীবতা ফিরে পেয়েছে। এখন চা গাছে দ্রুত নতুন কুঁড়ি আসবে, প্লাকিং শুরু হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার বেশি চা উৎপাদন হবে।
তীব্র খরার কারণে চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন চা বাগানের ইরিগেশন (সেচ) দিয়েও চা গাছগুলোকে শতভাগ রক্ষা করতে পারছিলেন না। তীব্র দাবদাহের পর টানা বৃষ্টি চা শিল্পের জন্য সুফল বয়ে এনেছে বলে জানান এই অভিজ্ঞ টি-প্ল্যান্টার।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সজিব হোসাইন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, জুন মাসের শুরু থেকেই সিলেটের তাপমাত্রা বাড়তির দিকে ছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পরিমানও একেবারে কম না। বৃষ্টিপাতের এই অবস্থা আরো ২/৩ দিন থাকতে পারে। এছাড়া সিলেট ইতোমধ্যে বর্ষার মওসুমী জোনে প্রবেশ করেছে। তাই জুন মাস জুড়েই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হবে। কখনো তাপমাত্রা বাড়বে। আবার কখনো ভারী, কখনো মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে।
চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশের ১৬৭টি বাগানে ৯ দশমিক ৩৮ কোটি কিলোগ্রাম চা উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের বছরের ৯ দশমিক ৬৫ কোটি থেকে ৩ শতাংশ কম।
এ বছর ২ লাখ ৮৫ হাজার একরের বেশি জমি থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ কোটি ২০ হাজার কিলোগ্রাম। খরার কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।