বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিম্নগামী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুন ২০২৩, ১২:৩০:২৯ অপরাহ্ন
বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষমতাধর দেশগুলোর সরকার এখন বাংলাদেশ নিয়ে প্রায়ই আলোচনা করছেন, বক্তব্য রাখছেন। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক দিক। ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও পরিস্থিতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে ওঠায় বাংলাদেশ এখন পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রসহ আঞ্চলিক শক্তিধর দেশগুলো ছাড়াও অন্যান্য দেশের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হচ্ছে। অপরদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা এবং অগণতান্ত্রিক অবস্থানের কারণে দেশটি এখন ব্যাপকভাবে সমালোচিত ও নিন্দিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ইতিহাস তথা গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। তাই বিশ্বের বড় বড় গণতান্ত্রিক দেশের সাথে এদেশের সম্পর্ক ও যোগাযোগও অনেক বেশী। কিন্তু গত প্রায় দেড় দশক যাবৎ এদেশে গণতন্ত্রের নামে যা ঘটছে এতে বিশ্বব্যাপী অনেক দুর্নাম কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষভাবে গত দুটি জাতীয় নির্বাচন যে পন্থায় অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্র গণতান্ত্রিক দেশগুলো ছাড়াও জাপানসহ বিভিন্ন এশীয় দেশ কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছে। এসব আলোচনা সমালোচনা অনেক ক্ষেত্রে ব্যঙ্গ বিদ্রুপে রূপ নিতে দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে কিছুদিন আগে বাংলাদেশে জাপানী রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়াসহ সকল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এতে বাংলাদেশের বিশেষভাবে ক্ষমতাসীন মহলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্যের কোন যৌক্তিক ও জোরালো প্রতিবাদও করতে সক্ষম হয়নি বাংলাদেশ। এছাড়া ক্ষমতাসীনদের অগণতান্ত্রিক ও অযৌক্তিক আচরণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকরা প্রায়ই এমন সব বক্তব্য দিচ্ছেন, তা সরকার না পারছে প্রতিবাদ করতে, না পারছে সহ্য করতে। এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করলেও নীরবে হজম করতে হচ্ছে সরকারকে।
একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম সর্বোপরি লাখ লাখ জীবনের বিনিময়ে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের মতো একটি দেশের জন্য এটা অত্যন্ত অবমাননাকর ও লজ্জাজনক। এতো সব অপমান ও বিশ্বব্যাপী ইমেজ সংকট সত্বেও ক্ষমতাসীন মহলকে এমন অবস্থা পরিহার করে হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে আনার জন্য কোন যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। বরং গণতান্ত্রিক মুক্ত বিশ্ব হিসেবে পরিচিত পশ্চিমাদের সাথে টেক্কা দিতে কথিত সমাজতান্ত্রিক চীন ও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকতে দেখা যাচ্ছে তাদেরকে। এর চেয়েও বড় লজ্জার বিষয় ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিবেশী ভারতের হাতে পায়ে ধরার মতো অবস্থানে নেমে আসতে দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীনদের। প্রায়ই অসংগতিপূর্ণ ও ভারসাম্যহীন কথাবার্তা ও আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে।
কথায় আছে, ‘ধরলে গরুর লেজ ধরো, বিড়ালের লেজ নয়’। নদী পার হতে সাঁতার না জানা গ্রামের রাখাল বালকদের গরুর লেজ ধরে নদী পেরোতে দেখা যায়। কিন্তু কোন বিড়াল বা উদের লেজ ধরে তা কখনোই সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞাসহ নতুন ভিসা নীতি ও কড়াকড়ি এবং শর্তাবলী মোকাবেলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা ভারতের শরনাপন্ন হচ্ছেন। কিন্তু তাদের অবস্থা অনেকটা বিড়াল বা উদের লেজ ধরে নদী পার হওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। খোদ ভারতের বিজেপি সরকারই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেকটা নতজানু ও বিব্রতকর অবস্থায় আছে, এমন পরিস্থিতিতে তারা বাংলাদেশকে কোনভাবে সাহায্য করা যে সম্ভব নয়, তা এখন স্পষ্ট। আর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাধর উপদেষ্টা জন কিরবি এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান আগে ভাগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় অগণতান্ত্রিক পন্থায় বর্তমান ক্ষমতাসীয়ন ক্ষমতায় টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব, এমন অভিমত সচেতন মহলের। এ ধরনের ক্ষমতায় থাকার প্রচেষ্টা ও রাজনৈতিক রশি টানাটানি বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খারাপ থেকে আরো খারাপই হচ্ছে, যা এদেশের সতেরো কোটি মানুষের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এর আশু অবসান কামনা করি।