ফুটপাত ও রাস্তা দখল প্রসঙ্গে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুলাই ২০২৩, ১২:৩০:৪১ অপরাহ্ন
গতকাল দৈনিক জালালাবাদ-এ ‘নগরে ফিরেছে যানজট, বেড়েছে দুর্ভোগ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিন থেকে নগরীতে যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন বেলা ১১ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এছাড়া নগরীর ভেতরে দিনের বেলা মালবাহী ট্রাক ঢুকে পড়তে দেখা গেছে। এতে যানজট আরো প্রকট হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, নগরীর অধিকাংশ ব্যস্ত রাস্তার দুই পাশ এখন হকারদের দখলে। হকাররা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি লোকজনের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায়ই হকাররা ফুটপাতে বসা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে দেখা যাচ্ছে। ফুটপাতকে অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করতে বা রাখতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ফুটপাত ও রাস্তায় হকারদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন ফলমূলের মৌসুম হওয়ায় রাস্তার দুই পাশে ফলমূল বিক্রেতাদের অসংখ্য ভ্যানগাড়ির সারি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নগরীর কেন্দ্রস্থল বন্দর বাজারের বিভিন্ন রাস্তার পাশে এ ধরনের শতাধিক ভ্যানগাড়িকে রাস্তার একটি বড়ো অংশ দখল করে বেচাকেনা করতে দেখা যাচ্ছে। এতে পথচারীদের চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।
ইতোপূর্বে বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর যানজট নিরসনে নানা উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। এছাড়া ফুটপাত ও রাস্তার দুই পাশ অবৈধ দখল থেকে মুক্ত রাখতে প্রায়ই উদ্যোগী হতে দেখা যেতো। কিন্তু বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনে একটি ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’ চলার কারণে এ ধরনের উদ্যোগ ও তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সিটি কর্তৃপক্ষকে অনেকটা অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা প্রদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে এক্ষেত্রে। ফলে গোটা সিলেট নগরী জুড়ে এক ধরনের বিশৃংখল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অনেকটা অভিভাবকহীন অবস্থা নগরীর।
একথা অনস্বীকার্য যে, নানা উদ্যোগ সত্বেও বিগত বছরগুলোতে সিলেট নগরীর দীর্ঘদিনের ফুটপাত দখল ও যানজট সমস্যা দূর করা যায়নি। বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এসব সমস্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হলেও দূর হয়নি। এমনকি হকারদের জন্য আলাদা মার্কেট স্থাপন সত্বেও তাদের ফুটপাত ও রাস্তার একাংশ দখল বন্ধ করা যায়নি। এক্ষেত্রে যে বিশেষ পরিকল্পনা ও উদ্যোগের প্রয়োজন ছিলো, তা করা হয়নি এমন অভিমত সচেতন মহলের।
একথা সত্য যে, ফুটপাতে যারা নানা পণ্য বিক্রি করেন তাদের পক্ষে অনেকটা কম দামে পণ্য সামগ্রী বিক্রি করা সম্ভব। কারণ তাদের দোকান ভাড়া সহ অনেক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় করতে হয় না। এতে গ্রাহক ক্রেতারা অনেক কম দামে পণ্য সামগ্রী ক্রয় করতে সক্ষম হন। এই সুযোগ তারা হাতছাড়া করতে চান না। তাই নিজেদের চলাচলের অসুবিধা সত্বেও তারা অনেকেই ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করে থাকেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, একটি বিভাগীয় নগরী এভাবে চলতে পারে না। তীব্র যানজট ও ফুটপাত জুড়ে অবৈধ দখল ঐতিহ্যবাহী পর্যটন নগরী সিলেটের জন্য অত্যন্ত বেমানান। সিলেটের বাইরে থেকে অনেক পর্যটক ও দর্শনার্থী ইতোমধ্যে এ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। এতে দেশজুড়ে সিলেট নগরীর ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে নগরীর জেল রোড থেকে পূর্ব জিন্দাবাজার, বন্দর বাজার থেকে চৌহাট্টা, মিরবক্সটুলা থেকে চৌহাট্টা মোড়, আম্বরখানা থেকে চৌহাট্টা, রিকাবীবাজার থেকে লামাবাজার, বন্দরবাজার থেকে তালতলা, কাজিরবাজার, আম্বরখানা থেকে মিয়া ফাজিলচিস্ত, নাইওরপুল এলাকা, মিরাবাজার থেকে রায়নগর, শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাট ও মেন্দিবাগ এবং হুমায়ুন রশিদ চত্বর পর্যন্ত রাস্তায় কম বেশী যানজট লেগেই থাকতে দেখা যাচ্ছে। আর এর মূল কারণ ফুটপাতসহ রাস্তার একাংশ দখল এবং রাস্তার পাশে অবৈধ পার্কিং। রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং না থাকায় রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করতে দেখা যাচ্ছে। সমগ্র নগরী জুড়ে এ অবস্থা লক্ষণীয়।
সিটি কর্পোরেশন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহের উচিত অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি ও মনোযোগ দেয়া। অন্যথায় বিভাগীয় নগরী সিলেট অচিরেই একটি স্থবির এবং বিশৃংখল ও নৈরাজ্যকর নগরীতে পরিণত হবে, এমন অভিমত সচেতন মহলের।