বৃষ্টি উপেক্ষা করে সাদাপাথরে পর্যটকদের ভিড়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুলাই ২০২৩, ৭:৫০:৫০ অপরাহ্ন
আব্দুল জলিল, কোম্পানীগঞ্জ : প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর। পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা পানি পাথরের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঝুম ঝুম শব্দ করে। পাহাড় পানি আর পাথরের এই মিতালি দেখতে ভীড় করেন প্রকৃতিপ্রেমিরা। শীত গ্রীষ্ম ও বর্ষায় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে এই সাদাপাথর। একেক ঋতুতে একেক রূপ ধারণ করা সাদাপাথর বরাবরই পর্যটকদের মন আকৃষ্ট করে। প্রকৃতির এই ভরা যৌবনে সাদাপাথর যেন একখ- দ্বীপে পরিণত হয়েছে। চতুর্দিকে পানি আর মাঝখানে একখ- পাথরের দ্বীপ যেন কোন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো। যার সৌন্দর্যে অভিভূত না হয়ে কেউ থাকতেই পারবে না। নৈসর্গিক এই পর্যটন কেন্দ্র দেখতে এই ঈদেও ভীড় জমাচ্ছে পর্যটকরা। তবে তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বৈরী আবহাওয়া।
ঈদের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বৃষ্টি উপেক্ষা করেও প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে। গত রোজার ঈদের দ্বিতীয় দিনে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল। সে তুলনায় বৃষ্টির কারণে এই ঈদে পর্যটকের সংখ্যা অনেক কম। ঈদের তৃতীয় দিন আবার বৃদ্ধি পায় পর্যটকের সংখ্যা। এদিন বৃষ্টি থাকার পরেও প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার পর্যটক এসেছেন সাদাপাথরে। ঈদের চতুর্থ ও পঞ্চম দিনেও ছিল পর্যটকদের ভিড়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রায় লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হতো বলে জানায় উপজেলা প্রশাসন।
শুক্র, শনি, রবি ও সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি চলে প্রায় পুরো দিন। সকালে পর্যটকদের সংখ্যা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে পর্যটকদের সংখ্যাও। বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে ৫দিনে প্রায় ৪০ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটেছে।
পর্যটকদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেডিকেল টিম, টুরিস্ট পুলিশ ও ইজারাদারদের সেচ্ছাসেবী রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সার্বক্ষণিক তদারকিতে থাকতেও দেখা গেছে। যার ফলে এবারের ঈদে কোন বিশৃঙ্খলা ঘটেনি।
ঢাকা থেকে ঘুরে আসা তন্ময় বর্মণ ও তুষার দাস জানান, সাদাপাথর দেখে ভ্রমণের ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এত সুন্দর জায়গা আছে এখানে না আসলে বুঝতাম না। সাদা পাথরের অনেক প্রশংসা শুনেছিলাম এখান দেখে আমরা মুগ্ধ। তবে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নৌকাতে লাইফ জ্যাকেট থাকলে নৌকা ভ্রমণ নিরাপদ হতো।
চুয়াডাঙ্গা থেকে ঘুরতে আসা বিনয় মন্ডল জানান, সাদাপাথর দেখতে এত সুন্দর যে এখানে না আসলে কেউ বুঝতে পারবে না। তবে পর্যটকদের সুযোগ সুবিধার জন্য স্পটে বসার ব্যবস্থা করলে আরো ভালো হতো।
সাদাপাথরের ব্যবসায়ী সফাত উল্লাহ, লিটন মিয়া, সাজন মিয়া ও আশরাফুল ইসলাম খোকন জানান, পর্যটকদের বরণ করতে আমরা সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। ধারণা ছিল প্রায় লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হবে, সে অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে পর্যটক আসতে না পারায় অন্য ঈদের চেয়ে ব্যবসা কম হচ্ছে। আসা করছি আবহাওয়া ভালো হলে আরো পর্যটক আসবে।
সাদাপাথর নৌকা ঘাটের ব্যবস্থাপক তোয়াহির আলী জানান, পর্যটকদের সেবা দিতে আমরা সকল ব্যবস্থা করে রেখেছি। বিভিন্ন স্থানে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা রয়েছেন। পর্যটকদের যাতে কোন সমস্যা না হয় সেজন্য তারা সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে নৌকা রাখা হয়েছে যাতে পর্যটকদের যাতায়াতে অসুবিধা না হয়।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং জানান, বৃষ্টির কারণে পর্যটক কম আসছে। আমরা এবার মোটামুটি লক্ষাধিক পর্যটকদের বরণের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেডিকেল টিম রাখা হয়েছে। যাতে পর্যটকরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারেন। এ ছাড়াও আমরা সার্বক্ষণিক তদারকিতে রয়েছি। এবার কিন্তু নৌকা ভাড়া কিংবা স্পটে কোন অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায় নি। নদীতে পানি থাকায় মাত্র ২০ মিনিটে নৌকা যাওয়া আসা করতে পারে। ফলে নৌকার জন্যও তেমন লাইন ছিল না।