উন্নয়নের পথে এশিয়া, আমরা কোথায়?
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুলাই ২০২৩, ১২:৩০:৪৩ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘প্রবৃদ্ধির ধারায় এশিয়া’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল এশীয় অঞ্চলে চলতি বছর প্রবৃদ্ধির সূচক গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার ঘাটতি থাকার পরও ব্যয় ও বিনিয়োগের হার ছিলো সন্তোষজনক। শক্তিশালী হয়েছে পর্যটন খাতও, যা জিডিপি বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করেছে। সম্প্রতি এমনটাই দাবি করা হয়েছে এডিবি’র প্রতিবেদনে।
উন্নয়নশীল এশীয় অঞ্চলে মূল্যস্ফীতি কমে আসার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে চলতি বছরে। আগামী বছর মূল্যস্ফীতি আরো কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। বিশেষভাবে খাদ্য ও জ্বালানীর দামও কমে এসেছে ইতোমধ্যেই। এতে আরো বলা হয়েছে, মূলত: মূল্যস্ফীতির কারণেই গৃহস্থালির ব্যয় সংকুচিত করে আনা হয়েছিলো। দরিদ্র মানুষের জীবনযাপন হয়ে ওঠেছিলো কঠিন। তবে ক্রমেই পরিস্থিতি মহামারিপুর্ব সময়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা আশাব্যঞ্জক। এপ্রিলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে চলতি বছর মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস ৪ দশমিক ২ শতাংশে স্থির করা হয়েছিলো। তবে বর্তমানে প্রতিবেদনে তা ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ধরা হয়েছে।
এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যখন এভাবে মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে, কমছে খাদ্যদ্রব্য ও জ্বালানীর দাম তখন বাংলাদেশে খাদ্যদ্রব্যসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি দেশে একটি শীর্ষ দৈনিকে ‘১১ বছর পর সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত মে মাসে সার্বিকভাবে গড় মূল্যস্ফীতি ছিলো ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর আগে ২০১২ সালের মার্চে তা ছিলো ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। গত এক দশকের বেশী সময়ের মধ্যে গত মে মাসের মতো মূল্যস্ফীতির এতো চাপে পড়েনি সাধারণ মানুষ। গত মাসে সার্বিকভাবে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা গত ১৩৪ মাস বা ১১ বছর ২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এটা গত জুন মাসের খবর। গত মাস/দুই মাসে এ অবস্থার কোন অগ্রগতি হয়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রে অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে, এমন অভিমত অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের।
সরকারী হিসাবে বাংলাদেশে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের মতো বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা অনেক বেশী, এমনকি তা ২০/২৫ শতাংশ হতে পারে, এমন অভিমত অর্থনীতিবিদদের। বর্তমান ডলার সংকট মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে ইন্ধন যোগাচ্ছে। কারণ ডলারের বিপরীতে টাকার মান অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় বাজারে পণ্যের দাম বিশেষভাবে আমদানি পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংকট তথা ঘন ঘন লোডশেডিং পণ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এতে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ছে। আর এর চাপটুকু অনুভূত হচ্ছে সীমিত আয়ের ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে। বাংলাদেশ খাদ্যপণ্যসহ অধিকাংশ পণ্য দেশের বাইরে থেকে বিশেষভাবে ভারত থেকে আমদানি করে। বাণিজ্যচুক্তি ও বাণিজ্যিক ভারসাম্য না থাকায় বেনিয়া ভারত বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে জিম্মি করে আর্থিক ও অন্যান্য ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। হঠাৎ করেই পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়। দেশে এখন খাদ্য সংকট। কিন্তু এ অবস্থায় ভারত খাদ্যপণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে পেঁয়াজ নিয়ে তারা একই খেলা খেলেছে। যার ফলে এদেশে পেঁয়াজের কেজি দুইশ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এজন্য শুধু ভারত নয়, এদেশের ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ অসৎ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাও দায়ী। দীর্ঘদিন ধরে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর বাংলাদেশকে হাজার হাজার মেট্রিক টন চাল ও গম আমদানি করতে হচ্ছে ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে। বিষয়টি যুগপৎ বিস্ময়কর ও হতাশাব্যঞ্জক।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম মহামারিপূর্ণ সময়ের দামের কাছাকাছি। ক্রমশঃ স্বস্তি ফিরে আসছে মার্কেটে। কিন্তু বাংলাদেশে এর উল্টো চিত্র। জ্বালানী তেল কিনতে পারছে না সরকার। ফলে প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। এতে ব্যবসা বাণিজ্যসহ দৈনন্দিন জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। জাতীয় নির্বাচন আসছে। এসবের বিরূপ ও নেতিবাচক প্রভাব ও পড়তে পারে দেশের অর্থনীতি বিশেষভাবে দ্রব্যমূল্যের ওপর। এ অবস্থায় দৃঢ়তা ও দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশ চরম সংকট এমনকি দুর্ভিক্ষাবস্থার দিকে ধাবিত হতে পারে। এ বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারক উর্ধ্বতন মহলের সুদৃষ্টি ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।