চেনা রূপে আষাঢ়, সিলেটে বন্যার শঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুন ২০২৩, ৪:১৫:৪৯ অপরাহ্ন
৩৬ ঘন্টায় ৩৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি
১৫ দিনে ১৪শ’ মিলিমিটার বৃষ্টির আভাস
স্টাফ রিপোর্টার : ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে/ আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে।’ আষাঢ় নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথাগুলো যেন যথার্থই। সিলেটে আষাঢ় এসেছে বৃষ্টির বারিধারা নিয়ে। প্রথম দিনেই চিরচেনা রূপে আবির্ভূত হলো বর্ষার প্রথম মাস। দিনভর হয়েছে বৃষ্টি। এতে ফের সতেজতায় ভরে উঠছে প্রকৃতি, ভরে উঠছে খাল-বিল, নদী-নালা। এ অবস্থায় বন্যার শঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে ৩৬ ঘন্টায় ৩৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরমাঝে বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৭১ মিলিমিটার এবং বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ দিন সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এতে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা’ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন- ‘সিলেটে গত কয়েকদিন ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পূর্বাভাস রয়েছে- আগামী ১৫ দিন সিলেটজুড়ে অতিবৃষ্টি হবে। এই কদিনে ১৪শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে সিলেট জেলায়। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা হলে এর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই।
এদিকে, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে সিলেটের সব নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এ জন্য আগামী তিনদিনের মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়, উজানে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উজানে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এতে এ অঞ্চলের নদ-নদীর (সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, সারিগোয়াইন, ঝালুখালি, ভোগাই-কংশ, সোমেশ্বরী, যদুকাটা) পানি দ্রুত বাড়তে পারে এবং বিপদসীমা পার হয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। আগামী দুই সপ্তাহে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারাসহ সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বাড়তে পারে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানান, সিলেটের নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। তবে তা বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা নদীর বিপদসীমা হলো ১২ দশমিক ৭৫। সেখানে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় ১১ দশমিক ৩৬ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। সুরমার সিলেট স্টেশনে বিপদসীমা হলো ১০ দশমিক ৮০। সেখানে গতকাল বেলা ৩টায় ৮ দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সুরমার সুনমাগঞ্জ স্টেশনে বিপদসীমা ৭ দশমিক ৮০। সেখানে গতকাল বেলা ৩টায় ৬ দশমিক ৪৭ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার আষাঢ়ের প্রথম দিনেও জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয়েছে সিলেট নগরবাসীকে। মানুষ জলাবদ্ধতা ডিঙিয়ে দুর্ভোগ ঠেলে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। বাসা-বাড়িতে পানি উঠে পোহাতে হয়েছে ভোগান্তিও।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটে আগামী ৪৮ ঘণ্টা সিলেটে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাহাড়ি ঢল নামতে পারে।
আষাঢ়ের প্রথম দিনের ভারী বৃষ্টির কারণে নগরের দক্ষিণ সুরমার কদমতলী, ভার্থখলা, সিলেট রেলওয়ে স্টেশন, পাঠানটুলা, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এসব এলাকার বাসিন্দারা সকালে হাঁটু পানি ডিঙিয়ে গন্তব্যে ছুটেন। দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্কুলশিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে।
নগরের কদমতলী এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, টানা বৃষ্টি হলেই কদমতলী ও এর আশপাশ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এর স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। ভবিষ্যতে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিলেটে ভারী বৃষ্টির কারণে সাময়িক পানি জমেছে। তবে নালা-নর্দমাগুলো পরিষ্কার করে পানি নামার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা বেশি সময় স্থায়ী হচ্ছে না।