গবাদিপশুতে ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ ভাইরাস আতঙ্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০২৩, ১:৩৬:৪৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : হাওরপাড় খ্যাত সুনামগঞ্জে গবাদিপশুর মধ্যে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে ভাইরাসটিতে আতঙ্ক হয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঈদুল আযহার প্রাক্কালে গবাদিপশুতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ আসন্ন কুরবানীর বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে বলে শঙ্কা স্থানীয়দের। ভাইরাসের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করলেও গরু মারা যাওয়ার খবরটি সঠিক নয় বলে সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। এমনকি এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলেও জানান তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার কয়েকটি গ্রামে এই রোগে গরু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, মূলত মশা ও মাছির মাধ্যমে ভাইরাসজনিত রোগটি গৃহপালিত গবাদিপশুর মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে টানা খরা দেখা দিলে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে। তবে টানা বৃষ্টি হলে ও তাপমাত্রা কমে গেলে রোগটি ক্রমশই হৃাস পায়। দেশে প্রতি বছর ভুটান, নেপাল, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে গরু আমদানি করা হয়। কিন্তু আমদানিকারকরা কী ধরনের গরু আনছেন বা আমদানি করা গরুর শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাস আছে কিনা, সে পরীক্ষা করা হচ্ছে না, যা রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে আগে এ ধরনের রোগ দেশে ছিল না। ওষুধেরও তাই প্রয়োজন পড়েনি। লাম্পি স্কিন ডিজিজের চিকিৎসায় গোট পক্সের ভ্যাকসিন প্রাথমিকভাবে কাজে লাগতে পারে। তবে এ ভ্যাকসিনেরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে দেশে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গরুর লাম্পি স্কিন রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। শুধু সচেতনতার মাধ্যমেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। রোগের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হয়। প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিপাইরেটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। নডিউল বা গুটি ফেটে গেলে বা সেকেন্ডারি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন দমন করার জন্য ক্ষতস্থানে পভিসেপ অথবা ভয়োডিন দিয়ে ড্রেসিং করে বোরিক পাউডার বা সালফানিলামাইড পাউডার লকগানো যেতে পারে। অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। এই রোগ প্রতিরোধে আক্রান্ত পশু আলাদা করতে হবে। খামারের ভেতরের এবং আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে মশা-মাছির উপদ্রব কমিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আক্রান্ত গরুর খামারের শেড থেকে আলাদা করে অন্য স্থানে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখলে অন্য গরুতে সংক্রমণ হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আক্রান্ত গাভীর দুধ বাছুরকে খেতে না দিয়ে মাটি চাপা দেওয়া উচিত। আক্রান্ত গরুর ব্যবহার্য কোনো জিনিস সুস্থ গরুর কাছে আনা বা সেই গরুর খাবার অন্য গরুকে খেতে না দেওয়া যাবে না।
এই রোগ নিয়ন্ত্রণে টিকা দেওয়া যেতে পারে। তবে আমাদের দেশে এই রোগের কোনো টিকা না থাকলেও গোট পক্স টিকা দিলে উপকার পাওয়া যাচ্ছে। তবে ২১ দিন পর সাধারণত এমনিতেই রোগটি সেরে যায়। তাই লাম্পি স্কিন রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলেই দ্রুত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা রেজিস্ট্রার্ড প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই লাম্পি স্কিন রোগ প্রতিরোধে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে। অকারণে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. আসাদুজ্জামান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) নামক ভাইরাসটি শুধু সুনামগঞ্জ নয়, সারাদেশেই রয়েছে। তবে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গরুর মৃত্যুর খবরটি সঠিক নয়। কারণ এই ভাইরাসে পশু মৃত্যুর ঝুঁকি শতকরা ১ ভাগেরও কম। তবে এই রোগে আক্রান্ত পশু কুরবানী করা ঠিক হবেনা। সচেতনতার মাধ্যমে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই রোগ থেকে গবাদিপশুকে রক্ষা করা সম্ভব।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় অফিসের পরিচালক ডা. মারুফ হাসান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, দেশে টানা খরা দেখা দিলে মশা মাছির সংস্পর্শ থেকে গবাদিপশুতে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। ভাইরাসটি সংক্রামক হলেও পশুর মৃত্যুঝুঁকি শতকরা ১ ভাগেরও কম। আমরা এই ব্যাপারে সব সময় খোঁজ খবর নিচ্ছি। জেলা উপজেলা পর্যায়ে এমন ভাইরাসে আক্রান্ত পশুর চিকিৎসার পাশাপাশি ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। এমন ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অবশ্যই স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।