সিলেটে ২ মাসে ধান চাল সংগ্রহ অর্ধেকের কম
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুন ২০২৩, ১:০০:৫০ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল :
গেলো বোরো মওসুমে সিলেট বিভাগে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও সরকারীভাবে ধান চাল সংগ্রহের পুরনো বৃত্তে বন্দী হয়ে আছে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। কৃষকের অনিহার কারণে এবারো ২ মাসে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বাকী ২ মাসে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। যদিও খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ব্যাপারে আশাবাদী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মওসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান ও চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। এর মধ্যে ৪ লাখ টন ধান, ১২ লাখ ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করার কথা। সরকারীভাবে প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহমূল্য ৩০ এবং সিদ্ধ চাল ৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সূত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে সরকারীভাবে রংপুর বিভাগ থেকে থেকে ৬৫ হাজার ৯৮৪ টন ধান, রাজশাহী বিভাগে ৬৫ হাজার ৮১৭, ঢাকা বিভাগে ৫৮ হাজার ৮৫০, খুলনা বিভাগে ৫১ হাজার ৬৮৪, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫০ হাজার ৭২, সিলেট বিভাগে ৩৫ হাজার ৫৩৬, বরিশাল বিভাগে ১৬ হাজার ২৩১ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৫ হাজার ৮২৬ টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে সরকারীভাবে সিলেট বিভাগ থেকে ৩৫ হাজার ৫৩৬ টন ধান ও ৪২ হাজার ৮২১ টন চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গেল মে মাসের ১ম সপ্তাহে ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। দ্রুত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পর লক্ষ্যমাত্রা আরো বাড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরুর ২ মাস পার হতে চললেও গত শুক্রবার (২৩ জুন) পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ধান সংগ্রহ হয়েছে ১৮ হাজার ৪২৯ টন ও চাল সংগ্রহ হয়েছে ২১ হাজার ৯০৪ টন। যা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের কম। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যদিও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে বলে প্রত্যাশা খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষের।ৎ
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার ৩৫ হাজার ৫৩৬ টন ধানের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় ১৭ হাজার ৪৮৩ টন ধান ও ১১ হাজার ৮৬০ টন চাল সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু শুক্রবার (২৩ জুন) পর্যন্ত জেলায় ৮ হাজার ৬২২ টন ধান ও ৪ হাজার ৭২৬ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের কম।
এদিকে সিলেট জেলায় ৬ হাজার ৬৪৫ টন ধান ও ৮ হাজার ৬৫০ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও শুক্রবার (২৩ জুন) পর্যন্ত ৪ হাজার ৫০৪ টন ধান ও ৪ হাজার ৪৫৯ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের উপরে রয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলায় ৬ হাজার ৬৫৯ টন ধান ও ১৪ হাজার ৩২৯ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ২৩ জুন পর্যন্ত জেলায় ৩ হাজার ৭১৭ টন ধান ও ৬ হাজার ৬০৮ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। জেলায় ধানে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক ছাড়িয়ে গেলেও চাল সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের কম।
মৌলভীবাজার জেলায় ৪ হাজার ৭৪৯ টন ধান ও ৭ হাজার ৯৮২ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হলেও ২৩ জুন পর্যন্ত জেলাটিতে ১ হাজার ৫৮৫ টন ধান ও ৫ হাজার ১০৯ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। জেলায় চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশী হলেও ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের কম।
সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, গেল বছরের মতো এবারো সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ধরে ধান-চাল কিনতে পারবে না। সরকারী ধান-চাল কিনতে কৃষকরা যে হয়রানির মুখে পড়েন- তা থেকে রেহাই পেতে তারা স্থানীয় বাজারেই ধান বিক্রি করেন। ফলে সরকার কৃষকের কাছ থেকে কিনতে পারে না। সঙ্গত কারণেই লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয় না। তবে সরকারের তরফে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এবার আশা করা হচ্ছে- নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরকার ধান-চাল কিনতে পারবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার ধান-চাল কেনার দাম বাড়ালেও কৃষকরা সেখানে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী নয়। তারা দুয়েক শ টাকা কমে স্থানীয় বাজারেই ধান বিক্রি করছেন। অন্যদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও সুযোগ বুঝে কৃষকের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। কৃষকরাও ধান বিক্রি করতে চাচ্ছেন তাদের কাছে। এতে কৃষকরাও খুশি।
এব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ধান-চাল কিনতে সরকার দর বাড়ানোর কারণে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। উৎপাদনও ভালো হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান-চাল সংগ্রহের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
তিনি বলেন, ধানের ব্যাপারে কৃষকদের অনাগ্রহের কারণে সংগ্রহে কিছুটা ধীরগতি। তবে চাল দিতে মিলাররা আমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ আছেন। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চাল দিতে বাধ্য। এ নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। বাজারে ধানের দাম তুলনামূলক বেশী থাকায় কৃষকরা খাদ্যগুদামে ধান দিতে চায়না। তবে আমরা ৩১ আগস্টের মধ্যে শতভাগ ধান সংগ্রহ করতে পারবো বলে মনে করি।