বিস্ময় বালক কাইরান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুন ২০২৩, ১২:৩০:৪৯ অপরাহ্ন
কথায় আছে ‘পাথরের ওপর পড়লে পাকা বীজও নষ্ট হয়ে যায়’। উপযুক্ত পরিবেশ না পেলে মেধার বিকাশ ঘটে না এমনটি বুঝাতে এই প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়। অপরদিকে ভালো পরিবেশ পেলে অনেক কম মেধাবীও অসাধারণ সাফল্যের পরিচয় দিতে পারে। আর মেধাবী হলে এবং উপযুক্ত পরিবেশ পেলে একজন যে সাফল্যের চূড়ায় আরোহন করতে পারে, এর নজিরও অনেক আছে। এমনি এক জিনিয়াস হচ্ছে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কাইরান কাজী। মাত্র ১৪ বছর বয়সে সে যুক্তরাষ্ট্রের ইলন মাস্কের স্পেসএক্স-এ সর্বকনিষ্ঠ কর্মী ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম এলএ টাইমসের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশী পিতামাতা মুস্তাহিদ ও জুলিয়া কাজীর সন্তান কাইরান কাজী। সে মাত্র ২ বছর বয়স থেকেই পূর্ণ বাক্যে কথা বলে চারপাশের লোকদের চমকে দিয়েছিলো। যা ছিলো ব্যতিক্রমধর্মী ও অসাধারণ প্রতিভার প্রাথমিক ইংগিত।
তার অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতার কারণে ৯ বছর বয়সে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় স্কুলের সিলেবাস তার কাছে কোন ধরনের কঠিন পড়া বলে মনেই হয়নি। তারপর কয়েক মাস পরেই সে ইন্টেল ল্যাবসে এআই রিসার্চ কো-অপ ফেলো হিসেবে ইন্টার্নশীপ পায়। ১১ বছর বয়স থেকে কাইরান কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে তার আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরু করে। কাইরান সান্তাক্লারা ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে স্নাতক হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেখানে সে হবে প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ স্নাতক।
চলতি বছরের শুরুতে ১৪ বছর বয়সী কাইরান তার গুরুত্বপূর্ণ চাকুরীর কথা তুলে ধরে। কিশোর কাইরান স্পেসএক্স-এ তার কাজ শুরু করার জন্য তার মায়ের সাথে ক্যালিফোর্ণিয়ার স্পেস্যান্টন থেকে রেডমন্ট ওয়াশিংটনে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। তার পিতা মূলতঃ মানিকগঞ্জের বাসিন্দা এবং বর্তমানে একজন প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। এছাড়া আরেক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী আদিবা সাজেদ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারেনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) অর্থায়নে পড়ালেখার পাশাপাশি নাসার নিজস্ব ল্যাবে গবেষণার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কর্ণেল ইউনিভার্সিটির ছাত্রী।
কথা হচ্ছে, এই কাইরান কাজী যদি যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের শিক্ষার সুযোগ সুবিধা না পেতো তবে সাফল্যের এই সুউচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারতো না। কে জানে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এ ধরনের সুযোগ সুবিধার অভাবে কাইরান কাজীর মতো কতো কতো মেধাবী ছেলে মেয়ে অকালেই ঝরে যাচ্ছে। শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ব্যর্থতার নিঃসীম দিগন্তে।
কাইরান তার লিংকডইন পোস্টে বলেছে, বিশ্বের সেরা কোম্পানীতে সম্মানিত স্টারলিংক ইঞ্জিনিয়ারিং দলের সঙ্গে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে এই যাত্রা শুরু করতে পেরে আমি আনন্দিত। আমার ক্ষেত্রে অন্য অনেকের মতো, শুধু বয়সের ভিত্তিতে যোগ্যতার মূল্যায়ন না করা, সত্যিই অনন্য।
আমরা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কাইরান কাজীর সাফল্যে গর্বিত। একই সাথে বাংলাদেশে এদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।