সিলেটে ২৪ ঘন্টায় ২ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০২৩, ১২:০৩:৩৩ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল : দেশে ক্রমশই বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। গেল ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে ১ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি শনাক্ত হয়েছেন ৩০৫ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন ২ জন ডেঙ্গুরোগী। চলতি মওসুমে (২০২৩ সালের জানুয়ারী-জুন পর্যন্ত) সিলেট বিভাগে মোট ৬জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন কয়েকজন। শনাক্ত সবারই ট্রাভেল হিস্ট্রি নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে ডেঙ্গুরোগের উপসর্গ নিয়ে সিলেট নগরীর সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে বেশ কয়েকজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের প্রায় সকলেই গোয়াইনঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তাদের ট্রাভেল হিস্ট্রি নেই। ফলে স্থানীয়ভাবেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি চিন্তার বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ। নগরীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১ জুন থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হলেও উপজেলা ভিত্তিক এমন কার্যক্রম না থাকায় ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগ আরো বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে ২ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ জন সিলেট জেলা গোয়াইনঘাট উপজেলার বাসিন্দা ও ১৯ বছরের কিশোরী। তিনি নগরীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপরজন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ও ২১ বছরের কিশোর। তিনি বাড়ীতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই ২ জনের কারো ট্রাভেল হিস্ট্রি নেই। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত জনের মধ্যে ৫জনই সিলেট জেলার বাসিন্দা।
সিলেটের সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, পর্যটন স্পট হিসেবে গোয়াইনঘাট এলাকায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন। পর্যটকদের সাথে এসি গাড়ীতে করে ডেঙ্গু মশা সিলেটেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া গেল বছরে গোয়াইনঘাটের একটি প্রতিষ্ঠানে এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। চলতি মওসুমে এই ধরনের অভিযান পরিচালনা না হওয়ায় এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে ও বাসা-বাড়ীতে ডেঙ্গুরোগের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ জন। প্রাথমিকভাবে তারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুয়েকদিনের মধ্যে তাদের মূল রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তারা সকলেই সিলেট জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভুইয়া দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, শনিবার পর্যন্ত ওসমানী হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগী ছিলনা। রোববার কেউ ভর্তি হয়ে থাকলে আজ সোমবার সকালে এই তথ্য জানা যাবে। উপসর্গ দিয়ে ডেঙ্গু আশঙ্কা করা কঠিন। রিপোর্ট আসার পরই ডেঙ্গু রোগী বলে নিশ্চয়তা দেয়া যায়।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। সেই বিষয়টি মাথায় নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ৩ মাসের বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে গেল বছরে নগরীর যেসব স্থানে এডিসের লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল সেসব স্থানে ফের অভিযান পরিচালনা হয়েছে। তবে দুয়েকটি স্থানে লার্ভা পাওয়া গেলেও বেশীর ভাগ স্থানে এবার লার্ভা পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত চলতি মওসুমে নগরীর কোন বাসিন্দা ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেনি।
সিলেটের ডেপুটী সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় শঙ্কর দত্ত দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, চলতি মাসে সিলেট জেলায় কয়েকজন ডেঙ্গু উপসর্গের রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এরমধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট জেলার ১ জন শনাক্ত হয়েছেন। অন্যদের নমুনা নেয়া হয়েছে আজ সোমবার রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় সহকারী পরিচালক ডা. নুরে আলম শামীম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিলেটে ডেঙ্গুরোগী শনাক্তের বিষয়টি উদ্বেগজনক। আক্রান্তদের ট্রাভেল হিস্ট্রি না থাকায় উদ্বেগ আরো বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে আজ সোমবার সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসে একটি বৈঠক আছে। এই বৈঠকে করনীয় ঠিক করা হবে। নগরীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে অভিযান চলছে। উপজেলা পর্যায়ে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত ও ধ্বংস করতে অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম রোববার জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩০৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩২ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৩ জন। এসময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
সংস্থাটি আরো জানায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১ হাজার ১১৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৮৭০ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ২৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৯০৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ৮০৭ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ১০১ জন।
এদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ হাজার ৭৫৬ জন। ঢাকায় ২ হাজার ৯১০ এবং ঢাকার বাইরে ৮৪৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছিল- সেই সময় ২৪ ঘন্টায় দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩জনই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৩ জনে। আর চলতি জুন মাসে মারা গেলেন ২০ জন।
সংস্থাটি আরো জানিয়েছিল, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু জ্বরে ৪ জন মারা গেছেন। এই সময়ে ৪৭৭ জন নতুন রোগী ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ বছর মোট ৩ হাজার ৪৩২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭৭ শতাংশ রোগী ঢাকা শহরের, বাকি ২৩ শতাংশ ঢাকা জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ দেশের বাকি অঞ্চলের। তবে এই হিসাবের মধ্যে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের ডেঙ্গু আক্রান্তদের তথ্য নেই। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী এ বছর এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি জানিয়েছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের বেশি মৃত্যু হচ্ছে ‘শক সিনড্রোমে’। ডেঙ্গু ‘শক সিনড্রোম’ অর্থ হলো, ডেঙ্গু রোগীর রক্তচাপ অতিদ্রুত কমে যায়, রক্তে অণুচক্রিকার পরিমাণ কমে যায় এবং রোগীর পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়ে পড়ে, রোগী অচেতন হয়ে পড়েন।
দেশে গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা যায়। যা দেশে এক বছরে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি রোগী মৃত্যুর রেকর্ড। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়।