হকার্স মার্কেটে অনাগ্রহ হকারদের, সিসিক-হকার ইঁদুর বিড়াল খেলা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুলাই ২০২৩, ১১:৩১:৪৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: হকারদের পুনর্বাসনের জন্য নগরীর লালদীঘিরপারে বিশাল হকার্স মার্কেট গড়ে তোলা হয়। নগর ভবনের পেছনে জীর্ণ দালান ভেঙে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী হকারদের জন্য জায়গা করে দেন। এরআগ পর্যন্ত তারা সড়কে ব্যবসা করতেন। হকারদের জন্য এখানে রয়েছে আলাদা আলাদা শেড। কিন্তু এত ব্যবস্থা থাকার পরেও অল্প কয়েকটি দোকান সেখানে বসে। বাকি সব হকার আগের মতোই রাস্তায় তাদের পসরা সাজিয়ে বসে। আর তাদের রাস্তা থেকে সরাতে সিসিক-হকার ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে।
এ নিয়ে হকারদের মধ্যে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। প্রবীণরা চান হকার মার্কেটে স্থায়ী ও সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসা করতে আর নবীনরা চান রাস্তায় ব্যবসা করতে। হকার্স শেড গড়ে তোলার পরই শুরু হয় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের রাস্তায় হকার উচ্ছেদ অভিযান। মেয়র আরিফের নেতৃত্বে প্রায় প্রতিদিন চলা এই অভিযান নগরবাসীর প্রশংসা কুড়ায়। এরপর মানবিক দিক বিবেচনায় বিকেলের দিকে স্বল্প পরিসরে হকার বসার ব্যাপারে নমনীয় হয় সিসিক। হকার্স মার্কেটে ক্রেতারা অভ্যস্থ না থাকায় তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এই নমনীয়তার সুযোগে ময়ূরের মতো পেখম মেলে ধরে হকাররা। তারা ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তার অর্ধেক পর্যন্ত দখল করে বসে। শুরুতে কোর্ট পয়েন্ট বন্দরবাজার থাকলেও এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও ক্রমশ তা চৌহাট্টা থেকে তালতলা অব্দি ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয় হকারদের এই রাস্তায় ব্যবসা এখন বড়ো সড়ক থেকে ছোটো ছোটো সড়ক এবং পাড়া-মহল্লায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। সিলেট যেন হয়ে ওঠে হকারময় এক নগরী। ফুটপাত রাস্তা কোথাও নির্বিঘ্নে হাঁটার পর্যন্ত অবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। যানজটে তৈরি হয় বিশৃঙ্খল অবস্থা। বিকেলে বসার কথা থাকলেও একসময় তা সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায়। এই অবস্থায় মাঝেমধ্যে চলে মেয়রের হকার উচ্ছেদ অভিযান। কিছুদিন অভিযান চলে তারপর আবার বন্ধ। এভাবেই চলে হকার-সিসিক ইঁদুর বেড়াল খোলা। এরমধ্যে চলে আসে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান পাশ করায় পরিবর্তনের বাতাসে হকারদের নিয়ন্ত্রণ করা কেউ থাকেন না। ব্যানার ফ্যাস্টুন আর হকারে নোংরা জনপদে পরিণত হয় পূণ্যভূমি। এ নিয়ে সুধী মহলে চলে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
অবশেষে চলতি সপ্তাহে নড়েচড়ে বসে সিসিক। সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা থেকে পর্যন্ত নগরীর সুরমা মার্কেটের সামনে থেকে আম্বরখানা পয়েন্ট পর্যন্ত অভিযান চালান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এসময় মেয়র বলেন, যতদিন আমার মেয়াদ আছে আমি ততদিন কাজ করে যাবো। দায়িত্বে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। নতুন যিনি দায়িত্বে আসছেন তিনি এই রকম কাজ করবেন আশা করি। মেয়রের এই অভিযানে আবারও স্বস্তি ফেরে নগরবাসীর মনে। তবে এই অভিযানে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে অনেক হকার। অনেকে বলেন তারা মনে করেছিল আনোয়ারুজ্জামান মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় অভিযান আর হবে না। তিনি