বাড়ছে পানি, নিম্নাঞ্চলে উৎকণ্ঠা
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুন ২০২৩, ২:৩৫:৪৯ অপরাহ্ন
জুনে গতবছরের রেকর্ড ভাঙতে পারে বৃষ্টি
স্টাফ রিপোর্টার : জ্যৈষ্ঠের শেষ দিন থেকে সিলেটে অবিরাম ঝরছে বৃষ্টি। সেটি অব্যাহত ছিলো আষাঢ়ের ষষ্ঠ দিন অর্থাৎ গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্তও। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে বৃষ্টি। এতে সিলেটে বন্যার বিস্তৃতি ঘটতে পারে।
ওদিকে, নদীতে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল নামছে অবিরত। উজানে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় সিলেট-সুনামগঞ্জের নদ-নদীগুলো ফুলে ফেঁেপ উঠেছে। বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার অতিক্রম করেছে। এ অবস্থায় পবিত্র ঈদুল আজহার আগে সিলেটের হাওরপার ও নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় ঢলের পানিতে ভেসে গেছেন দুই সন্তানসহ মা। নিখোঁজ হওয়া নারী দুর্লভ রানী দাসের (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাঁর দুই সন্তান জবা রানী দাস (৭) ও বিজয় দাস (৫) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জুন মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ৩০ বছরের বৃষ্টিপাত পর্যালোচনা করে একটি অঞ্চলের স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ধরা হয়। সে হিসাবে সিলেট অঞ্চলে জুন মাসে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ৮১৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার। তবে গত বছরের জুন মাসে ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তবে জুন মাসে ১৯ দিনে সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১ হাজার ৮৫ দশমিক ৯ মিলিমিটার। বাকি ১১ দিনে সিলেটে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। গত বছরের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে চলতি মাসে।
সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটের আরও কয়েক দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
এদিকে, দেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণকেন্দ্র (এফএফডব্লিইসি) মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ১০৯টি নদীর জলস্তর পর্যবেক্ষণের পর ৯১টি স্টেশনে জলস্তর বৃদ্ধির তথ্য রেকর্ড করেছে।
মঙ্গলবার এফএফডব্লিউসি’র পক্ষ থেকে দেয়া একটি বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর (সুরমা, কুশিয়ারা, সারি গোয়াইন, ঝালুখালী, ভোগাই-কংস, সোমেশ্বরী, জাদুকাটা) পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় পানি ১০ দশমিক ৩৬ দশমিক সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আগের দিন ওই পয়েন্টে ১০ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপদসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।
সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরেই প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার বেলা ৩টায় ওই পয়েন্টে ১২ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমা ১২ দশমিক ৭৫।
কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার বেলা ৩টায় নদীর ওই পয়েন্টে পানি ১২ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়।
কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। সেখানে মঙ্গলবার বেলা ৩টায় পানির উচ্চতা ছিল ৮ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার।
সারি নদের সারিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমা ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার, সেখানে মঙ্গলবার বেলা ৩টায় পানি ১১ দশমিক ০৩ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
লুভা নদীর লুভাছড়া পয়েন্টে মঙ্গলবার বেলা ৩টায় ১৩ দশমিক ২৯ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। এ নদীতে বিপদসীমা ১৩ দশমিক ৮২।