পিলে চমকানো রিপোর্ট!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২৩, ১২:৩০:৪৬ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘মাদকের মাধ্যমে অর্থ পাচারে বাংলাদেশ এশিয়ায় প্রথম, বিশ্বে পঞ্চম’ শিরোনামে একটি পিলে চমকানো রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতি বছর ৪৮১ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আংকটাড) অবৈধ অর্থ প্রবাহ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
মাদক চোরাকারবারের মাধ্যমে অর্থ পাচারে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে বলেও আংকটাড প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৯টি দেশের মাদক সংশ্লিষ্ট অবৈধ অর্থ প্রবাহের অনুমানভিত্তিক হিসাব তুলে ধরা হয়। অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, মালদ্বীপ, মেক্সিকো, মিয়ানমার, নেপাল ও পেরু। আংকটাড বলেছে, মাদকের অবৈধ অর্থপ্রবাহের দিক থেকে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে মেক্সিকো। এরপর যথাক্রমে রয়েছে কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু ও বাংলাদেশ। এ তালিকায় এশিয়ার ৫টি দেশের মধ্যে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের পরেই রয়েছে মালদ্বীপ ও নেপাল। এরপর চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে আফগানিস্তান ও মিয়ানমার। এ প্রতিবেদনে মূলতঃ ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫ বছরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মাদকের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ প্রবাহের এই চিত্র প্রথমবারের মতো তুলে ধরেছে আংকটাড। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতি বছর পাচার হয়ে যায় বিপুল অর্থ। এর মধ্যে ইয়াবা, হেরোইন ও ফেনসিডিল এবং মেথঅ্যাম্ফিটামিনসহ আরো অনেক নেশাদ্রব্য রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে মাদক বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছে আফগানিস্তান ও মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীরা।
লক্ষণীয় যে, এশিয়ার গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ওয়েজ নামে পরিচিত মাদক চোরাচালানের তিনটি প্রধান অঞ্চলের কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশ। তাই আন্তর্জাতিক মাদক কারবারিরাও বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো মাদক চোরাচালানের হটস্পট হিসেবে পরিগণিত। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয়ে থাকে। কারণ এশিয়ার অন্যতম মাদক উৎপাদক দেশ মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে এই চট্টগ্রামে। এই সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য আসছে, এমন অভিমত সচেতন মহলের। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোও দীর্ঘকাল যাবৎ ব্যবহৃত হচ্ছে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য চোরাচালানে। বাংলাদেশের ওপারে ভারতীয় সীমান্তে অগণিত ফেনসিডিল কারখানা রয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ।
যা-ই হোক, মাদক চোরাকারবারের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিশেষভাবে বর্তমানে ডলার সংকটের সময়ে যদি এভাবে অর্থ ডলার পাচার হয় মাদক চোরাকারবারের মাধ্যমে, তবে তা রীতিমতো আত্মঘাতী। দেশের অর্র্থনীতির জন্য অশনি সংকেতস্বরূপ। বাংলাদেশে প্রায়ই মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়। কিন্তু এ ধরনের অভিযানের পেছনে কতোটুকু স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতা আছে, এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ চট্টগ্রামের একজন এমপি’র ইয়াবা চোরাচালানের সম্পৃক্ততা দেশজুড়ে আলোচিত হলেও, তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষকে। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর লোকজনসহ সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বাংলাদেশে মাদক ব্যবসার গডফাদারের ভূমিকায় এমন অভিযোগ সচেতন মহলের। ফলে মাঝে মাঝে ছোট খাটো মাদক ব্যবসায়ীকে মাদকদ্রব্যসহ আটক করা হলেও গডফাদাররা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আর তারাই অর্থপাচার করে যাচ্ছে। আমরা এই ভয়াবহ বিষয়ের দিকে সরকারের হিতকামী মহল এবং সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করি, জাতিসংঘ কর্তৃক এই নগ্নসত্য প্রকাশের পর সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে আসবে।