লন্ডনে থাকেন তাই সিলেট নিয়ে এত মাথা ঘামানোর সুযোগ নেই। আরিফুল হক বর্তমানে মেয়র থাকলেও তিনিও নিষ্ক্রিয়। কিন্তু সোমবারের অভিযান তাদের ধারণায় আঘাত হনে। উচ্ছেদ অভিযানের সময় তাই অনেকেই গাই গুই করেন। নগর ভবনের কাছে একজন হকার মেয়রের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। যদিও তার এই তর্ক অন্য হকাররা ভালোভাবে নেননি। তবে হকারদের খুটির জোর নিয়েও তখন প্রশ্ন চলে আসে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হকারদের একটি সূত্র জানান, হকারদের তুলে দেওয়া এত সহজ নয়। এখানে হকার বা সিএনজি স্ট্যান্ড থাকা মানে পকেটে টাকা ঢুকা। হকার সরে গেলে এই টাকা আসবে না। তাই সেই অদৃশ্য শক্তিই হকারদের ফুটপাতে টিকিয়ে রাখবে।
তবে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর এই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও হকার উচ্ছেদ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অন্য ব্যবসায়ীরা। হকার উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্ন সময় সিসিকে লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসছিলেন তারা। মেয়রের এই অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন জানান, মহানগরীর রাস্তার দুই পাশ এখন হকারদের দখলে থাকে। হকাররা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা করে যাচ্ছে নির্দ্বিধায়। যার ফলে একদিকে যেমন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে পথচারীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ক্রেতা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মার্কেটের সামনে ফুটপাত দখল করে রাখায় ব্যবসায়ীরা তিগ্রস্ত হচ্ছেন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর এই অভিযান নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। আমরা বিভিন্ন সময়ে হকার উচ্ছেদের জন্য মেয়রকে অনুরোধ করছি। আমরা মনে করি হকার উচ্ছেদে মেয়রের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া হকার উচ্ছেদে সবসময় প্রশাসনের সাথে কাজ করার আশ্বাস দেন তারা।
এদিকে মেয়রের সোমবারের অভিযানের পর নতুন করে শুরু হয়ে হকার সিসিক ইঁদুর বিড়াল খেলা। অভিযানের একদিন পরই বুধবার দেখা যায় হকাররা আবারও ফিরতে শুরু করেছেন স্বরূপে। সকালের দিকে না বসলেও দুপুরের পর থেকেই ফুটপাতে বসা শুরু করেন হকাররা। বিকেলের দিকে তার রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার আগে দেখা যায় দুই দিকে রাস্তার অর্ধেকের বেশি হকারদের দখলে। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। অনেকেই এই রাস্তা এড়িয়ে অন্যদিকে যানবাহন নিয়ে যান।
হকারদের সাথে সিসিকের এই টানাহেঁচড়া নিয়ে বিরক্ত সিনিয়র হকাররা। যারা দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা করে আসছেন তারা চান সিসিকের বানিয়ে দেওয়া হকার্স শেডে ব্যবসা করতে। একজন হকার নেতা, বলেন আমরা চাই সুস্থিরভাবে সুন্দর করে ব্যবসা করতে। এজন্য হকার্স শেড সবচেয়ে ভালো। কিন্তু নতুনরা তা মানতে চায় না। তারা বলে ফুটপাত থেকে সরে গেলে ব্যবসা হবে না, ক্রেতা ঢুকবে না।। কিন্তু আমাদের ধারণা হকার্স শেডে ফুটপাত থেকে নিরাপদে ও সুন্দরভাবে ব্যবসা করা যাবে। প্রথমে কিছুদিন সময় লাগবে কিন্তু পরিচিত হয়ে গেলে আর কোনো সমস্যা হবে না। যারা হকার থেকে পণ্য কিনেন তারা যেখানে হকার সেখানেই যাবেন। কিন্তু কিছু দালালের পায়তারায় নবীনরা এই ভুল করছে। হকার শেডে গেলে আমাদের বৈধভাবে কেবল সরকারকে ভাড়া দিতে হবে কিন্তু ফুটপাতে অনেকদিকে টাকা দিতে হয়। ফুটপাত থেকে হকার সরে গেলে তা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তারা এটা করে থাকে।