শান্তিগঞ্জে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত : আহত ৪০॥ আশঙ্কাজনক ২॥ আটক ৬
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০২৩, ১২:০৯:১৫ অপরাহ্ন
শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় মসজিদে দানকৃত একটি কাঁঠাল নিলামে তোলা ও দাম হাকাঁনো নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। এসময় উভয়পক্ষের আরও ৪০ জন আহত হয়েছেন। সোমবার (১০ জুলাই) বেলা ১১টায় উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নিহতরা হলেন, হাসনাবাদ গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে নুরুল হক (৫০), আব্দুস সুফির ছেলে বাবুল মিয়া (৫৫) ও আব্দুল বাসিরের ছেলে শাহজাহান মিয়া (৪৫)। আহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
সংঘর্ষে আহত ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাত ১০ টা পর্যন্ত ঘটনায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সংঘর্ষের কারণে পুরো হাসনাবাদ গ্রাম এখন পুরুষশুন্য। গ্রেফতারের ভয়ে উভয়পক্ষের অনেকেই আত্মীয় স্বজনের বাসা-বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। আহতদের অনেকেই আত্মগোপনে থেকে চিকিৎসাগ্রহণ করছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হাসনাবাদ গ্রামে দীন ইসলাম ও মালদার মেম্বারের পক্ষের মাঝে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। চলছে মামলা মোকদ্দমা। সম্প্রতি উপেজলা চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ উপজেলার এবং ইউনিয়নের স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে শালিশ বৈঠকে দীর্ঘদিনের পুরনো বিরোধ মীমাংসা হয়।
গত শুক্রবার বাদ জুমআ হাসনাবাদ গ্রামের মসজিদে এক ব্যক্তি একটি কাঁঠাল দান করেন। গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে এই কাঁঠালটি নিলামে তোলা হয় এবং দাম হাকাঁনো হয়। এতে গ্রামের দীন ইসলামের পক্ষের একজন দামের কথা শুনা যাচ্ছে না বলে আওয়াজ তুললে প্রতিপক্ষ মালদার মেম্বারের পক্ষের সুনু মিয়া ও জুনাব আলী গংরা বলে উঠেন মসজিদের ভেতরে অবস্থানকারী সবাই শুনলেও তোমরা কেন শুনতে পাওনি। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাাকটি হয়। এ নিয়ে গত ৩/৪ দিন থেকে দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছি। বিষয়টির সমাধান করতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাশর্^বর্তী গ্রামের শালিসব্যক্তিগণ উভয়পক্ষেল সাথে যোগাযোগ করেন।
রোববার রাতে এ নিয়ে হঠাৎ দু’পক্ষের উত্তেজনা বিরাজ করলে চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়রা গিয়ে দুইপক্ষকে মারামারি না করার অনুরোধ করেন।
এদিকে কোন রকম রাত পার করে সোমবার সকালে ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি সমাধান করতে হাসনাবাদ গ্রামে ছুটে যান। দুই পক্ষের মুরব্বীদের বুঝিয়ে শালিস মীমাংসা সমাধানের আশ^াস দিয়ে সংঘর্ষে না জড়ানোর অনুরোধ করেন। দুই পক্ষ তখন সংঘর্ষ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
কিন্তু চেয়ারম্যানসহ শালিসগণ চলে যাওয়ার পরপরই দীন ইসলামের লোকজনের সঙ্গে প্রতিপক্ষ মালদার মেম্বারের পক্ষের সুনু মিয়া ও জুনাব আলীর লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এতে দীন ইসলামের পক্ষের বাবুল মিয়া ও নুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং মালদার মেম্বারের গোষ্টীর সুনু মিয়া ও জনাব আলী গংদের পক্ষে মো. শাহজাহান মিয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট নেয়ার পথে কৈতক হাসপাতালের সামনে রাস্তায় মারা যান। এতে উভয়পক্ষের ৪০ জন আহত হন। তবে তাৎক্ষণিক আহতের নাম ও পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে জয়কলস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বাছিত সুজন জানান, গ্রামের দুই পক্ষের মাঝে কয়েকদিন থেকে উত্তেজনা চলে আসছিলো। রোববার রাতে এবং সোমবার ভোরে হাসনাবাদ গ্রামে গিয়ে উভয়পক্ষের লোকজনের সাথে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করে কথা বলেছি। উভয়পক্ষের লোকজন আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে কোন পক্ষই মারামরিতে যাবেন না। এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের শান্ত করে উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে আমি চলে বাসার পর শুনতে পাই উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। একটি কাঁঠাল নিয়ে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা খুবই দুঃখজনক।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে উভয় পক্ষের ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। কোন পক্ষ এখনো অভিযোগ দেয়নি। তবে সংঘর্ষে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।