ভেজালের খপ্পর থেকে রেহাই নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০২৩, ১২:৩০:২১ অপরাহ্ন
এক সিমেন্ট ব্যবসায়ী সিমেন্টের সাথে বালি মিশিয়ে অর্থাৎ ভেজাল সিমেন্ট বিক্রি করে বিপুল অর্থের মালিক হন। এক পর্যায়ে তিনি বিপুল অর্থ ব্যয়ে একটি দোতলা বাড়ি ক্রয় করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেই বাড়িতে গিয়ে গিয়ে উঠেন। একদিন তিনি যখন সিমেন্টে ভেজাল মেশাচ্ছিলেন বিক্রির জন্য, তখন হঠাৎ খবর আসে, তার দোতলা বাসাটি ভেঙ্গে পড়েছে। সেই বাড়ির ধ্বংসস্তুুপের নীচে চাপা পড়ে মারা গেছে তার স্ত্রী সন্তান সহ পরিবারের সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা নিরীক্ষায় জানা যায়, বাড়িটি ভেজাল সিমেন্টে তৈরী করায় এমনটি ঘটেছে। আর এই বাড়ি তৈরীর সিমেন্ট কেনা হয়েছিলো ঐ ভেজাল সিমেন্ট ব্যবসায়ীর দোকান থেকেই।
উপরোক্ত ঘটনাটি একটি চক্ষু উম্মীলনকারী ও সচেতনতা সৃষ্টিকারী ঘটনা। বলা বাহুল্য, বর্তমানে বাংলাদেশ ভেজাল খাদ্যসামগ্রীসহ ভেজাল সামগ্রীতে সয়লাব। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, যারা বাড়তি মুনাফার লোভে খাদ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন সামগ্রীতে রাসায়নিক পদার্থ ও ভেজাল মেশাচ্ছেন, তারা যদি একবার ভাবেন যে, ঘুরে ফিরে এসব সামগ্রী তাকে এবং তার পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্টজনদেরও ব্যবহার করতে হচ্ছে বা হবে, তবে তিনি এ ধরণের জঘন্য কাজ করার আগে অন্তত একবারও চিন্তা ভাবনা করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। বর্তমানে মাছ ও তরিতরকারী থেকে শুরু করে মশলাপাতি ও তেল-ঘি সবকিছুতেই মেশানো হচ্ছে ভেজাল। মাছে ও ফলমূলে ব্যবহার করা হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিন কার্বাইডের মতো রাসায়নিক পদার্থ।
গুঁড়ো মশলায় মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর টেক্সটাইলের রং। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব বিষাক্ত রাসায়নিক মানবদেহে ক্যান্সারসহ মারাত্মক রোগব্যাধির কারণ হতে পারে। দেশে ইদানিং যে হারে ক্যান্সারের ভয়াবহতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এতে অনেকেই এজন্য ভেজাল খাদ্যসামগ্রীকে দায়ী করছেন। শুধু ক্যান্সার নয়, ইদানিং হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও চর্মরোগের বিস্তারের জন্যও অনেকে এই খাদ্যে ভেজাল বিশেষভাবে দায়ী বলে মনে করেন। খাদ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রীতে ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিকের মিশ্রনের কুফল থেকে এদেশের ধনী দরিদ্র কেউই রেহাই পাচ্ছেন না।
অতীতে এদেশের বুদ্ধিজীবীদের কথায় কথায় রাজপথে নামতে দেখা গেলেও বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা দুর্নীতি ও ভেজালের বিরুদ্ধে তাদের একটিবারও রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। দেখা যায়নি এ ব্যাপারে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার হতে কিংবা একটি বিবৃতি দিতে। সচেতন জনগণের এসব কথিত বুদ্ধিজীবীদের এখন ধিক্কার জানানো ছাড়া আর কিছুই করার নেই। যা-ই হোক, আমরা হতাশাবাদী নই। আশা করি এদেশের কোন ব্যবসায়ী, উৎপাদক বা আমদানীকারকই চাইবে না ভেজাল খাদ্যদ্রব্য খেয়ে কিংবা ব্যবহার করে সে নিজে বা তার স্ত্রী সন্তানরা মারা যাক।
উপরোক্ত ভেজাল সিমেন্ট ব্যবসায়ীর ঘটনার মতো ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা শীঘ্রই সচেতন হয়ে উঠবে, বিরত হবে এসব জঘন্য অপকর্ম থেকে। আর এভাবে এক সময় ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বিদায় নেবে এদেশের খাদ্যদ্রব্যসহ অন্যান্য সামগ্রী থেকে, এ প্রত্যাশা আমাদের।