সিটি নির্বাচন : কাউন্সিলর পদে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুন ২০২৩, ১২:১০:২০ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আট জন প্রার্থী রয়েছেন। তবে গত সোমবার রাতে নির্বাচন বয়কট করে সরে দাঁড়িয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী। ভোটের মাঠের চিত্র দেখে মনে হচ্ছে মেয়র পদে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থীই মূল প্রার্থী। জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রথম দিকে কিছুটা আলোচনায় থাকলেও বর্তমানে নির্বাচনী মাঠে তার সমর্থন অনেকটা ভাটা পড়েছে। একটি ভিডিও এবং অডিও ক্লিপই কাল হলো এই প্রার্থীর। ফলে আওয়ামী লীগের বিপরীতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই বললেই চলে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের ভোট হবে ইভিএমে। আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ারুজ্জামান, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান ছাড়া বাকি পাঁচ প্রার্থী হচ্ছেন জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম (গোলাপ ফুল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল হানিফ কুটু (ঘোড়া), মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন (ক্রিকেট ব্যাট), মো. শাহ্ জাহান মিয়া (বাস) ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা (হরিণ)।
মেয়র পদে এই আট প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজনের প্রতীক তো দূরের কথা, প্রার্থীতার বিষয়টিও অনেকের অজানা। ভোটাররা বলছেন, ভোটের মাঠে তাদের তৎপরতা খুব একটা দৃশ্যমান নয়। মাঠের প্রচারে তারা প্রায় অনুপস্থিত।
গত পাঁচ দিন নগরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান ছাড়া অন্য পাঁচজন প্রার্থীর কোনো পোস্টার চোখে পড়েনি। তবে কয়েকটি স্থানে জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হানিফ ও মোশতাক আহমেদের কিছু ব্যানার দেখা গেলেও অন্য প্রার্থীদের পোস্টার দেখা যায়নি। তবে সবকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে অলিগলি।
এদিকে সিলেট সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী না হলেও কাউন্সিলর পদে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে বলে নগরবাসীর ধারণা। ভোটাদের উপস্থিতির বিষয়টিও এই নির্বাচনের জন্য এক ধরণের চ্যালেঞ্জ। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করায় মেয়র পদে দলটির কোনো প্রার্থী নেই। এ অবস্থায় একদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যেমন ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে, তেমনি অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা যাতে ভোটকেন্দ্রে না যান তার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অনুরুপভাবে জামায়াতের নেতৃস্থানীয়রা ভোটে থাকবেন না। ফলে ভোট কাস্ট তুলনামূলক কম হবে।
ভোটার ও ভোটকেন্দ্র : সিটি করপোরেশনের সাবেক ২৭টিসহ বর্তমান ওয়ার্ড সংখ্যা ৪২টি। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৬ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৯০টি আর স্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে ১ হাজার ৩৬৭ টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে ৯৫ টি। এসব ভোটকক্ষে ও ভোটকেন্দ্রের প্রবেশপথে বসানো হচ্ছে সিসিটিভি।
ভোটাররা যা বলছেন : সাধারণ ভোটারদের অনেকেই বলছেন, এখন পর্যন্ত মেয়র পদে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বীতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রার্থী, দলীয় সংগঠনের সামর্থ্য বিবেচনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী অনেক এগিয়ে আছেন বলে মনে হচ্ছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল প্রথম দিকে আলোচনায় থাকলেও এখন তেমন নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও এবং কয়েকটি অডিও ভাইরাল হওয়ায় ভোটের মাঠে লাঙ্গল মার্কার এই প্রার্থীর জনসমর্থন অনেকটা ভাটা পড়ে। এছাড়া আওয়ামী লীগবিরোধী ভোটারদের উপস্থিতি কেমন হবে তার ওপরই নির্ভর করছে অন্য প্রার্থীদের ভোটপ্রাপ্তি।
এদিকে বেশকিছু ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে জামায়াতে ইসলামী ঘরানার প্রার্থী রয়েছেন। বিশেষত এই ওয়ার্ডগুলোতে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের কর্মী সমর্থকরা ভোটে অংশ নেবেন, ফলে জামায়াত সমর্থক ভোটের একটি প্রভাব নির্বাচনে দৃশ্যমান হবে।
২২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার বদরুল ইসলাম পেশায় ব্যাংকার। তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ মানুষ ভোটকেন্দ্রেই যাবে না।’ কেন যাবে না- এ প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে কিছু মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে।’
নিজেদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বীতা : বিএনপি প্রার্থীদের অনুপস্থিতির সুযোগে বেশির ভাগ ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যেই। তবে কয়েকজন বিএনপি নেতা ও নেত্রী (পদধারী) কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি অংশ ভোটের প্রচার চালাচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
সিসিক’র ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ২৮৭ জন। আর সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৮৯ জন। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে বর্তমান কাউন্সিলরও রয়েছেন।
২০নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বর্তমান কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিঠু তালুকদার ও শুভ্র চক্রবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এই ওয়ার্ডে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।
২২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ২ জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হচ্ছেন- বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদ সেলিম ও ওয়ার্ড শাখার সাধারন সম্পাদক ফজলে রাব্বি মাছুম। এছাড়াও দিদার হোসেন রুবেলসহ মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এই ওয়ার্ডে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা তা হবে রুবেল ও মাছুমের মধ্যে।
৮নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা ইলিয়াছুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জগদীশ চন্দ্র দাশ, যুবলীগ নেতা রানা আহমদ,। এছাড়া ফয়জুল হক, বিদ্যুৎ দাস, সুদীপ রঞ্জন দেব, সুমন ইসলাম, সাব্বির খান, হাবিবুর রহমান হাবিবও প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এই ওয়ার্ডে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আবাস হওয়া গেছে।