পশুর হাটে শেষ মুহুর্তের ব্যস্ততা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০২৩, ৬:১৪:৪৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : রাত পোহালেই ঈদুল আযহা। শেষ সময়ে ঈদের সকল ব্যস্ততা কুরবানীর পশুর হাট ঘিরে। নগরীতে ৮টি অস্থায়ী পশুর হাটের পাশাপাশি স্থায়ী হাটে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা-বিক্রেতাগণ। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী পশুরু হাটে খোলা আকাশের নিচে পশু বিক্রিতে ব্যস্ত পাইকারগণ। স্থানীয়দের পাশাপাশি সিলেটের বাইরে থেকেও পশু নিয়ে এসেছেন বিক্রেতাগণ।
মঙ্গলবার সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ভ্যাপসা গরম তার উপর মশার উৎপাত। বিকেলে বৃষ্টির সাথে সাথে বদলে যায় দৃশ্যপট। একদিকে বৃষ্টিতে ভিজে হাতে ছাতা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বিক্রেতাদের। তারপরও নেই বিরক্তির ছাপ। শত কষ্ট হলেও সঙ্গে আনা পশুর প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। অপরদিকে ছাতা নিয়ে ক্রেতাদের ঘুরে ঘুরে কুরবানীর পশু পছন্দ করতে দেখা গেছে। অনেকেই দরদাম করলেও পশু কিনছেন না। এর কারণ হিসেবে শহরের বাসা-বাড়ীতে পশু রাখাতে বাড়তি ঝামেলা হিসেবে মনে করেন অনেকে। তাই অনেকের ইচ্ছা শেষ সময়ে কিনবেন কুরবানীর পশু। আগে থেকে বাজার যাচাই করতে এসেছেন।
নগরীর কাজিরবাজারস্থ গরুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে খুঁটিতে বাঁধা রয়েছে গরু। ক্রেতারা পছন্দের গরু কেনার জন্য ঘোরাঘুরি করছেন। বিক্রেতারা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউ কেউ গরুর পরিচর্যা করছেন।
নগরীর একাধিক অস্থায়ী পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে বসে আছেন। আর বিক্রেতারা তাদের পছন্দের গরু ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। সুনামগঞ্জ থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী ইছরাব আলী বলেন, গত রোববার আমরা ৪ জন মিলে ২১টি গরু নিয়ে আসছি। ইতোমধ্যে ৫টি বিক্রি করেছি। বাকী ১৬ টি গরু নিয়ে সারারাত আমরা সজাগ ছিলাম। তবে শিফট করে আমরা ঘুমাই।
নেত্রকোনা থেকে আসা ব্যবসায়ী আবদাল মিয়া বলেন, মোট ১১টি গরু নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে ২ টি গরু বিক্রি করছি। ক্রেতার আশায় বসে আছি। আশা করছি আজকের মধ্যেই বাকী গরুর বিক্রি করতে পারবো। এবার পশুর দাম তুলনামূলক বেশী হওয়ায় ক্রেতারা ঘুরছেন বেশী।
আজমিরিগঞ্জ থেকে আসা হাসিম মোল্লা বলেন, আমরা ৯টি গরু নিয়ে ৩ জন এসেছি। রাতে একজন ঘুমাই। বাকি দুইজন সজাগ থাকি। এভাবে গেল রাত পার করেছি। দরদাম হচ্ছে তবে কাঙ্খিত মূল্য না পাওয়ায় বিক্রি করিনি। শেষ সময়ে বিক্রি হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
নগরীর মদীনা মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা রাস্তার মধ্যে বসে আছেন। আবার কেউ কেউ শুয়ে পড়েছেন। ক্রেতারা তাদের পছন্দমত গরু দরদাম করছেন। একই এলাকায় আব্দুর রহিম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, গরু বিক্রির আশায় বসে আছি। দুই দিন থেকে আসছি। মাত্র একটি গরু বিক্রি করেছি।
শহরতলীর নয়া টুকেরবাজারের অস্থায়ী পশুর হাট ঘুরে ভিন্ন এক দৃশ্য দেখা গেছে। হাটের এক পাশে বসে বসে একটি মাত্র গরুর মুখে খাবার তুলে দিচ্ছিলেন সদর উপজেলার শিবেরবাজার এলাকার এক মুরব্বী। তিনি বলেন, আমার অনেক আদরের গরু এটি। দুই বছর থেকে কষ্ট করে এই গরু লালন পালন করেছি। কিন্তু একটু বেশি লাভের আশায় গরুটি বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। কত দাম হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার গরু এখন পর্যন্ত ১ লাখ টাকা দাম হয়েছে। আরো ২০ হাজার টাকা বেশি পেলে বিক্রি করে দেব।
এক পর্যায়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, গত দুই বছর এই গরুর পেছনে অনেক সময় দিয়েছি। সেজন্য গরুটি বিক্রি করতে কষ্ট লাগছে। তাই গরুর পাশে বসে খাওয়াচ্ছি। বিক্রির আগ পর্যন্ত আমার পক্ষ থেকে পশুর কোন কষ্ট হোক চাইনা।
এদিকে নগরীর মেজরটিলা, শাহী ঈদগাহ, মদীনা মার্কেট ও টুকেরবাজারে অস্থায়ী হাটের অনুমতি থাকলেও অবৈধভাবে সুবিদবাজার, দর্শন দেউরী, পাঠানটুলা এলাকায় গরু-ছাগল নিয়ে বিক্রেতাদের বসে থাকতে দেখা গেছে। নগরীর মাছিমপুর এলাকায় অবৈধভাবে পশু বিক্রির ধুম চলছে। হাটের পরিধি আশপাশের পুরো এলাকা ছাড়িয়ে গেছে।
নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় মঙ্গলবার বিকেলে মুজিব খান নামের এক ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এখন গরু দেখতে এসেছি। এই এলাকাতেই আমার বাসা। বাসায় গরু রাখার জায়গা নেই। তার উপর আবার চুরির ভয়। তাই আগে গরু কিনতে চাইনা। বুধবার বিকেলে কিংবা রাতে গরু কিনবো।