সিলেটে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, আসামি ৬০০
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২৩, ৮:৩০:৪৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট সদর উপজেলার সোনাতলায় সড়কের পানি নিষ্কাশন নিয়ে দুই গ্রামবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত ৬০০ জনকে আসামি করা হয়। বুধবার রাতে এসএমপির জালালাবাদ থানার এসআই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে পুলিশকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করেন।
এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এ মামলায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।
বুধবার দুপুর ২টার দিকে সদর উপজেলার কুমারগাঁও-বাধাঘাট সড়কের পাশে নালা কাটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সোনাতলা ও মইয়ারচর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরআগে জলাবদ্ধতার প্রতিবাদে সকাল ১১টার দিকে কুমারগাঁও-বাধাঘাট সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় লোকজন। এ সময় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। বেলা ২টার দিকে সড়ক মেরামতে নিয়োজিত কর্মীরা পানিনিষ্কাশনের জন্য সড়কের পাশে নালা কাটতে গেলে দুই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ান তারা।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীন কুমারগাঁও-বাধাঘাট সড়কটি চার লেনের কাজ চলছে। এ কারণে সড়কের পাশে মাটি খুঁড়ে রাখা হয়। সড়কের পাশে অপরিকল্পিতভাবে মাটি না ফেলে পাকা নালা নির্মাণের দাবি ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের। এছাড়া মাটিগুলো যাতে সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলো সরানো হয়নি। বুধবার ভোর থেকে সিলেটে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এতে সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়লেও পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় নীচু এলাকা মইয়ারচর, নয়া কুরুমখলা, নাজিরেরগাঁও এলাকায় পানি জমে বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এর প্রতিবাদে সিলেট সিটির নবগঠিত ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের মইয়ারচর, নয়া কুরুমখলা, নাজিরেরগাঁও এলাকার বাসিন্দারা কুমারগাঁও-বাধাঘাট সড়ক অবরোধ করেন।
সোনাতলা এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে চলাচলে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। সোনাতলা বাজারেও সড়কের পাশের মাটি কেটে রাখায় বাজারে আসা লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বুধবার পানি নিষ্কাশনে সওজের কর্মীরা সড়কের পাশে নালা কাটতে গেলে তারা বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। সংঘর্ষ থামাতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ঘটনার সময় একপর্যায়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করা হয়। দুটি পক্ষের হাজারখানেক লোক জড়ো হয়ে যায়। একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে সোনতালা বাজার এলাকার বেশ কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। সড়কে থাকা যানবাহন ভাঙচুর হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পরে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাদের সমঝোতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এতে পুলিশসহ দুই পক্ষের প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাজার আলী শেখ বলেন, সংঘর্ষ থামাতে ১৪৪টি রাবার বুলেট এবং ১৪টি টিয়ারগ্যাস ছোড়া হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। তবে সংঘর্ষে চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।