চোখ জুড়ানো বৃক্ষমেলা জমে উঠেনি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জুলাই ২০২৩, ১২:০৫:৪১ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
সিলেটে চলছে বিভাগীয় বৃক্ষ মেলা। সবুজায়নের লক্ষ্যেই সবুজ বৃক্ষের এই মেলা। নগরী চৌহাট্টাস্থ সরকারী আলিয়া মাদরাসা মাঠে মেলা চলবে পনেরো দিন। মেলায় ফুল, ফল, বনজ আর ওষধি গাছের চারা দিয়ে সাজানো হয়েছে সারিসারি স্টল। রয়েছে বিদেশী নানা প্রজাতির গাছের চারা।
শহরের বাসা-বাড়িতে অল্প জায়গায় দ্রুত ফল পাওয়া যায় বলে বিদেশী জাতের ফল গাছের কদর দিন দিন বাড়ছে। তাই বাসার ছাদে কিংবা বারান্দায় যারা সবুজের ছোঁয়া পেতে চান তাদের কথা মাথায় রেখে স্টলে আনা হয়েছে টব বা লতা বিশিষ্ট গাছের চারা।
এদিকে শেষ সময়েও জমে উঠেনি বিভাগীয় এই বৃক্ষ মেলা। এ কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের প্রচার প্রচারণায় ঘাটতি রয়েছে স্টল মালিকরা বলছেন। নার্সারি সমিতি ও বন বিভাগ থেকে কোনরকমের প্রচার করা হচ্ছে না বলে তার জানান।
‘গাছ লাগিয়ে যত্ন কির, সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি’ এই শ্লোগানে এইবারের বৃক্ষ মেলা শুরু হয়েছে গত ১৩ জুলাই সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসা মাঠে। এই মেলা চলবে আগামী ২৭ জুলাই পর্যন্ত। সিলেট বন বিভাগের আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ১৫ দিন ব্যাপী বৃক্ষরোপন অভিযান ও বিভাগীয় বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো: শাহাব উদ্দিন।
এবারের মেলায় সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা থেকে মোট ২৩ নার্সারী অংশ গ্রহন করেছে। মেলায় রয়েছে ৫০টির মতো স্টল। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নার্সারি মালিকেরা বৈচিত্রময় দেশী-বিদেশী ফলজ, বনজ, ওষধি ও শোভাবর্ধনকারী গাছের চারা নিয়ে মেলায় এসেছেন। স্টল সাজিয়েছেন ক্রেতাদের চাহিদার আলোকেই। কোন ক্রেতা যাতে মেলা থেকে হতাশ হয়ে ফেরত না যান সেজন্য বাড়তি আয়োজনের কথাও জানালেন তারা। স্টলে রেখেছেন ক্রেতাদের চাহিদা সম্পন্ন সব ধরনের চারা। ২০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা দামের চারা রয়েছে এসব স্টলে। তবে বর্ষার শুরুতে মেলার আয়োজন করলে ক্রেতা চাহিদাও বাড়তো এবং বিক্রিও ভালো হতো জানালেন বিভিন্ন স্টল মালিকরা।
গতকাল বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় নানা বয়সী বৃক্ষপ্রেমীরা ছুটে এসেছেন মেলা প্রাঙ্গণে। ঘর, বারান্দা, উঠোন, পরিত্যক্ত জায়গায় নিজের পছন্দের গাছের চারা লাগাতে এই স্টল থেকে ওই স্টলে ছুটেছেন ক্রেতারা। তবে দাম কিছুটা বেশি বলে জানালেন তারা।
মেলায় ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্টলে সারি সারি সাজানো বনজ, ফলজ, সবজি ও ঔষধি দেশী-বিদেশী নানান প্রজাতির গাছ। পাওয়া যাচ্ছে চেনা অচেনা নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ। এদের মধ্যে আছে- জবা ফুল, ম্যান্ডেভিলা, ফুল, হাসনাহেনা, পলাশ, কনকচাপা, বাসন্তি, মালতী, নয়নতারা, আম, আতা, কুল, বড়ই, ডালিম, করমচা, বেল, জাম্বুরা, কাঁঠাল, লাল কাঁঠাল, চাম কাঠাল, ডুমুর, কাজু বাদাম, ডুরিয়ান, অলিভ, কাউ, পিচ, কিউই ফল, অ্যাভোকেডো, আলমন্ডা, ড্রাসিনা, চেরী ফল, পার্সিমন ফল, ড্রাগন, ট্যাং ফল, অ্যাপ্রিকট ফল, আদা জামির, স্ট্রবেরি পেয়ারা, বিলাতি গাব, রাম্বুটান, জয়ফল, সাদা নাশপতি, রাবাবা, মাল বেরি , লোকাট ফল, এবিউ ফল কালোজাম, সাতকরা, সফেদা, কদবেল, লটকনসহ নাম জানা-অজানা হাজারো ফুল ও ফলের দেশী-বিদেশী গাছ।
সিলেটের ওমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজারের আদর্শ নার্সারীর মালিক বাবু রবিন্দ্র কুমার ধর। ৩ লক্ষ টাকার চারা নিয়ে মেলায় এসেছেন। এবারের মেলায় তার টার্গেট ছিলো প্রতিদিন পড়ে ২০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করবেন। তিনি বলেন, এবারের মেলায় আগের তুলনায় ক্রেতা নেই। তাই মেলায় বিক্রি কম। এ পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার চারা।
প্রায় ১০ লাখ টাকার চারা নিয়ে সদর উপজেলার খাদিমনগর সুরমা গেইটের সোহান নার্সারীর মালিক মিলন মিয়া মেলায় অংশ নিয়েছেন। তার টার্গেট ১৫ লক্ষ টাকার চারা বিক্রি করবেন। চারজন কর্মচারীর দিয়ে মেলার স্টল পরিচালনা করছেন, তাদের প্রত্যেকের মজুরী ৫শ’ টাকা। তিনি জানান, মেলা শুরুর ৫ দিনে টার্গেট ছিলো ২ লাখ টাকার চারা বিক্রি হবে। কিন্তু ক্রেতা কম থাকায় মাত্র ১২ হাজার টাকার চারা বিক্রি হয়। টার্গেট অনুযায়ী চারা বিক্রি করতে না পারায় হতাশায় রয়েছেন এই নার্সারীর মালিক।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও বৃক্ষমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মো: তৌফিকুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, মেলায় আশানুরুপ ক্রেতা নেই ঠিক, তবে আমাদের পক্ষ থেকে প্রচারণা কোন ঘাটতি হচ্ছে না। মেলার আরো কয়েকদিন রয়েছে, আমরা আশাবাদি মেলা জমে উঠবে।