এক নগরে দুই মেয়র : তবুও বাড়ছে ভোগান্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুলাই ২০২৩, ৫:৫২:৪৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : দেশের একমাত্র মহানগর হচ্ছে সিলেট। যেখানে এক নগরে রয়েছেন ২ মেয়র। তবুও নগরজুড়ে বাড়ছে ভোগান্তি। নতুন মেয়র দায়িত্ব নেন নি, বর্তমান বিদায়ী মেয়র ব্যস্ত দলীয় কাজে। ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে নগরবাসীর। ফুটপাত থেকে শুরু করে মূলরাস্তার বেশীরভাগ অংশ দখল করে রমরমা ব্যবসায় ব্যস্ত হকাররা। তীব্র গরমে যানজটে নাজেহাল মানুষ। সিসিক কর্তৃপক্ষের নিরবতায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার জনসাধারণ।
জানা গেছে, সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে গত ৩ জুলাই শপথ নিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, তবে এখন পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পাননি। মেয়র হিসেবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন আরিফুল হক চৌধুরী। ফলে সিলেট নগরে মেয়র এখন দুজন, তবে দুই নগরপিতা থাকা শহরে ভোগান্তি কমার বদলে আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তাদের অভিযোগ, এক মেয়রের বিদায় আর আরেক মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের মাঝখানের এ সময়ে অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে নগর ভবন। দায়িত্বে থাকলেও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। নিয়মিত অফিস করছেন না। অফিস আসছেন না বর্তমান বিদায়ী কাউন্সিলররাও। এ ছাড়া নগর ভবনের কর্মকর্তারাও রুটিন কার্যক্রমের বাইরে তেমন কিছু করছেন না।
গত ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, তবে এ নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা মেনে প্রার্থী হননি বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। প্রার্থী না হওয়ায় নির্বাচনের পর থেকেই অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন তিনি। দলীয় কার্যক্রমে এখন বেশি সময় দিচ্ছেন আরিফুল হক। নিষ্ক্রিয়তা দেখা দিয়েছে বর্তমান বিদায়ী কাউন্সিলরদের মধ্যেও। বিশেষত, যেসব কাউন্সিলর সর্বশেষ নির্বাচনে প্রার্থী হননি বা পরাজিত হয়েছেন, তাদের এলাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কেউ কেউ রয়েছেন বিদেশ ভ্রমণে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২ জুলাই ভারী বৃষ্টিতে নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে তলিয়ে যায় নগরীর বেশির ভাগ এলাকা। অন্যান্য বছর জলাবদ্ধতা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন এবং পানি দ্রুত নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। এবার সপ্তাহখানেকের মতো জলাবদ্ধতা দেখা দিলেও মেয়র আরিফকে কোথাও দেখা যায়নি। পানি নিষ্কাশনে সিটি কর্পোরেশনেরও উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ ছিল না।
গেল জুন মাসে ও চলতি জুলাইয়ের শুরুতে নগরীর উপশহর এলাকার দুই দফায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ঐ এলাকার বাসিন্দা আফসার আহমদ বলেন, আমরা উপশহরবাসীরা বড় বিপদে আছি।বৃষ্টি হলেই বাসায় পানি ঢুকে পড়া নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে তবু মেয়র-কাউন্সিলররা খোঁজ নিতেন। সিসিকের কর্মীরা এসে নালা-ড্রেনে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাত। এবার কাউকেই দেখা যায়নি। মনে হচ্ছে পুরো নগর যেন অভিভাবকহীন অবস্থায় আছে।
জানা গেছে, নগরীতে খাবার পানি সরবরাহ করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। নগরের সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা মুজিব খান অভিযোগ করেন, আগে দিনে দুবার খাবার পানি সরবরাহ করা হতো, কিন্তু নির্বাচনের পর একবারও পানি পাই না। সিটি কর্পোরেশনে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। সবাই এখন দায়সারা অবস্থায় আছে।
টানা দুই বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে নানা উদ্যোগ নেন আরিফুল হক চৌধুরী। হকারদের পুনর্বাসন করে লালদিঘির পাড়ে অস্থায়ী মার্কেটও করে দেন তিনি। এতে ফুটপাত হকারমুক্ত না হলেও তাদের উচ্ছেদে নিয়মিতই অভিযান চালানো হত। গত দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে এ কার্যক্রম। ফুটপাত ছাড়িয়ে নগরের সড়কের অনেকাংশও দখল করে নিয়েছেন হকাররা। এতে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার আর সুযোগ মিলছে না। সড়কে যান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে, বাড়ছে যানজট।
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী দিদার আহমদ বলেন, ফুটপাত ছাপিয়ে এখন সড়কও হকারদের দখলে চলে গেছে। আমরা দোকান ভাড়া দিয়ে, ট্রেড লাইসেন্স করে ব্যবসা করি। অথচ তাদের এসব কিছুই লাগে না। খোলা জায়গা পেলেই বসে পড়ে। আর ফুটপাত দিয়ে তো এখন হাঁটার কোনো উপায় নেই। এসব দেখারও কেউ নেই।
যানজট নিরসনে বারুতখানা-জল্লারপাড় ও কোর্টপয়েন্ট-চৌহাট্টা সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করেছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এসব সড়কে যাতে রিকশা প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য মোড়ে মোড়ে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা নজরদারি করতেন, তবে নির্বাচনের আগে থেকেই এসব সড়কে অবাধে চলাচল করছে রিকশা। রিকশা নিয়ন্ত্রণে করপোরেশনের কর্মীদেরও এখন সড়কে দেখা যায় না। ফলে এসব সড়কে যানজট আরও বেড়েছে।
সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে যান আরিফুল হক চৌধুরী। ১৬ এপ্রিল লন্ডন থেকে ফেরার পর রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণে নগরের বিভিন্ন মোড়ে দায়িত্বরত সিটি করপোরেশনের কর্মীদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
নগরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোও ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এগুলো সংস্কার হচ্ছে না। এ ছাড়া জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুসনদ, ট্র্রেড লাইসেন্সের মতো জরুরি সেবা পেতেও এখন ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যেহেতু আমি বিএনপির একজন কর্মী এবং দল এখন এক দফা দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে, তাই আমিও এখন দলে সময় দিচ্ছি। আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছি, তবে এতে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না।
নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে লন্ডন সফরে রয়েছেন। লন্ডন যাওয়ার পূর্বে তিনি বলেছিলেন, শপথ নিলেও আমি দায়িত্ব গ্রহণ করিনি, তবুও নগরবাসীর সমস্যা-দুর্ভোগের কথা শুনছি। প্রতিদিনই নগরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি। মানুষের সাথে কথা বলেছি।