সিলেটে অস্থায়ী পশুর হাট নিয়ে শঙ্কা !
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুন ২০২৩, ১:০০:০১ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল : দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আযহা। আর বাকী ১৩ দিন। আত্মত্যাগের এ ধর্মীয় উৎসবের জন্য কুরবানী পশু কেনার প্রস্তুতি শুরু হয় ১৫ দিন আগে থেকেই। কিন্তু এবার সিলেটে কুরবানীর পশুর হাট নিয়ে কোন উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি। এজন্য আসন্ন সিসিক নির্বাচন ও বন্যার পদধ্বনিকে আসল কারণ হিসেবেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে জেলার বিভিন্ন উপজেলার স্থায়ী বাজারে ইতোমধ্যে কুরবানীর পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতির পাশাপাশি পশু বিক্রিও বেড়েছে। তবে সিলেট নগরী ও তৎপাশর্^বর্তী উপজেলাগুলোতে কুরবানীর অস্থায়ী পশুর হাট নিয়ে কোন তোড়জোড় নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেষ মুহূর্তে ঠিকই মওসুমী ব্যবসায়ীদের তোড়জোড় শুরু হতে পরে। ইতিমধ্যে অনেকে আবেদনও করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল বছর ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী সময়ে ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে সিলেট নগরী ও জেলায় ৪১ টি স্থানে পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছিল সিলেট জেলা প্রশাসন ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন। গেল বছর ১০ জুলাই ঈদুল আযহা পালিত হলেও কুরবানীর পশুর হাটের তোড়জোড় শুরু হয়েছিল জুন মাসের শেষের দিকে। এরমধ্যে ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন হাটে কুরবানীর পশু বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছিল। এবছর আগামী ২৯ জুন ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এখনো কুরবানীর পশুর হাট নিয়ে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে কুরবানীর পশুর হাট নিয়ে মূল উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এরপর জেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে শুরু হয় ইজারা। কিন্তু এবার ২১ জুন সিলেট সিটি নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন ঘিরে মূল আগ্রহ থাকায় কুরবানীর পশুর হাটের উদ্যোগে ভাটা পড়েছে। এছাড়া টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সিলেটজুড়ে শুরু হয়েছে বন্যার পদধ্বনি। ফলে আপাতত কুরবানীর হাট নিয়ে ভাবছেন না সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল আজহায় জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত পশুর হাটের অনুমতি দিলেও ঈদ ঘনিয়ে আসতেই সড়ক, বিদ্যালয় মাঠ, খোলা স্থানে অবোধে পশুর হাট বসানো হয়। সেসব হাটে বিক্রেতারা গরুর চালান তুলতে না চাইলেও জোর পূর্বক ট্রাক আটকিয়ে গরু নামাতে পাইকারদের বাধ্য করা হয়, বলেন অভিযোগ ওঠে। এব্যাপারে প্রতিবছর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগে নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সব উদ্যোগে ভেস্তে যেতে দেখা গেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গোটা নগর অস্থায়ী পশুর হাটে পরিণত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে দেশে পশু কুরবানীর সংখ্যা কমেছে। এবার আরো কমতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতাগণ। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মানুষের সক্ষমতা কমেছে। অন্যদিকে বেড়েছে গবাদিপশুর দাম। মূলত এ দুই কারণে দেশে পশু কুরবানী কমেছে। বাজার জমে না উঠলেও উপজেলা পর্যায়ের স্থায়ী হাটগুলোতে গরুর দরদাম নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। দফায় দফায় গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে এবারো কুরবানীর পশুর দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে খামারিরা জানান, দফায় দফায় বেড়েই চলছে গো-খাদ্যের দাম। চলতি বছর খামারিদের দৈনিক খাবার খরচ বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। এজন্য গো-খাদ্য মিলার ও কোম্পানির মালিকদের দুষছেন খামারিরা। গত বছরের চেয়ে এবার কুরবানীর পশু পালনে যে খরচ বেড়েছে সে অনুযায়ী ন্যায্যমূল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে খামারিদের লোকসানের শঙ্কা রয়েছে। তাই লোকসান এড়াতে কুরবানীর অস্থায়ী পশুর হাটকে টার্গেট করেছেন খামারি-ব্যবসায়ীরা।
নগরীর সুবিদবাজারে বাসিন্দা প্রবীণ আব্দুল মতিন খান বলেন, সারা বছর সংসার খরচের থেকে সঞ্চয় করে একটা ছোট গরু নিজেই কোরবানি দেওয়ার চেষ্টা করি। প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে গরু কিনি। এ বছর এই টাকায় কোরবানির পশু কিনতে পারবো কি না তা নিয়ে সংশয় আছে, যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, চাইলেই ১০/১৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে পশু কেনা সম্ভব হবে না। বাজেটের মধ্যে পশু কিনতে না পারলে ভাগে কোরবানি দেওয়ার কথা ভাববো।
শাহপরান এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ১০ হাজার টাকার মধ্যে একভাগে কোরবানি দিতে পারলেও এ বছর তা সম্ভব হবে কি না জানি না।
আব্দুল মতিন খান ও আব্দুল মালেকের মতো আরও অনেকে মনে করছেন, বর্তমান চড়া বাজার দরে পশু কিনে কোরবানি দেওয়া কঠিন হবে।
সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আলমগীর কবির দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আসন্ন ঈদুল আযহায় সিলেট জেলায় দেড় লক্ষাধিক পশু কুরবানী হবে। জেলা ৬৫ হাজার ৮৯৬টি গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়া মজুত রয়েছে। বাকী ৮৪ হাজার কুরবানীর পশু অন্যান্য জেলা থেকে ক্রয় করা হবে। ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ের নির্ধারিত স্থায়ী পশুর হাটগুলোতে কুরবানীর পশু বিক্রি বেড়েছে। সিলেট নগরী ও জেলায় অস্থায়ী হাট বসানোর ব্যাপারে এই মুহুর্তে কোন তথ্য নেই। তবে শীঘ্রই হয়তো এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হতে পারে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বদরুল হক দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, নগরীতে কুরবানীর পশুর হাটের আবেদনের ব্যাপারে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আগামীতে হয়তো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
সিলেটের স্থানীয় সরকার উপপরিচালক মোহাম্মদ মোবারক হোসেন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, কুরবানীর পশুর অস্থায়ী হাটের জন্য সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আবেদন নেয়া হচ্ছে। সেগুলো যাছাই বাচাই চলছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে এখনো আবেদন আসেনি। সামনে সিটি নির্বাচন, হয়তো নির্বাচনের পরেই নগর এলাকার অস্থায়ী পশুর হাটের বিষয়টি দেখা হতে পারে।