হরহামেশা মিলছে বেওয়ারিশ লাশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০৫:০৩ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
শুধু সিলেট নগরেই নয়, প্রতিমাসে জেলার কোথাও না কোথাও বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া যায়। এসব লাশের অধিকাংশের শেষ পর্যন্ত পরিচয় জানা যায়না। ফলে অজ্ঞাত হিসেবে দাফন হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া লাশে আঘাতের ধরণ এবং ময়না তদন্ত রিপোর্ট মিলালে বেশির ভাগই হত্যাকাণ্ড বলে প্রতীয়মান হয়। বেওয়ারিশ লাশের পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য জানে না প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত দুইমাসে (মে-জুন) সিলেটে মিলেছে ৮টি বেওয়ারিশ লাশ। খোদ নগরীতে মাসে অন্তত ২ থেকে ৩টি লাশ উদ্ধার হয়। এ নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বেড়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, যারা হত্যাকাণ্ডে সঙ্গে জড়িত তারা নিজেরা দায় থেকে বাঁচতে বিকৃত করে এক এলাকার লাশ অন্য এলাকায় নিয়ে ফেলে। আবার কখনো লাশ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে।
এদিকে সিলেটে প্রতিনিয়তই নিখোঁজ হচ্ছে মানুষ। তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। আবার কারো সন্ধান পাওয়া গেলেও মিলছে মরদেহ। আবার এমন অনেক মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলোর কোনো পরিচয় মিলছে না। ফলে এসব মরদেহ বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে তা দাফন করা হচ্ছে।
শুধু যে নগরীতে মিলছে তা নয়। আবাসিক ভবন, হাসপাতালের সামনে কিংবা চত্বরে। রাস্তার পাশে, ধানক্ষেত ও নদীর পারে পাওয়া যাচ্ছে মৃতদেহ। সিলেট জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার দুর্গম এলাকা ও বেশ কিছু স্পট লাশের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব বেওয়ারিশ লাশের দুই একটির ওয়ারিশ বা পরিবার-পরিজন কিংবা পরিচয় মিললেও অধিকাংশের পরিচয় মেলেনি। বেওয়ারিশ লাশগুলোর শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া গতানুগতিক ও দায়সারা, নেই প্রযুক্তির ব্যবহার। তবে প্রশাসনের দাবি- বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লাশ বিকৃত ও ভবঘুরে হওয়ায় পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয় না। আবাসিক ভবন, হাসপাতালের সামনে কিংবা চত্বরে। রাস্তার পাশে ধানক্ষেত কিংবা নদীর পারে পাওয়া যাচ্ছে মৃতদেহ। এসব মরদেহ অনেকটি অর্ধগলিত লাশ। লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ ক্রমেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকার তথ্যমতে ও অসমর্থিত কয়েকটি সূত্র জানায়, গত ২৯ জুন ভোরে সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের চাঁনপুর জামে মসজিদের সামনে থেকে এক মহিলার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। অজ্ঞাতনামা ওই মহিলার অনুমান বয়সী ২৫-৩০ বছর।
২৪ জুন সকালে দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারের জলকরকান্দী গ্রামের রেল লাইনের উপর থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৩ মে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অজ্ঞাত এক মহিলা মারা যান।
এর আগে ৪ মে শিপন নামের জনৈক ব্যক্তি ওই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ৫ মে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অজ্ঞাত আরো এক মহিলা মারা যান। এর আগে ৪ মে ওই মহিলা সড়ক দূর্ঘটনায় আহত বলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একই দিন সকালে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের বরায়া চানপুরে ধান ক্ষেত থেকে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধ নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
৮ মে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের উত্তর কানিশাইল গ্রামের রাস্তার পাশ থেকে ওড়নায় প্যাঁচানো এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
৫ মে বিকেলে ওসমানীনগর উপজেলার সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পাশ থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে পুলিশ ওই ব্যক্তির পরিচয় না পেলেও একদিন পর তার পরিচয় পায়। সড়কের পাশ থেকে আবারও বজেন্দ্র শব্দকর (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বজেন্দ্র পেশায় রিকশাচালক ছিলেন। এরকম অনেক ঘটনার খবর গণমাধ্যমে আসছে।
প্রতিবছর শতাধিক হত্যা রহস্যের কিনারা হচ্ছে না। অপরাধীরা নানা দুর্বলতার সুযোগে পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন করে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধী ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একেবারে তৎপরতা নেই, তা বলা যাবে না। কিন্তু অধিকাংশ লাশের পরিচয় না মিলায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজটি জটিল হয়ে যায়।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ সূত্রে জানা গেছে, বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হলেও প্রতিটি মৃতদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট ধারণা মিলেছে। উদ্ধারকৃত বেওয়ারিশ লাশের বেশির ভাগই হত্যাকাণ্ডের শিকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই তৎপরতা যথেষ্ট নয়। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনোভাবেই বেওয়ারিশ লাশের দায় এড়াতে পারে না। তাদের দায়িত্ব হলো, তদন্তের মাধ্যমে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির মুখোমুখি করা।
এ ব্যাপারে ডিআইজি সিলেট রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (ইন্টেলিজেন্স এন্ড ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) মো. জেদান আল মুসা বলেন, প্রতিটি বেওয়ারিশ লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত হয়। সব লাশের ছবি, ফিঙ্গার সংরক্ষণ করা হয়। তবে তাতে তেমন কাজ হয়না। অধিকাংশ লাশের পরে আর পরিচয় পাওয়া মিলেনা।