ওসমানী হাসপাতালে এডিসের লার্ভা !
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০২৩, ১:৫০:১২ অপরাহ্ন
সিলেটে বাড়ছে ডেঙ্গুরোগী, আক্রান্ত ৮৩ ছাড়ালো
স্টাফ রিপোর্টার : সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে মিলেছে ৪ জন ডেঙ্গুরোগী। এ নিয়ে চলতি জুলাই মাসের ৭ দিনে সিলেটে ২০ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া চলতি মওসুমে জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন মোট ৮৩ জন।
এদিকে সিলেটে ডেঙ্গুরোগী বৃদ্ধির সাথে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এডিস মশার লার্ভা। নগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের পর এবার খোদ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এডিসের লার্ভার সন্ধান পাওয়া গেছে। হাসপাতাল এলাকায় এডিসের লার্ভা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের। কারণ হাসপাতালে ৬ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধিন রয়েছেন। এডিসের লার্ভা ও ডেঙ্গু রোগী একসাথে হয়ে গেলে ডেঙ্গুর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরুর শঙ্কা তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল বৃহস্পতিবার নগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের দুইটি স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার পর এবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মিলেছে এডিস মশার লার্ভা। ওসমানী মেডিকেলের নির্মাণাধীন ক্যান্সার ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে বিপুল পরিমাণ এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিক এসব লার্ভা ধ্বংস করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ।
সিসিকের স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গেল জুন মাস থেকে নগরীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নগরীর ২৬নং ওয়ার্ডে ও শুক্রবার ওসমানী মেডিকেলে কলেজের নির্মাণাধিন ক্যান্সার হাসপাতালের মিলেছে লার্ভা। এছাড়া একই সময়ে নগরীর ১০নং ওয়ার্ডের কয়েকটি জায়গা এবং ৪নং ওয়ার্ডের কয়েকটি জায়গাও এডিসের লার্ভার সন্ধান পেয়েছে সিসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মচারীরা। তাৎক্ষনিকভাবে সেসব স্থানের লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে। পাশাপাশি নগরীর সম্ভাব্য স্থান সমূহে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে এই অভিযান আরো জোরদার করা হবে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবনে প্রচুর পরিমাণে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এসব লার্ভা তাৎক্ষণিক ধ্বংস করা হয়েছে। মেডিকেল হচ্ছে স্পর্শকাতর এলাকা। তাই এই জায়গাটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। আমার ধারণা ওসমানী মেডিকেলে আরো লার্ভা মিলতে পারে। তাই শনিবার আবারও ওসমানী মেডিকেল কলেজ এলাকায় এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে অভিযান হবে।
তিনি জানান, আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা বিভাগ ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। সম্ভাব্য অনেক স্থানে লার্ভা মিলছে। আরো কিছু স্থানে লার্ভা পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখেছি নগরীতে শতকরা ১০ ভাগ বাসা-বাড়ীতে লার্ভা পাওয়া যেতে পারে। এব্যাপারে নগরবাসীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাসা-বাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনা পরিস্কার রাখতে হবে। যে কোন মূল্যে ডেঙ্গুর কমিউনিটি ট্রান্সমিশনকে ঠেকাতে হবে। অন্যথায় পুরো নগরবাসী চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূইয়া দৈনিক জালালাবাদকে জানান, ক্যান্সার হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। তা সাথে সাথে ধ্বংস করা হয়েছে। নির্মাণাধিন ক্যান্সার হাসপাতাল সহ সকল ভবনের মূল দায়িত্বে রয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। তাদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিদের্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ওসমানী হাসপাতালে বর্তমানে ৬ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধিন রয়েছে। সম্প্রতি নগরীতে একাধিকবার জলাবদ্ধতাজনিত কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার পানি নামার সাথে সাথে মশার উপদ্রব বাড়ছে। এক্ষেত্রে এডিস মশার লার্ভা বৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিজ নিজ উদ্যোগে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন। এডিসের লার্ভার বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে রয়েছে। তবে সিলেটে ডেঙ্গুরোগী কিছুটা বেড়েছে। সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আতংকিত না হয়ে সতর্কতার সাথে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।