অপঘাত-অপমৃত্যু প্রসঙ্গে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুলাই ২০২৩, ১২:৩০:৩৯ অপরাহ্ন
অপঘাত ও অপমৃত্যু যেনো লাগামহীন হয়ে ওঠেছে এদেশে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার দিকে দৃষ্টি দিলেই এর এক ভয়াল চিত্র লক্ষ্য করা যায়। সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে পর্যটনে গিয়ে মৃত্যু, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ও বজ্রপাতে মৃত্যু, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু, সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধ পথে বিদেশ যেতে প্রাণহানি, গ্রামগঞ্জে মারামারি করে ও রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষে মৃত্যু যেনো এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে ওঠেছে এদেশে। অপমৃত্যুর সংখ্যা যখন ক্রমশ: বাড়ছে তখন ডেঙ্গু রোগে প্রাণহানি শংকার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যুকে বিভিন্ন প্রচলিত ও স্বাভাবিক রোগে মৃত্যুর সাথে তুলনা করা যায় না। এটাও এক ধরনের বিপদ বা বিপত্তি হয়ে দেখা দিয়েছে বর্তমান সময়ে।
জানা গেছে, চলতি মাসের ১৪ দিনে ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে এই মারাত্মক রোগে। ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ ঢাকায়ই বেশী। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে এমন অভিমত চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের। আর ঢাকায় মশার প্রকোপ অন্য যে কোন শহর-নগরের চেয়ে বেশী। দেশের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় জনৈক ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর আলমের একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে অপমৃত্যু নিয়ে। এতে বলা হয়েছে, ‘চারদিকে এতো এতো অপমৃত্যু সত্যি খুব কষ্টের, যা আমাদের নিজের পরিবারের উপরে না আসলে কেউ বুঝি না এর ভয়াবহতা কতোটা। সম্প্রতি মধুপুর-জামালপুর সড়কে অটোরিকশা ও ট্রাকের সংঘর্ষে হারিয়েছি আমার ৯ বছরের ভাতিজাকে, তবে ৫ বছর বয়সী ছোট ভাই মাথায় ২৯ টা সেলাই নিয়ে এবং মা মাল্টিপল ইনজুরি নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আমরা দৈনন্দিন জীবনে একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে অনেক অনাকাংখিত দুর্ঘটনা এড়াতে পারি। আমাদের প্রতিদিনের জন্য খুব সাধারণ নিরাপত্তা সচেতনতা নিয়ে কাজ করতে চাই এবং তা শুরু করবো আমার গ্রাম থেকেই। ধীরে ধীরে যা পাশাপাশি সব গ্রামে ছড়িয়ে পড়বে। ব্যাপারগুলি হবে খুবই সাধারণ, যা আমরা সবাই জানি। কিন্তু হয়তো জানি না বা ভুলে যাই। যেগুলো প্রতি সপ্তাহে বা মাসে একবার করে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। যেমন তরকারি কাটার পর দা বা বটি নিরাপদে রাখা, ভেজা হাতে ইলেক্ট্রিক সুইচ বন্ধ না করা, বাড়িতে ছোট বাচ্চা কাচ্চা থাকলে অরক্ষিত সুইচগুলো ট্যাপ দিয়ে মুড়িয়ে রাখা, পুকুর বা জলাধারের কাছে শিশু ও সাঁতার না-জানাদের যেতে না দেয়া, অটোরিকশা বা সিএনজিতে ওঠলে সাবধানে চালাতে বলা, মোটর সাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ইত্যাদি। প্রথমে গ্রামের স্কুলগুলোতে কথা বলবো যেখানে শিক্ষকগণ এসব সাধারণ সচেতনতার বিষয় শিক্ষার্থীদের জানাবেন, যেসব শিক্ষার্থী বাড়িতে গিয়ে এসব বলবে। মাদ্রাসা ও মসজিদেও প্রচারণা চালাবো। প্রত্যেকটা প্রতিটি অফিসে বা কোম্পানী সেফটি অফিসার থাকে, যার দায়িত্ব সব ঠিকঠাক চলছে কি-না, তা নিশ্চিত করা, একইভাবে গ্রামের সচেতন মানুষদের আমি সেফটি অফিসার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
উপরোক্ত লেখাটি সুপরিচিত লেখক নন অথচ সমাজ সচেতন একজন মানুষের লেখা। বর্তমানে যে হারে সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন অপঘাত ও অপমৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে এ অবস্থায় উপরোক্ত জাহাঙ্গীর আলমের আকুতি ও আহবান যে কারোর মনে দাগ কাটার মতো। এভাবেই শহর ও গ্রামাঞ্চলে সবাই সচেতন হয়ে ওঠলে বর্তমানে অপঘাত ও অপমৃত্যুর এই তান্ডব বা জোয়ার অনেকটাই রোধ করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।