ইভিএমে ধীরগতি, ভোটারদের বিরক্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুন ২০২৩, ১১:২৬:৪৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : দিনভর বৃষ্টি ছিলো না। তবুও ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। ভোট গ্রহণেও ছিল ধীরগতি। এর কারণ ইভিএম জটিলতা।
এবারেই প্রথম সিলেটের সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। কিন্তু একেকজন ভোটারের ইভিএমে ভোট দিতে সময় বেশি লাগে। অধিকাংশ কেন্দ্রে ইভিএম জটিলতায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় ভোটারদের। আঙুলের ছাপ মেলাতেও সমস্যায় পড়তে হয়। ভোট দিতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছিল। অনেক কেন্দ্রে উপস্থিতির তুলনায় ভোট পড়ার হার ছিল কম। ইভিএম নিয়ে অপেক্ষমান ভোটাররাও ছিলেন ক্ষুব্ধ।
এমনকি একটি কেন্দ্রে ইভিএম বিকল হয়ে পড়ায় ৪০ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। এছাড়া অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে নৌকা ছাড়া অন্য কোনো মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
সরেজমিন ইভিএম জটিলতার চিত্রও দেখা যায় দিনভর। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের আখালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ৯টি। ৬ নম্বর কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্তত আটজন নারী ভোটার অভিযোগ করেন, সকাল ৮টা থেকে তাঁরা কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ভোট দিতে পারেননি। ধীরগতিতে ভোট নেওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬ নম্বর কক্ষের মোট ভোটার ৩৭৮ জন। সকাল ৯টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত ২২ জন এবং ৯টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত ৩২ জন ভোট দিতে পেরেছেন। এ হিসাবে একজন ভোটারের ভোট দিতে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে চার মিনিট করে। এ সময় কক্ষের সামনে অন্তত শতাধিক ভোটার সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
পরে ভোটকেন্দ্রটির অন্যান্য কক্ষ ঘুরেও ভোট গ্রহণে ধীরগতির অভিযোগ পাওয়া যায়। এর কারণ হিসেবে ভোট গ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট হওয়ায় অভিজ্ঞতার অভাবে অনেকে ভোট দিতে অসুবিধায় পড়েছেন। অধিকাংশ ভোটার ভোট দিতে কমপক্ষে ৫-৭ মিনিট সময় নেন। এছাড়া অধিকাংশ কক্ষে অপর্যাপ্ত আরো থাকায় ভোট নিতে প্রতিবন্ধকতা হয়। এতে পর্যাপ্ত ভোটারের উপস্থিতি থাকলেও ভোট গ্রহণে বিলম্ব হয়।
বালুচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিলেট সরকারি মডেল স্কুল, বীরেশ চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ইভিএমে অভ্যস্ত না হওয়ার কারণে ভোট গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে। এ ছাড়া ইভিএম বিকল হয়ে পড়ায় আখালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৩ নম্বর কক্ষে ভোট গ্রহণের পর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অন্তত ৪০ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।
কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারার অভিযোগ করলেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনন্দনিকেতন কেন্দ্রের ভোটার আফতাব উদ্দিন। তার অভিযোগ, ‘মেশিন (ইভিএম) নষ্ট।’
আফতাব উদ্দিন সকাল ৯টায় কেন্দ্রে এসে ১ নম্বর পুরুষ কক্ষে ভোট দিতে যান। ফিরে এসে কক্ষের বাইরে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, কয়েকবারের চেষ্টায়ও ভোট দিতে পারেননি।
একাধিক কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সাংবাদিকদের বলেন, ইভিএম পদ্ধতির সঙ্গে ভোটাররা অভ্যস্ত না থাকায় ভোট দিতে সময় লাগছে। তারা জানান, ভোটাররাই ভোট দিতে সময় নেন। ইভিএম-এর গতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও দাবি তাদের।
দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, একজনের ভোট দিতে ১০ মিনিট লাগে। মেশিনে সমস্যা নেই। ভোটারদের ইভিএম পদ্ধতি বুঝতে সময় লাগছে। তিনি জানান, কেন্দ্রে মোট ২৯৪০ ভেটার। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬৮৬ কাস্টিং হয়েছে।
একই রকমের তথ্য জানিয়ে নগরের শাহপরান এলাকার কৃষ্ণ গোবিন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বলেন, ইভিএমে ভোটাররা অভ্যস্ত না। তাই দেরি হচ্ছে। বিশেষত বয়স্ক একেকজনের ভোটপ্রদানে ১০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগছে। এতে আমরাও বিরক্ত।
দক্ষিণ সুরমার মহালক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি কেন্দ্র রয়েছে। মহালক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ৪টা ৬ মিনিটে বলেন, এটি সবচেয়ে বড় কেন্দ্র, ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ২৮৮। এই কেন্দ্রে ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এখনো প্রায় শতাধিক ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমরা তাঁদের ভোট গ্রহণ করব।