শাল্লায় হেলালের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের জট খুলছে না
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০২৩, ৭:৫৭:৪৩ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার সাতপাড়া বাজারে দু’পক্ষের টেঠাযুদ্ধে দু’জন নিহতের ঘটনায় শাল্লা থানায় দু’টি পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই দুটি মামলায় প্রায় শতাধিক লোককে আসামী করা হয়েছে। সাবেক ইউপি সদস্য নিহত হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মিনা বেগম বাদী হয়ে প্রথম মামলাটি দায়ের করেন। পরের মামলাটিতে নিহত হেলাল উদ্দিনের চাচাতো বোন মিনারা বেগম বাদী হয়েছেন। হেলাল উদ্দিন নিহতের ঘটনায় নানা জট রয়েছে বলে দাবী এলাকাবাসীর। এমনকি সংঘর্ষের ঘটনার দুই ঘন্টা পরও হেলাল উদ্দিনকে সুস্থ অবস্থায় রাস্তায় হাটতে দেখেছেন মর্মে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাই এই মৃত্যু নিয়ে রহস্যের জট খুলছে না। তবে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বুকে টেঠাবিদ্ধ হয়ে আজমিরিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই সংবাদটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই মিডিয়ার সামনে সাবেক এই ইউপি সদস্য নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাতাপাড়া বাজারে একটি বাঁশ-টিনের ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে ২৭ জুন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত কার্তিকপুর গ্রামের মজিবুর রহমান ও ইউছুফ-রিক্সন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলে এবং ঘটনাস্থলে সাবেক মেম্বার হাবিবুর রহমান টেঠাবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হন। এমনকি ওই সংঘর্ষে শাল্লা থানা পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক(এসআই) আহত হন। জখম অবস্থায় আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দুপুর ১২টার দিকে ডাক্তার হাবিবুর রহমানের মৃত্যু নিশ্চিত করার প্রায় দুই ঘন্টা পর রিক্সন গ্রুপের হেলালের মৃত্যুর খবর হঠাৎ প্রকাশ পায়। হেলাল উদ্দিন (২৫) খুনের বিষয়টি অনুসন্ধান করতে বেরিয়ে আসে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। যেখানে এই মৃত্যু নিয়ে অনেক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। সংঘর্ষের প্রত্যক্ষদর্শী থেকে শুরু করে এলাকার প্রত্যেকটি মানুষের কাছে হেলাল উদ্দিন খুনের বিষয়টি ধুম্রজালে পরিণত হয়েছে । তবে ইউসুফ, নিজাম ও রিকসন গ্রুফের ভয়ে এলাকার অনেকেই সঠিক তথ্য দিতে ভয় পাচ্ছে। রিকসন ও বিল্লাল, হাবিল, মেহেদী মিয়াগণকে বহন করা নৌকার মাঝি দিয়েছেন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। যার সকল প্রকার তথ্যাদির ভিডিও ও অডিও সরক্ষিত রয়েছে এ প্রতিবেদকের কাছে। এছাড়াও ঘটনার দিন আজমিরীগঞ্জ বাঁধ থেকে হেলাল উদ্দিনকে বহন করা নৌকার মাঝিও দিয়েছে আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। আজমিরীগঞ্জ বাঁধ থেকে হেলাল উদ্দিনকে বহন করা নৌকার মাঝিও কার্তিকপুর-মধুপুর হাটির তোফাজ্জল মিয়া জানান, ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় হেলালকে আজমিরীগঞ্জ বাঁধ থেকে তাঁর নৌকায় করে কার্তিকপুর এনেছেন। এবং ১ টা ২০ মিনিটে কার্তিকপুর বাঁধে হেলালকে নামিয়ে দেন তিনি। এসময় একই গ্রাম ও পাড়ার বাসিন্দা গোলাম রব্বানী নামের এক প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন। তবে হেলাল উদ্দিন খুনের ঘটনায় মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ২৭ জুন সংঘর্ষের দিন সকাল ১১ টায় ঘটনাস্থলে প্রথমে ধারালো রামদা দিয়ে মাথায় আঘাত করে মুজিবুর রহমান। পরে অন্যান্য আসামীরাও এলোপাতারী ভাবে কুপিয়ে জখম করে হেলালকে মাঠিতে ফেলে দেয়। এরপর তাজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে হেলালকে খুন করে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা সকল তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে গড়মিল পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য মতে হেলালকে সংঘর্ষের দুই ঘন্টা পরও জীবিত এবং সুস্থ অবস্থায় দেখতে পায়। প্রত্যক্ষদর্শী সাতপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী ও খালিয়াজুরী উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের সমীর সরকার জানান, ঘটনার দিন আমি বাজারেই ছিলাম, ঘটনার দেড়-দুই ঘন্টা পর (বৃষ্টি থামার পর) আমি কাচা বাজারে যাওয়ার পথে হেলালকে রাস্তায় দেখতে পাই এবং তাকে বাজারের দিকে যেতে নিষেধ করি। কিন্তু সে আমার কথা শুনেনি। ওই মুরাদপুরের সুনীল দাস জানিয়েছেন, তিনিও দুপুর একটা-দেড়টার দিকে আদিত্যপুর গ্রামের সামনে রাস্তায় হেলালকে হেটে যেতে দেখেছেন। অপরদিকে উপজেলার বলরামপুর গ্রামের পরেশ সরকারের ছেলে প্রনয় সরকারের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, ঘটনার দিন সাতপাড়া বাজারের মারামারির পর প্রায় দেড়টার দিকে কার্তিকপুরের ইউছুফ-নিজাম-রিক্সন গ্রুপের সাত-আট জন লোক অনেকটা জোর করে আমার নৌকা উঠে পড়ে এবং মুরাদপুর যেতে বলে। আমি মুরাদপুর গ্রামের উত্তর পাশে বাধে নৌকা লাগালে আমার নৌকা থেকে তিন-চার জন লোক নেমে যায়। রিক্সন আমার নৌকাতেই ছিল। তারা আমাকে মিলন বাজার যেতে বলে। ওই সময় আমি হেলালকে আমার নৌকার পাশেই আরেকটি লম্বা ধরনের ডিঙ্গি নৌকায় বসে থাকতে দেখেছি। হেলালের শরীরে কোনো বড় ধরনের আঘাত ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, কোনো আঘাত ছিল না, তাকে সুস্থ মনে হয়েছিল। এর প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট পরেই আমার নৌকায় বসা রিক্সন বলে হেলাল মারা গিয়েছে। হেলালের লাশ বহনকারী ¯পীডবোট চালক কান্দিগাঁও গ্রামের নুরুল আমিনের সাথে প্রতিবেদকের মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ঘটনার দিন বিকালে কার্তিকপুরের আমির মিয়ার ছেলে বিল্লাল আমাকে ফোন করে কার্তিকপুরের পশ্চিম পাশ থেকে রোগী আনার কথা বলে। আমি আমার বোট নিয়ে যাওয়ার পথে কার্তিকপুর গ্রাম থেকে দুইজন মহিলাকে নিয়ে হাওরের দিকে যাই। ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়েনের চৈতনপুরের হাওরে একটি লম্বা টাইপের বাঁশে চরাট করা নৌকা থেকে হেলালের লাশ আমার বোটে তুলা হয়। লাশের সাথে ওই দুইজন মহিলাও শাল্লা থানায় আসে, লাশের সাথে কোনো পুরুষ লোক আসনি। নৌকাটিতে কে কে ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তাদের নাম জানি না, তবে দেখলে চিনতে পারবেন। এব্যাপারে ৪নং শাল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুস সাত্তার মিয়া বলেন, মারামারির সময় পুলিশও ঘটনাস্থলে ছিল। খবর পেয়েই আমি সাতপাড়া বাজারে গিয়েছি এবং সাবেক মেম্বার হাবিবুর রহমানকে আমিও বুকে টেঠাবিদ্ধ দেখেছি, কিন্তু হেলাল সংঘর্ষ আহত হয়েছে তা দেখিনি বা কারো কাছে শুনিওনি। পরে বিকাল ৩টার দিকে শুনতে পাই হেলাল খুন হয়েছে। হেলালের খুনের বিষয়টি সন্দেহের। শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলামের সাথে সরাসরি কথা হলে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থ এখন কোনো কিছুই বলা সম্ভব নয়।