রাজনীতিতে ‘কূটনৈতিক ঢেউ’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১১:১০:৪৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: আগামী জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিক তৎপরতার পালে আরো জোরালো হাওয়া লেগেছে। সম্প্রতি সে তৎপরতা আরো দৃশ্যমান হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার তৎপরতা শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকেই। পাশাপাশি ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও বসে নেই। এ অবস্থায় অনেকেই বলছেন, রাজনীতিতে এখন চলছে ‘কূটনৈতিক ঢেউ’।সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে করেছে। এসব সফরে নির্বাচন ইস্যু প্রাধান্য পেয়েছে।
বাংলাদেশ সফর করেছেন বাইডেন প্রশাসনের দুজন গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক। এদের একজন হচ্ছেন উজরা জেয়া এবং অন্যজন হচ্ছেন ডোনাল্ড লু। উজরা জেয়া হচ্ছেন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। অন্যদিকে ডোনাল্ড লু হচ্ছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সম্প্রতি আমেরিকা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে ডোনাল্ড লু সেটির সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
এছাড়া বেশ কয়েকবার ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও বিএনপির সাথে বৈঠক করেছেন। সমানতালে বৈঠক করে চলেছেন বৃটিশ হাইকমিশনার। এরপর আমেরিকা ও ইউরোপের ১২টি দেশের কূটনীতিকরা আলাদা বৈঠক করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সাথে আলাদা বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকের মূল আলোচ্য ছিলো আগামী নির্বাচন। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে দলটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে এই বৈঠক। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক শেষে পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। কোনো ধরনের সহিংসতা চায় না যুক্তরাষ্ট্র। এটি নিয়েই আলোচনা হয়েছে আওয়ামীলীগের সাথে। এর আগের দিন বুধবার ঢাকায় অবস্থানরত ২৫ দেশের কূটনীতিকদের সাথে এক ঘন্টা বৈঠক করেছে বিএনপি। তাদের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপি জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূলে নেই। সেখানে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, গত ১ আগস্ট আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বৈঠক শেষে পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ দেখতে আগামী অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রি-অ্যাসেসমেন্ট টিম বাংলাদেশে আসবে।
ওদিকে, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের সদস্যপদ স্থগিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ, শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাবের মানবাধিকার হরণকারীদের নিষিদ্ধ এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ও পরিচালনায় নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস গ্রিনফিল্ডকে চিঠি দিয়েছেন ১৪ কংগ্রেসম্যান। এই চিঠি নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে।
এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সে দেশের মানুষের ইচ্ছানুসারেই হবে। ভারত গভীরভাবে তা পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত চায় নির্বাচন পরিকল্পনামাফিক হোক। সহিংসতা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট হোক।
আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটেনসহ প্রায় সবকটি দেশ আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ করার উপর জোর দিচ্ছে। যদিও এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক সংলাপ নিয়ে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে ইতিবাচক কোন মনোভাব দেখা যাচ্ছে না।নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের উপর পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ এখন দৃশ্যমান। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সূত্র বলছে, পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে আমেরিকার সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে সেটি কমিয়ে আনা এখন তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে পশ্চিমা দেশগুলোর এমন তৎপরতায় বেশ নাখোশ হয়েছে রাশিয়া। ইতিমধ্যে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে খোলাখুলি-ভাবে তাদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনীতিবিদরা যে তৎপরতা দেখাচ্ছে সেটিকে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরো একটি নগ্ন হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে রাশিয়া।
এদিকে, হঠাৎ রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে কৌতূহল, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, দেশে কূটনীতি ও রাজনীতিতে ঝড় শুরু হয়েছে।