বৃষ্টিতে জলমগ্ন ভোটের নগর
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২৩, ১০:৪০:০৭ অপরাহ্ন
১৮ ঘন্টায় ১৯৮ মি:মি: বৃষ্টি
স্টাফ রিপোর্টার : টানা দুই সপ্তাহ জ্যৈষ্ঠের খরতাপে পুড়েছে সিলেট। তীব্র তাপদাহে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলো জনজীবন। গত রোববার সিলেটে প্রবেশ করে মৌসুমী বায়ু। সেদিন থেকেই সিলেটের শুরু হয় স্বস্তির বৃষ্টি। আর বুধবার জ্যৈষ্ঠের শেষ দিনে টানা বৃষ্টিতে ভিজলো সিলেট। শুধু ভিজলোই না, ঘটেলো বিপত্তিও। জলমগ্ন হলো ভোটের নগরী।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এরপর বুধবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয় ১৫১ মিলিমিটার। অর্থাৎ ১৮ ঘন্টায় বৃষ্টি হয় ১৯৮ মিলিমিটার।
মুষলধারে টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে সিলেট। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরের বাসিন্দা ও পথচারীদের। তবে দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টি কিছুটা থামার পর ধীরে ধীরে পানি নেমে যায়।
বৃষ্টিতে নগরের একাধিক এলাকায় হাঁটুসমান পানি দেখা যায়। অন্যদিকে নগরের বেশকিছু বিপনীবিতান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ঢুকে পড়ে পানি। এতে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি হয়। মালামাল নষ্ট হয়ে যায়।
সকালে সরজমিনে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টির ফলে নগরের শিবগঞ্জ সোনারপাড়া, মদিনা মার্কেট, আখালিয়া, সুবিদবাজার, জালালাবাদ, হযরত শাহজালাল (র.) মাজার এলাকার পায়রা ও রাজারগল্লি, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, ছড়ারপাড়, তালতলাসহ বেশ কিছু নীচু এলাকার সড়ক তলিয়ে যায়। এছাড়া বারুতখানা এলাকার কয়েকটি দোকান এবং দর্শনদেউড়ি, জালালাবাদ হাউজ, ইদ্রিস মার্কেট ও জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশনের ভেতরে ঢুকে পড়ে পানি।
এদিকে রাস্তায় হাঁটুসমান পানি থাকায় যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ধীরগতির কারণে অনেক সড়কে দেখা দেয় যানজট।
বৃষ্টি কিছুটা থামার পর দুপুরের দিকে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরের জল্লারপাড়, বিলপাড়, শেখঘাট, লামাবাজার, তালতলা, বারুতখানা, জিন্দাবাজার, হাওয়াপাড়া, শাহজালাল উপশহর, ছড়ারপাড় শিবগঞ্জ সাদিপুর, লামাপাড়া, দক্ষিণ সুরমার কদমতলী, হুমায়ূন রশীদ এলাকাসহ বিভিন্ন সড়ক ও মহল্লায় পানি জমেছে।
নগরের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বর এলাকার বাসিন্দা শাহনেওয়াজ হোসেন বলেন, বেলা ১১টার দিকে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখতে পান ঘরের সামনের সড়কে পানি। তাদের রাস্তাটি মূল সড়ক থেকে নিচু হওয়ায় বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়।
নগরের ছড়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা রাহাত আমিন বলেন, ‘সকলেই সামনের সিটি ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে একটু বৃষ্টি হলেই সিলেটের রাস্তাঘাট সমুদ্র হয়ে যায়। আমার এলাকায় হাঁটুর ওপরে পানি।
হাওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টির ফলে পানি জমে গিয়েছিল, তবে বৃষ্টি থামার সঙ্গে পানি নেমে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমে যায়। এতে ভোগান্তি বাড়ে, দোকানে গ্রাহক থাকেন না।
রাজা ম্যানশনের পপি লাইব্রেরির সত্বাধিকারী গোলজার আহমদ বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনি মার্কেটে পানি ঢুকে গেছে। এসে দেখি সব শেষ। আমার দোকানের ভেতরে হাঁটুর ওপরে পানি।
এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকার দুটি ওয়ার্ডে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার প্রতিবাদে প্রায় তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একপর্যায়ে পানিনিষ্কাশনের জন্য সড়কের পাশে কাঁচা নালা কাটতে গেলে দুই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে সংঘর্ষে জড়ান এলাকার বাসিন্দারা।
এদিকে, সিলেটে চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় প্রার্থীরা প্রচারনায় কিছুটা হরেও হোঁচট খান। অনেকে গতকাল প্রচারনা স্থগিত করেন বলেও জানা গেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে নর্দমা দিয়ে পানি নামতে সময় লাগছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ১৫০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টি হওয়ায় এবং সিলেটের কিছু এলাকা নিচু হওয়ায় বৃষ্টি হলেই পানি জমছে। সাময়িকভাবে পানি আটকে যাচ্ছে, তবে পানি নামছে। তিনি বলেন, সিলেট নগরের ড্রেনগুলো ছিদ্র করা রয়েছে। সেগুলোতে পলিথিনসহ নানা ময়লা আটকেও পানি জমে যাচ্ছে।





