পিয়াইন নদে ডুবে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন শেষ আরশের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০২৩, ৮:০৮:৪৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : মো: আল ওয়াজ আরশ (১৫)। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র। তার স্বপ্ন ছিল পাইলট হবে। ডানা মেলে উড়ে বেড়াবে আকাশে। খুব কাছ থেকে মেঘ দেখবে। কিন্তু দুঃস্বপ্নের মতো একটি ঘটনায় সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের জাফলংয়ের পিয়াইন নদে নেমে স্রোতের টানে হারিয়ে যায় আরশ। দুই দিন পর গতকাল শনিবার সকাল ৭টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ পরিদর্শক (ট্রাফিক) বাবা মো. জাহিদুল হোসেন, স্কুলশিক্ষক মা সুরাইয়া আক্তার ও ছোট ভাই মো. আরীব উল পিয়াশের (১৩) সঙ্গে তিন দিনের জন্য সিলেটে বেড়াতে এসেছিল আরশ। তাদের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শিদলাই গ্রামে। মা-বাবার চাকরির সূত্রে বেড়ে উঠেছে গাজীপুরের টঙ্গীর মামার বাড়িতে। পরে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে ভাড়া বাসায় বসবাস করছিল। বাবা জাহিদুল হোসেন বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত।
নিজে পুলিশ সদস্য হওয়ায় প্রায়ই এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন জাহিদুল হোসেন। কিন্তু নিজের সঙ্গেই কখনো এমন ঘটনা ঘটবে কল্পনাতেও আনেননি তিনি। ছেলের প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতে কিছুতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলেন না। কথা বলার সময় কণ্ঠ ভারী হয়ে আসছিল।
ছেলেকে বাঁচাতে না পারার আক্ষেপভরা কণ্ঠে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জাহিদুল হোসেন বলেন, ‘কী থেকে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। শুধু “আব্বু..” বলে একটি চিৎকারের মতো কিছু একটা শুনেছি। এরপর ছেলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ছেলেকে স্রোতে তলিয়ে নিয়ে গেছে।’ জাহিদুল হোসেন বলেন, তিনি তখন পানিতে ছিলেন। আরশ পানিতে নেমে কাগজের কিছু একটা দিয়ে খেলছিল। সে সময় হঠাৎ এমন ঘটনা ঘটে গেছে। তিনি বলেন, আরশ কোরআন শরিফের ১২ পারা শেষ করেছিল। বাকিগুলো আগামী রোজার মধ্যে শেষ করবে জানিয়েছিল। তিনি ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
ছেলে পানির স্রোতে নিখোঁজের পর মা সুরাইয়া আক্তার নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। পুলিশ সদস্য বাবা ঘটনার পর বুঝতে পেরেছিলেন ছেলেকে আর জীবিত উদ্ধার সম্ভব নয়। তবে স্ত্রীকে সান্ত¡না দিচ্ছিলেন হয়তো ছেলেকে জীবিত পাওয়া যাবে। লাশ পাওয়ার পর স্ত্রীকে আর সান্ত¡না দেওয়ার ভাষা পাচ্ছেন না জাহিদুল। বন্ধুর মতো ভাইকে হারিয়ে চুপচাপ হয়ে গেছে আরীব উল পিয়াশও।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, পিয়াইন নদ থেকে উদ্ধার হওয়া কিশোরের মরদেহ সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই দাফন করার কথা রয়েছে।