আজ ভোট : কে হচ্ছেন সিলেটের নগর পিতা?
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুন ২০২৩, ১২:১০:৫৪ অপরাহ্ন
মেয়র পদে ৭, সাধারণ কাউন্সিলর ২৭৩ ও সংরক্ষিত ৮৭ প্রার্থী
ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫, ভোট কেন্দ্র ১৯০, ভোটকক্ষ ১,৩৬৪
জালালাবাদ রিপোর্ট : অবশেষে পঞ্চমবারের মতো আজ সিলেট সিটির ভোটগ্রহন। বিএনপি-জামায়াতবিহীন এ নির্বাচন অনেকটাই জৌলুস হারালেও শেষ হাসি কে হাসবেন- তা নিয়ে আগ্রহ নগরজুড়ে। আলোচনা দেশ ছাপিয়ে প্রবাসে, বিশেষ করে লন্ডনে। মূলত দু’জনকে ঘিরেই আলোচনা।
আওয়ামীলীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এ নির্বাচনে নেই। নেই জামায়াতও। গত দুটি নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে জয় পাওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও দলের সিদ্ধান্ত মেনে প্রার্থী হননি। এবার তাই আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীই আলোচনার শীর্ষে। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাবুলের নামও সমান আলোচিত হচ্ছে।
অনেকে মনে করছেন, বিএনপিবিহীন ফাঁকা মাঠেও আওয়ামীলীগ খুব একটা স্বস্তিতে নেই। ভোটের সমীকরণে মূল আলোচনা চলছে সরকারবিরোধী ‘ভোটব্যাংক’ ঘিরেই।
আওয়ামীলীগের অনেক নেতা-কর্মী আশঙ্কা করছেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আওয়ামীলীগ বা সরকারবিরোধী ভোট টানতে পারেন। এছাড়া মেয়র ও কাউন্সিলর পদে বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত ৪৩ জন এবং জামায়াত ঘরানার ২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। তাদের ভোট দিতে দল দুটির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী-সমর্থক ভোটকেন্দ্রে যাবেন। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে পারেন।
তবে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় এমনিতেই ভোটের মাঠে অনেকটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন। তারপর শেষ মুহূর্তে এসে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র পদপ্রার্থীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলে তা আরও জৌলুস হারায়। মেয়র পদ নিয়ে সাধারণ ভোটারদের তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি; তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে তাদের সমর্থকদের উত্তেজনা রয়েছে। এই অবস্থায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের আজ ভোট কেন্দ্রে এসে ভোটধিকার প্রয়োগের জন্য বার বার অনুরোধ করেছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ৮ জন মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। এর মধ্যে বরিশালের ঘটনায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে এখন প্রার্থী মূলত সাতজন।
এদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসন বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। তাকে ও তার কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কোর্ট পয়েন্টে নির্বাচনী সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ স্টেজ-প্যান্ডেল তুলে দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, বিপুলসংখ্যক বহিরাগত সিলেট সিটিতে এসেছে। হোটেলগুলোতে খবর নিয়ে দেখেন, রুম খালি নাই। ভোটের দিন কেন্দ্রগুলোতে সহিংসতার আশঙ্কা করছি। প্রশাসনও একপক্ষের হয়ে কাজ করবে বলেও মনে হচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটি শক্তিশালী সংগঠন। এই দলের প্রত্যেক সেন্টারে শতশত স্থানীয় নেতাকর্মী রয়েছে। সেখানে বহিরাগত আনার প্রয়োজন নেই। এখানে স্পষ্ট করে জানাতে চাই, আমাদের কোনো নেতাকর্মী টু-শব্দও করতে পারবে না। আমি সকলকে (নেতাকর্মীকে) অনুরোধ করেছি, গায়ে হাত দিলেও আমাদের কেউ পাল্টা জবাব দেবে না।
এদিকে, বহুল আলোচিত এ নির্বাচনে আজ ইভিএমে সকাল ৮টা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে টানা ভোটগ্রহণ। আজকের দিনটি ঘিরে ভোটারদের মধ্যে যেমন কৌতুহল আছে, তেমনই শঙ্কাও বিরাজ করছে।
ভোট উপলক্ষে নগরের আনাচে-কানাচে, গলির মুখে ছোট-ছোট দলে বিভক্ত হয়ে চলছে মানুষের নির্বাচনী ভাবনা আর বিশ্লেষণ। স্বত:স্ফূর্তভাবে সবাই মেয়র প্রার্থীদের নানা ধরনের দোষ-গুণের পর্যালোচনা করছেন।
ভোট উপলক্ষে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যানবাহন চলাচলের ওপর আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ। মঙ্গলবার সকালে ১৯০টি কেন্দ্রে ভোটের সামগ্রী পৌঁছানোর কার্যক্রম শুরু হয়। তবে বৃষ্টির কারণে তা কিছুটা দেরি হয়। সব কেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছাতে গভীর রাত হয়ে যায়।
সিটির মোট ভোটার চার লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। এবারের নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৯০টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ রয়েছে এক হাজার ৩৬৪টি। সব ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে সিসি ক্যামেরা থাকছে।
ভোটের সরঞ্জামাদি বিতরণকালে নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল কাদির বলেন, ভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটারদের ভয়ডরহীনভাবে ভোট কেন্দ্রে আসার আহবান জানান তিনি।
ফিরে দেখা সিলেট সিটি ভোট :
২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হন বদর উদ্দিন কামরান, ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও তিনি কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে মেয়র পদে জয়ী হন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।
২০০৮ সালে নির্বাচনে সিলেট সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছিলেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৩৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ ফ ম কামাল পান ৩২ হাজার ৯৭ ভোট ভোট। ভোট পড়ার হার ছিল ৭৫%।
২০১৩ সালে এ সিটিতে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন। আওয়ামীলীগ সমর্থিত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। ভোট পড়ে ৬২% ।
২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে ৬ হাজার ১৯৬ ভোটে পরাজিত করে মেয়র হিসেবে দ্বিতীয়বার মত জয় পান বিএনপির আরিফুল। এ নির্বাচনে আরিফুল পেয়েছেন মোট ৯২ হাজার ৫৮৮ ভোট। কামরান পান ৮৬ হাজার ৩৯২ ভোট। ভোটের হার ছিল ৬৩% এর মত।