সিলেটে পুষ্টি সূচকের উন্নতি, তবে দুধে ঘাটতি : রাইট টু প্রোটিন সেমিনারে বক্তারা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ আগস্ট ২০২৩, ৬:৪১:৩০ অপরাহ্ন
বিগত বছরগুলোতে সিলেট বিভাগে পুষ্টি সূচকের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে, তবে দুধ উৎপাদনে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে। এদিকে, সারাদেশে পুষ্টি ও প্রোটিন বিষয়ক জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর কাজ হলেও এখনও সাধারণ মানুষের মাঝে তথ্য ও জ্ঞানের অভাব রয়েছে। আছে ভুল ধারণা ও কুসংস্কার। তাই সরকার ঘোষিত পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্যবান ও মেধাবি জাতি গঠন করতে হলে পুষ্টি বিষয়ক প্রচার-প্রচারণায় স্কুলের শিক্ষক ও মসজিদের ইমামদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে।
বুধবার রাতে নগরীতে অনুষ্ঠিত ‘রাইট টু প্রোটিন’ শীর্ষক সেমিনারে পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মসজিদের ইমামগণ এ মতামত তুলে ধরেন। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ইউএস. সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. মারুফ হাসান বলেন, বিগত বছরগুলোতে সিলেটে পুষ্টি সূচকের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে সিলেট বিভাগে বছরে ১১৪.৭৬ কোটি চাহিদার বিপরীতে ডিম উৎপাদিত হচ্ছে ১৩৮.৪৩ কোটি অর্থাৎ উদ্বৃত্ত থাকছে প্রায় ২৩.৬৬ কোটি পিস। অন্যদিকে ৪.৮৩ লক্ষ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে মাংস উৎপাদিত হচ্ছে ৫.২৫ লক্ষ মেট্রিক টন। তবে দুধের উৎপাদন এখনও আশাব্যঞ্জক নয়। ১০.০৬ লক্ষ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে দুধ উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র ৭.০৫ লক্ষ মেট্রিক টন, অর্থাৎ ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৩.০১ লক্ষ মেট্রিক টন।
সিলেট সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার, ডা. স্নিগ্ধা তালুকদার বলেন, সিলেটে বহু জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। সরকারের কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সাথে নিয়ে কাজ করছে সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়। তিনি বলেন, সরকার পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের বিষয়টিকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি ২০২০ প্রণয়ন করেছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৫ বছরের কম বয়সী শিশু, কিশোর-কিশোরী ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী এবং গর্ভধারণক্ষম, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারি নারীদের অপুষ্টি হ্রাসে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বারডেম হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ মহুয়া বলেন, অপুষ্টির কারণে বাচ্চাদের ওজন ও উচ্চতা কম হয়। মা ও শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ে। বাড়ন্ত বয়সের কিশোর কিশোরীদের নানাবিধ শারিরিক ও মানসিক জটিলতা দেখা দেয়। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয়টি হচ্ছে অপুষ্টি’র প্রভাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। তাই উন্নত দেশ ও জাতি গড়তে হলে আমাদেরকে অপুষ্টির অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতেই হবে।
বিপিআইসিসি সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, করোনা মহামারির সময় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে, টিকা নিতে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে, ডায়াবেটিস ও যক্ষা বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে, মাদকের বিরুদ্ধে, এমনকি জঙ্গীবাদ দমনেও মসজিদের ইমামদের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। জুম্মা’র খুৎবায় প্রোটিন ও পুষ্টি বিষয়ে ইমামগণ কথা বললে সমাজের মানুষ উপকৃত হবে, সরকারের পক্ষে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাী সহজতর হবে।
ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের সাউথ এশিয়া এন্ড সাব সাহারা অঞ্চলের হেড অব মার্কেটিং দিবা ইয়ানুলিস এক ভিডিও বার্তায় বলেন, এসডিজি’তে ক্ষুধা মুক্ত সমাজ গঠনের উপর জোর দেয়া হয়েছে। তবে শুধু খাদ্য গ্রহণ করলেই হবে না; খাদ্যকে হতে হবে পুষ্টিকর ও নিরাপদ। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব সেরা সয়াবিন উৎপাদন করছে এবং তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে। এই সয়াবিন উদ্ভিজ্জ প্রোটিন হিসেবে মানুষ গ্রহণ করছে আবার উদ্ভিজ্জ প্রোটিনকে প্রাণিজ প্রোটিনে রূপান্তরিত করা হচ্ছে।
ইউএসএসইসি’র বাংলাদেশ টীম লিড খবিবুর রহমান (কাঞ্চন) বলেন, কম সময়ে, স্বল্প জমি ব্যবহার করে এবং পরিবেশের ক্ষতি না করে কিভাবে প্রোটিনের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে কাজ করছে তাঁর প্রতিষ্ঠান। আমরা মৎস্য ও প্রাণিখাদ্য তৈরিতে সয়াবিন ও সয়াবিন মিল সরবরাহ করছি। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশে আইপিআরএস প্রযুক্তির প্রচলন করেছি।
ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান বলেন, প্রোটিন কনজাম্পশন বাড়ার কারণে বাংলাদেশের মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়েছে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা লম্বা হচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ম্যাথ অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সফলতার স্বাক্ষর রাখছে।
সেমিনারে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন সিলেট কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, এনিমেল এন্ড বায়োকেমিক্যাল সায়েন্সেস এর ডীন প্রফেসর ড. মো. রাশেদ হাসনাত। অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর সিলেট বিভাগীয় পরিচালক মো. মহিউদ্দীন, সিলেট প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) এর সুপারিনটেনটেন্ড এ.কে.এম সাইফুল হাসান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর কবির, বিপিআইসিসি’র যোগাযোগ ও মিডিয়া উপদেষ্টা মোঃ সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ। সেমিনারে স্কুল শিক্ষক ও ইমামসহ মোট ১৫০ জন অংশগ্রহণ করেন।