অসৎ সিন্ডিকেটের কবলে পেঁয়াজ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুন ২০২৩, ১২:৩০:৫৮ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘সিন্ডিকেটের হাতেই পেঁয়াজের বাজার’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সিন্ডিকেটের হাতেই পেঁয়াজের বাজার, তাই আমদানির পরও পেঁয়াজের দাম সেভাবে কমেনি। রাজধানীর পাইকারী বাজারে কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৬০ টাকায়, দেশী পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি।
সচেতন মহলের অভিমত, পেঁয়াজের বাজার সিন্ডিকেটের হাতেই রয়েছে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে অতি মুনাফার কারণেই নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম কমছে না। দেশে কোন পেঁয়াজ সংকট না থাকা সত্বেও গত মাসে লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজির পেঁয়াজ মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় উঠে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন স্বল্প আয়ের মানুষ। এ অবস্থায় গত ৫ জুন পেঁয়াজ আমদানিতে বিধি নিষেধ তুলে নেয় সরকার। তবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ আমদানীর বিষয়টি আমাদের জন্য উভয় সংকটের মতো। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে দাম কমে যায়, এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর আমদানি না করলে দাম বেড়ে যায়, ভোক্তাদের কষ্ট হয়।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এখন আমদানি সত্বেও পেঁয়াজের দাম সেভাবে কমছে না। ভোক্তাদের মতে, সিন্ডিকেটের ক্রেতারা বাজার জিম্মি। তারা ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ মে ভারতে পাইকারীতে প্রতি টন পেঁয়াজের দাম ছিলো ১২১ ডলার। এই হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে ১৩ টাকা। এর সাথে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূল্য শুল্কসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ২৯ টাকার মতো হয়। এর সাথে মুনাফা যোগ করে আমদানিকারকেরা পেঁয়াজ বিক্রি করার কথা। এরপর পাইকারী থেকে খুচরো বাজারে আসে পেঁয়াজ। তাহলে ২০ টাকা পেঁয়াজ বাজারে কেনো ৫৫/৬০ টাকায় বিক্রি হবে? এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগী ভোক্তাদের। এছাড়া এখন দেশী পেঁয়াজের দাম বাড়ারও কোন কারণ নেই। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতে, গত ২ বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ৩৫ লাখ টন। এক কেজি দেশী পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা খুচরো বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। গত বছর এ সময় খুচরো বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ছিলো মাত্র ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা।
বলা বাহুল্য, প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিশ্বের কোন দেশেই কোন নিত্যপণ্যের বাজার এতো নিয়ন্ত্রণহীন নয়, যা বাংলাদেশে প্রতীয়মান। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণহীনতার জন্য সচেতন মহল সবচেয়ে বেশী দায়ী বলে মনে করেন সুশাসনের অভাবকে। মুক্তবাজারের দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীদের যাচ্ছেতাই মূল্যবৃদ্ধির অনুমতি দেয় না বিশ্বের কোন দেশের সরকারই।
প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, থাইল্যান্ডসহ কোন দেশেই বাংলাদেশের মতো এমন অরাজকতাপূর্ণ বাজার ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সরকারের চেয়েও শক্তিশালী। কিংবা ক্ষমতাসীন মহলই এ ধরনের অসৎ সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষক। আর এই যাঁতাকলে পড়ে সাধারণ ক্রেতারা পিষ্ট, নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তাই প্রশ্ন জাগে, কে নিয়ন্ত্রণ করবে এই অরাজকতাপূর্ণ বাজার, পণ্যমূল্য। কে তাড়াবে এই ভূত, যখন সর্ষেতেই ভূতের অবস্থান সুদৃঢ়।