শেষ সময়ে বেড়েছে উত্তাপ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২৩, ১২:১৫:০৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সিসিক নির্বাচন ঘিরে বাড়ছে উত্তাপ। নির্বাচন ঘিরে একের পর এক অভিযোগ জমা হচ্ছে নির্বাচন অফিস কিংবা থানায়। এতে ভোটের সাথে বাড়ছে শঙ্কাও। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি শেষ সময়ে এসে অভিযোগের হিড়িক পড়ছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষ থেকেও।
সর্বশেষ সোমবার আসন্ন সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় অসত্য তথ্য দিয়েছেন দাবি করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে নৌকার প্রার্থী হলফনামায় জন্মতারিখ ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি অসত্যভাবে উপস্থাপন করেছেন বলে তাঁর প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করা হয়েছে। অভিযোগকারীর নাম এ কে এম আবু হুরায়রা (সাজু)। তিনি সিলেট নগরীর নরসিংটিলা এলাকার বাসিন্দা। সোমবার বিকেলে সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদেরের কাছে তিনি লিখিত লিখিত অভিযোগ জমা দেন। মঙ্গলবার দুপুরের পর বিষয়টি জানাজানি হয়।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের বলেন, ‘মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের আগে অভিযোগ পেলে তথ্য যাচাই-বাছাই করা যেত। এখন আমাদের আর কিছুই করার নেই।’
অভিযোগের বিষয়ে মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ভুয়া ও মিথ্যা একটা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক। হলফনামায় সঠিক তথ্যই দিয়েছি।’
এর আগে গত ৩০ মে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন সিলেট রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশনের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে প্রতীক বরাদ্দের আগে দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রচার চালানোর অভিযোগে তাঁদের শোকজ করা হয়। স্থানীয় নির্বাচন কমিশন বা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অভিযান চালালেও বন্ধ করতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। এ কারণে প্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে বিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা।
সোমবার নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখার প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান। অপর মেয়র প্রার্থী জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলের একের পর এক গোপন আপত্তিকর ভিডিও-অডিও ভাইরাল হওয়ায় তার পক্ষে প্রচারণায় পড়েছে ভাটা। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন মেয়র প্রার্থীসহ তার কর্মী সমর্থকগণ।
মঙ্গলবার নগরীর বন্দরবাজারস্থ করিমউল্লাহ মার্কেটের গণসংযোগকালে লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সিলেটে ভোটের পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমি বার বার অভিযোগ করা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করেননি। এতে আমি নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত আছি। তবুও আমার কার্যক্রম অব্যাহত রেখে চলেছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। আমার কর্মীদের উপর হামলা হচ্ছে এবং একের পর এক অপপ্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস এই নগরীর প্রতিটি মানুষ আমাকে চেনেন। আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে দুবার সিলেট চেম্বাররের পরিচালক নির্বাচিত হয়েছিলাম। আমি কোন ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করবো না এবং যত ষড়যন্ত্রই হউক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবো না।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে গায়েবী মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ করেছেন ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী সায়ীদ মো. আব্দুল্লাহ। এর আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বর্তমান কাউন্সিলার আফতাব হোসেনের খানের বিরুদ্ধে প্রার্থীর বাসার সামনে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া দেয়ার ঘটনা ঘটে। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র বিতর্কের ঝড় উঠে। এই ঘটনার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন বরাবরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। একই সাথে কাউন্সিলর প্রার্থী আফতাবকে ঢাকা নির্বাচন কমিশনে তলব করা হয়েছে। আজ বুধবার তার জবাব দেয়ার কথা।
অপরদিকে ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী সায়ীদ মো. আব্দুল্লাহ’র বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কাউন্সিলার আফতাবের এক কর্মী। এই মামলায় সায়ীদ আব্দুল্লাহর ২ কর্মীকে আটক করা হয়।
এদিকে সোমবার কোতোয়ালী মডেল থানায় জিডি করেছেন ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী মো. আব্দুল কাদির। মোবাইল ফোনে তাকে প্রাণনাশের হুমকী দেয়া হয়েছে তিনি জিডিতে উল্লেখ করেছেন। জিডিতে অভিযোগ করা হয়েছে, সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী (লাঠিম প্রতীক) মো. আব্দুল কাদিরের ব্যক্তিগত মোবাইল নং- ০১৭১১০১২৮৪২ এই নাম্বারে ০১৩০৬১০৭৯৮৮ এই নাম্বার থেকে ফোনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়। অন্যথায় তার পরিনতি খারাপ হবে বলে হুমকী ধামকী দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। এছাড়াও ৪২টি ওয়ার্ডে ৩৬০ কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭৩জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮৭জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। আগামী ২১ জুন ইভিএম এর মাধ্যমে সিলেট সিটির ভোট অনুষ্ঠিত হবে।