ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে দানবের বিদায় ও জনতার বিজয় সন্নিকটে – সিলেটে তারুণ্যের সমাবেশে ফখরুল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুলাই ২০২৩, ৮:৪২:২১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পূণ্যভুমি সিলেটের মাটিতে তরুণদের আজকের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস প্রমাণ করেছে তারা অধিকার ফিরে পেতে ঐক্যবদ্ধ। তারা ভোটের অধিকার চায়, মেধার ভিত্তিতে চাকুরীর অধিকার চায়। নিরাপদে বেচে থাকার অধিকার চায়। আমরাই প্রথম গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ত করেছি। কারণ আজকের তরুণরাই আগামীর সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কারিগর। তরুণ প্রজন্মের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। এবার তরুণরা রাজপথে নেমে এসেছে, দানবের বিদায় ও জনতার বিজয় সান্নিকটে।
তিনি শনিবার বিকেলে বিএনপির ৩ অঙ্গ-সহযোগি সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল আয়োজিত ‘দেশ বাঁচাতে সিলেট বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। নগরীর সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ হলেও মাদ্রাসা ময়দান থেকে রিকাবীবাজার পয়েন্ট, চৌহাট্টা পয়েন্ট ও শাহজালাল মাজারের পেছনের গেইট সংলগ্ন পয়েন্ট লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এই জনস্রোত এক পর্যায়ে চৌহাট্টা পয়েন্ট ছাড়িয়ে আম্বরখানা পয়েন্ট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সমাবেশের শুরুতে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। যুবদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সিলেট বিভাগের ৪ জেলার লক্ষাধিক তরুণ অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, সরকার গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে ইচ্ছামতো দেশ পরিচালনা করবে। আর প্রতিবাদ করলে আমার সহযোদ্ধা ও দলীয় নেতাকর্মীদের খুন, গুম ও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। সিলেটের কৃতি সন্তান এম ইলিয়াস আলীসহ দেশে শত শত নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিজেদের কাছে ক্ষমতা রেখে যেনতেন নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়। তারা দেশটাকে তাদের বাবার সম্পত্তি মনে করে, আর ক্ষমতাকে মনে করে তাদের জমিদারী। দুর্নীতি আর লুটপাট করে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে খেয়ে দেয়ে তারা দেশবাসীকে এখন লোডশেডিং উন্নয়ন উপহার দিচ্ছে। কেবল বিদ্যুৎ নয়, সবক্ষেত্রেই লুটপাট চলছে। যে পদ্মাসেতু নির্মাণে ১০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন সেটির জন্য ২০ হাজার কেটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। দুর্নীতি করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকার কেবল রাস্তাঘাট বানাচ্ছে কিন্তু কোন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না। দেশে লাখ লাখ লোক বেকার। কৃষক ফসলের দাম পায় না। অথচ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। মানুষ খেতে পারছে না। আওয়ামী লীগ কথায় কথায় উন্নয়নের কথা বলে। অথচ উন্নয়নের নামে তারা লুটপাটে মত্ত। শতভাগ বিদ্যুতের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। সরকারি গবেষণা সংস্থাই বেসরকারি বিদ্যুত কেন্দ্রের সাথে চুক্তিকে অপচুক্তি ও লুটেরা মডেল বলে উল্লেখ করেছে। গত এক বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে বলে সরকারি সংস্থার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। আদতে গত দুই বছরে বিদ্যুত খাতে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। একবার নয়, বার বার প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামীলীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনো সম্ভব নয়। দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের লক্ষ্যেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালিন সরকার প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। এর বাইরে দেশে কোন নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবেনা। আসুন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাথা উচু করে দাঁড়াই। এবার তরুণরা রাজপথে নেমে এসেছে, দানবের বিদায় ও জনতার বিজয় সান্নিকটে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল ইসলাম রাজিব।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু আহমেদ আনসারীর পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সূচীত সমাবেশে সুবিধাবঞ্চিত তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে অনুভুতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন, ফারিহা জাহান আলিশা, সাদিয়া খানম রুহী। বক্তব্য রাখেন গুম হওয়া বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহিসনা রুশদীর লুনা, গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের বোন তাহসিনা শারমিন তামান্না ও গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা জুনেদের মা। বক্তব্য রাখেন সিলেটে পুলিশের গুলীতে দুই পা হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণকারী যুবদল নেতা খালেদুর রহমান খালেদ। কবিতা আবৃত্তি করেন সায়েম আহমেদ ঐশী, এম.এ চৌধুরী শাহান ও আরিফ উল্লাহ।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরুল ইসলাম নুরুল, যুবদলের কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সহ-সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জল, সিলেট জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মোমিন, মহানগর যুবদলের সভাপতি শাহনেওয়াজ বক্ত চৌধুরী তারেক, জেলা স্বেচ্ছাসেক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মির্জা মোঃ সম্রাট হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শাকিল মোর্শেদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আফসর খান, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষ ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী আহসান, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার প্রমূখ।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বাংলাদেশ থেকে শুধু ভোট চুরি হয়নি, নির্বাচন ব্যবস্থার ডাকাতি হয়ে গেছে। কারণ দেশ আজ হায়েনাদের কবলে। তরুণ সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসেবে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল তরুণ প্রজন্মের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশের ডাক দিয়েছিলাম। দেশব্যাপী এসব সমাবেশে তরুণ প্রজন্মের ঢল নেমেছে। যুব সমাজ তারুণ্যের উচ্ছাসে ফেটে পড়েছে। আমরা জিয়ার সৈনিক সেটা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। কারণ আমাদের নেতা শহীদ জিয়া মহান স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার। আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশে গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছেন। আপনাদের সিলেটের জামাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের ৩ কোটি ৭০ লক্ষ তরুণ ভোটারের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের রাজপথে নামিয়েছেন। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবোনা।