রেজিস্টারি মাঠে ফের জনসভার অনুমতি না দেয়ায় সিলেটবাসী গভীরভাবে উদ্বিগ্ন : ফখরুল ইসলাম
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুলাই ২০২৩, ৫:৩৫:২৭ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেছেন, দেশ জাতি আজ চরম ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। জাতির এই কঠিন সময়ে জামায়াত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী নিয়ে রাজপথে রয়েছে। নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ জামায়াত নেতৃবৃন্দ ও কারান্তরীণ আলেম-উলামাদের মুক্তি, নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতি রোধ, ঘন ঘন লোডশেডিং, দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও জ¦ালানীর মূল্যবৃদ্ধির ফলে নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ, বিদেশে পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা ও পাচারকারীদের শাস্তি প্রদান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে সাংবাদিক দমন পীড়ন বন্ধ ও বন্ধ করে দেয়া ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া সমূহ খুলে দেয়াসহ জনসংশ্লিষ্ট ১০ দফা দাবীতে পুলিশ কর্তৃক ২য় বারের মতো জামায়াতের জনসভায় অনুমতি না দেয়ার ঘটনায় সিলেটবাসী বিস্মিত। এর মাধ্যমে আরেকবার প্রমাণ হলো দেশে নাগরিক অধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নেই বললেই চলে। এর মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন একদিকে তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। অপরদিকে তারা যে কর্তৃত্ববাদী সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে বিরোধী মত প্রকাশে বাধার সৃষ্টি করছেন তা প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর বন্দরবাজারস্থ মহানগর জামায়াত কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। শুক্রবার রেজিস্টারি মাঠে জামায়াত ঘোষিত শান্তিপূর্ণ জনসভায় স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক ২য় বারের মতো অনুমতি না দেয়ার প্রেক্ষিতে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে উক্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিলেটে কর্মরত বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা সোহেল আহমদ, সিলেট জেলা দক্ষিণের নায়েবে আমীর ও সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, জেলা উত্তরের সেক্রেটারী ও সাবেক জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সিলেট মহানগর সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব ও ড. নুরুল ইসলাম বাবুল, সিলেট জেলা দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী ও সাবেক গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজ নজমুল ইসলাম প্রমূখ।
লিখিত বক্তব্যে মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ১মবার গত ১৫ জুলাই শনিবার বেলা ২টায় সিলেট মহানগর জামায়াতের শান্তিপূর্ণ জনসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একদিন আগে শুক্রবার রাতে এসএমপির পক্ষ থেকে জনসভার অনুমতি দেয়া হয়নি বলে আমাদেরকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ১৫ জুলাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরা হয় এবং ২১ জুলাই শুক্রবার জনসভার পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করা হয়। পুনরায় এসএমপি কমিশনার বরাবরে ২১ জুলাইয়ের জনসভার ব্যাপারে অনুমতি ও সহযোগিতা কামনা করে আবেদন করা হয়। ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার আমাদের নগর জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং জনসভা সফলে অনুমতি সহযোগিতার জন্য আবারো অনুরোধ করেন। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় যে, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত আমাদের জনসভার অনুমতি দেয়া হয়নি। ইতোমধ্যে আগামীকাল ২২ জুলাই চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানেও জামায়াতের জনসভার অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু বার বার কোন কারণে আমাদের জনসভার অনুমতি দেয়া হয়নি সেই বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়। জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে পুলিশ প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে সিলেটবাসী বিস্মিত, হতবাক এবং জনগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট মহানগর আমীর আরো বলেন, জামায়াত দেশ জাতির কঠিন সময়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করে আসছে। কিন্তু আদর্শিক কারণে সরকার ও প্রশাসন আমাদের উপর জুলুম নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৫ জুলাইয়ের রেজিস্টারি মাঠের জনসভা উপলক্ষে আগের দিন শুক্রবার (১৪ জুলাই) কেন্দ্রীয় ও সিলেট জামায়াত নেতৃবৃন্দ মাঠ পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে আমাদের ৭জন নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়। শুধু তাই নয়, তাদেরকে পুরনো একটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। নিরীহ ও নিরপরাধ নেতাকর্মীদের রিমান্ড আবেদনের মাধ্যমে তাদের মৌলিক মানবাধিকারকে ভুলুন্ঠিত করা হয়। আমরা মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্থানীয় প্রশাসনের এমন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আটককৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবী করছি। এই সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদ করলেই দমন পীড়ন চালানো যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে একজন সংসদ সদস্য প্রার্থীর উপর নগ্ন হামলা এবং বিগত একতরফা সিটি নির্বাচনে সরকারী দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে প্রশাসনের ভুমিকা দেখে অনুমান করা যায় এই সরকারের অধীনে কেমন নির্বাচন হবে। একই সাথে সারাদেশে বিরোধী দলের চলমান আন্দোলন কর্মসূচীতে বাধা, হামলা-মামলা প্রমাণ করে সরকার তাদের ফ্যাসিবাদী আচরণ ত্যাগ করতে পারেনি। একটি দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে জামায়াত সরকারের এসব কর্মকান্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ না করে বসে থাকতে পারেনা।
মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম আরো বলেন, দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মানুষ দিনে রাতে অর্ধেক সময়ও বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা। বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানার উৎপাদন কমে এসেছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি থমকে আছে। অপরদিকে দফায় দফায় তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি করে জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের মধে ত্রাহি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে জনগণের নিকট জবাবদিহীমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এই মুহুর্তে সময়ের অনিবার্য দাবী। জনগণ বিনাভোটের এমপি ও দিনের পরিবর্তে রাতের ভোটের সরকারকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণের ভোটের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ ও জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। জামায়াত আইনের প্রতি সর্বদাই শ্রদ্ধাশীল। নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বিশ^াসী। আইন ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে স্থানীয় প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ভবিষ্যতে আমাদের যে কোন শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশের অনুমতি প্রদান ও সহযোগিতা করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। আবারো আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা প্রশাসনের অনুমতিপ্রাপ্ত হয়ে শীঘ্রই শান্তিপূর্ণ জনসভা করতে পারবো বলে আশাবাদী। বিজ্ঞপ্তি