আষাঢ়ের ঢলে স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে নিঃস্ব রথীন্দ্র
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুন ২০২৩, ১০:২৭:৪২ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা: গত বছরের চৈত্রের এক রাত সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের বিলপুর গ্রামের রথীন্দ্র চন্দ্র দাসের জন্য ছিল কালরাতের মতো। সেই রাতে ঘুমের মধ্যে মারা যায় তার দু বছরের শিশুপুত্র। টাইফয়েড জ্বর কেড়ে নেয় ছোট্ট শিশুটির প্রাণ। সেই শোক কাটিয়ে উঠার আগেই গত সোমবার রাতে আবারও অন্ধকার নেমে আসে রথীন্দ্রের জীবনে। আষাঢ়ের ঢলের পানির স্রোতে ভেসে যায় তার স্ত্রীসহ দুই সন্তান।
এদিন রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা সদরের কাছে দুই সন্তানসহ একটি ডুবন্ত সড়ক হেঁটে পার হওয়ার সময় স্রোতের ধাক্কায় দাড়াইন নদীতে ভেসে যান রথীন্দ্রের স্ত্রী দুর্লভ রাণী দাস (৩০)।
পরে ১৫ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার ছায়ার হাওরের মাউথি বিলের পাশ থেকে দুর্লভ রানী দাসের মরদেহ উদ্ধার করেছে সুনামগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দল। স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনো নিখোঁজ দুই সন্তান জবা রানী দাস (৭) ও বিজয় চন্দ্র দাস (৫)। স্ত্রীর শেষকৃত্য শেষ করে এখন দুই সন্তানের মরদেহের অপেক্ষায় অসহায় রথীন্দ্র। তিন সন্তান ও স্ত্রীকে হারিয়ে আর কেউ রইলো না তার। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব তিনি। স্ত্রী ও সন্তানদের হারিয়ে বাকরুদ্ধ দিনমজুর রথীন্দ্র যেন নিশ্চুপ হয়ে গেছেন।
তার গ্রামের ইউপি সদস্য সুধীর দাস বলেন, গত চৈত্র মাসে ঘুমের মধ্যে তার দুই বছরের শিশু সন্তান মারা যায়। এরপর স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে দিনমজুরি করে চলছিল তার পরিবার। সেই সুখটাও সইলো না তার কপালে। ঢলের পানির স্রোতে এক সঙ্গে তার ছেলে-মেয়ে ও সন্তান ভেসে যায়। তার স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হলেও এখনো নিখোঁজ তার দুই সন্তান। যে কোনো অবস্থায় তাদের খোঁজ পাওয়ার অপেক্ষায় রথীন্দ্র। সবকিছু হারিয়ে সে এখন নিশ্চুপ হয়ে গেছে।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সবাই ছুটে গেছি সেখানে। সুনামগঞ্জ থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এনে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে নিখোঁজ নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে অনেক দূরে হাওর থেকে। এখনো তার দুই সন্তান নিখোঁজ। তাদের উদ্ধারে স্থানীয়রা কাজ করছে। আশপাশের সব জায়গায় বার্তা দেওয়া হয়েছে যেন এদিকে একটু লক্ষ্য রাখে। কোনো কিছু পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানায়। সব হারিয়ে নিঃস্ব রথীন্দ্রকে আমরা আপাতত বিশ হাজার টাকা অর্থ সহযোগিতা দিব। এছাড়া সরকারের অন্যান্য যে সব সহযোগিতা আছে সেগুলো দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।