সুরমা খননে ধীর গতি, শহর রক্ষা বাঁধ কতদূর
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুলাই ২০২৩, ১২:১৫:৪৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সুরমা ঘিরেই সিলেটের জনজীবন। সুরমার তীরেই সিলেট নগরী। কালিঘাট, বন্দরবাজার, কাজিরবাজার, লামাকাজিসহ আবহমান কাল ধরে চলে আসা নামকরা সব বাজারে এই নদীর তীরের জমজমাট বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু ইদানীং অল্প বৃষ্টিতেই এসব বাজারে পানি উঠে যায়, বাজার ছাড়িয়ে জনপদে গড়ায় সেই পানির তাণ্ডব। তাছাড় গতবছর থেকে একটু বৃষ্টিতেই সিলেট নগরী ও আশপাশের জনপদ পানিবন্দী হওয়ায় সুরমা আবারও আলোচনায় আসে। জোরালোভাবে উঠে আসে সুরমা-কুশিয়ার খননের বিষয়টিও। অবশেষে জনদাবির মুখে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সদর ও বিশ^নাথ এই দুই উপজেলায় সুরমার ১৫ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু হয়। গত ২১ জানুয়ারি ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে লামাকাজি থেকে কুশিয়াঘাট পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকায় নদী খনন কাজের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। যা অর্ধেক
শেষ হয়েছে, পানি বেড়ে যাওয়ায় বাকি কাজ আর এবছর হবে না। তবে যতটুকু হয়েছে তার সুফল দেখা গেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে অনেকে অভিযোগ করেছেন অতিব গুরুত্বপূর্ণ এই কাজে ধীরগতি দৃশ্যমান। অপরদিকে গতবছর বন্যায় সিলেট নগরীতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর শহররক্ষা বাঁধের দাবি ওঠে। তবে সেই কাজ এখনও সমীক্ষায় আটকে আছে।
প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুরমা দেশের দীর্ঘতম নদী। ভারতের বরাক নদী সিলেটের জকিগঞ্জের অমলসীদে এসে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশ করে সুরমা সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। বাপা’র তথ্যমতে, সুরমার উৎসমুখই ভরাট হয়ে গেছে। যার ৩২ কিলোমিটারে জেগেছে ৩৫টি চর। ফলে নদী খননের বিষয়টি অতিপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পাশাপাশি গত বছরের মাঝামাঝিতে নগরীতে ভয়াবহ বন্যার পর ‘শহর রা বাঁধ’ নির্মাণের দাবি ওঠে। সেসময় জুনে প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফরকালে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী শহর রা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনার আশ^াস দেন। সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে শহর রা বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি সমীা চালাচ্ছে। সমীা শেষে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। অনেকেই দাবি করেছেন দ্রুত পুরো নদী খননের বিষয়টি হাতে নেওয়া হোক এবং শহররক্ষা বাঁধের কাজ মাঠপর্যায়ে শুরু হোক।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ দৈনিক জালালবাদকে বলেন, চলতি প্রকল্পের অধীনে সিলেট সদর ও বিশ^নাথ মিলে ১৫ কিলোমিটার নদী খননের কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে অর্ধেকটা খনন শেষ হয়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে খনন বন্ধ রয়েছে, আগামী বছর তা আবার শুরু হবে। তবে যতটুকু খনন হয়েছে তার একটা সুফল আমরা পেয়েছি। এবারের টানা বৃষ্টিতে যে পানি জমেছিল তা দ্রুত নেমে গিয়েছে। শহররক্ষা বাঁধের বিষয়টি নিয়ে সমীক্ষা চলছে বলে জানান তিনি।
অপর এক সূত্রে জানাগেছে সিলেট নগরীসহ জেলার ১৩ উপজেলাকে স্থায়ীভাবে বন্যামুক্ত রাখতে সুরমা ও কুশিয়ারা খনন, নদী ভাঙনরোধে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ‘সিলেট জেলার সুরমা-কুশিয়রা নদীর অববাহিকায় সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ নামের এ প্রকল্পটির সমীা শেষ হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড পূর্ব রিজিয়নের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এম শহিদুল ইসলাম একটি গণমাধ্যমে বলেন, প্রকল্পটির সমীা শেষ হয়েছে। জুলাই মাসের মধ্যেই ডিপিপি প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। তারপর একনেকে উঠবে।’