কৃষিপণ্যে প্রাণ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩০:১৩ অপরাহ্ন
কৃষিতেই বেঁচে আছে বাংলাদেশ, একথা বলা মোটেই বাহুল্য নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন সূচক যখন নি¤œগামী, তখন জিডিপি’র ক্ষেত্রে একমাত্র কৃষিখাতই তার প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে বিগত বছরসমূহে। জানা গেছে, চলতি বছর বাংলাদেশ ২ হাজার ৭শ টন আম রফতানী করেছে, যা এর আগের বছরের চেয়ে ১ হাজার টন বেশী। বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, বাংলাদেশ গত বছর ১ হাজার ৭৫৭ টন আম রফতানি করে। বিশ্বের ২৮টি দেশে এই আম রফতানি করা হয়। চলতি বছরে রফতানি করা হয়েছে ৩৪ টি দেশে। দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যে রফতানি করা হয়েছে ১০২৫৬ টন, ইতালিতে ২৯৬ টন, সৌদি আরবে ১৩৭ টন, কাতারে ১১১ টন, সিঙ্গাপুরে ৫৫ টন, সুইজারল্যা-ে ১৪ টন, জার্মানীতে ৭০ টন, ফ্রান্সে ৮৫ টন, সুইডেনে ৬৫ টন, কুয়েতে ২১৮ টন এবং কানাডায় ৪০ টন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়। সেই তুলনায় রফতানির পরিমাণ অনেক কম। বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশী আমের বিপুল চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আম উৎপাদন ও প্যাকেজিংয়ে আন্তর্জাতিক মান না থাকায় এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষি মন্ত্রণালয় রফতানি মানের আম উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বলে জানা গেছে। এই প্রকল্পে সর্বোত্তম কৃষি কর্মকা- ও আম উৎপাদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাষীদের সহায়তা প্রদানের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই প্রকল্পের আশু ফল স্বরূপ প্রথম বছরেই আম রফতানি বেড়েছে ১০০ টন। চলতি বছরের অর্থাৎ মৌসুমের আম রফতানি আরো ১৫/২০ দিন ধরে চলবে।
একথা অনস্বীকার্য যে, কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশী এখনও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। শ্রমশক্তির ৪০.৬২ শতাংশ এখনো কৃষিকাজ নির্ভর। বলা বাহুল্য এদেশে ৬০-৭০ শতাংশ এখনো গ্রামে বাস করেন। জাতীয় আয়ের ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। কৃষিতে ৪১ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। কৃষি বাংলাদেশের ১৬ দশমিক ৫ কোটি মানুষের শুধু খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা বিধানই করে না, বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালেরও যোগান দেয়।
কথা হচ্ছে, সাধারণভাবে কৃষি বলতে অনেকে ধান উৎপাদন এবং কৃষক বলতে ধান চাষীদের বুঝে থাকেন। আসলে বাংলাদেশের কৃষির মধ্যে নানা ধরণের ফলমূল ও শাকসবজির উৎপাদনও অন্তর্ভুক্ত। আর এসব ফলমূল ও শাকসবজীর বিপুল চাহিদা রয়েছে দেশে বিদেশে। বাংলাদেশের আম, কাঁঠাল ও আলুর বিপুল চাহিদা রয়েছে রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। এছাড়া দেশে পর্যাপ্ত ফল সংরক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হলে আমসহ বিভিন্ন ধরনের বাংলাদেশী ফল ও ফল থেকে প্রস্তুত খাদ্যপণ্য বিদেশে রফতানি করা যাবে। আর এতে অর্জিত হবে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর। এখানে ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন শস্য ও ফলমূল-শাকসবজি সহজেই উৎপাদিত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, আধুনিকায়ন ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে বাংলাদেশকে এখনো চালসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতো দেশীয় ফল ও ফল উৎপাদনের সম্ভাবনা সত্বেও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হচ্ছে চাল ও বিদেশী ফলমূল আমদানিতে। ফলে প্রতি বছর বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা বেরিয়ে যাচ্ছে এসব পণ্য আমদানিতে। দেশে প্রচুর ধান ও পেঁয়াজ উৎপন্ন হলেও প্রতি বছর হাজার হাজার টন চাল ও পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। অথচ কৃষি খাতে একটু মনোযোগ ও ভর্তুকি দেয়া হলে এতো বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে বেরিয়ে যেতো না, যখন বাংলাদেশে ডলারের জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে। গত বছরের শেষ দিকে সরকার বেসরকারী আমদানিকারকদের প্রায় ১৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি প্রদান করে। একদিকে দাবি করা হচ্ছে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, অন্যদিকে লাখ লাখ টন চাল আমদানি করা হচ্ছে। বিষয়টি যেমন স্ববিরোধী তেমনি দুঃখজনক। ভারত প্রায় দেড়শ কোটি মানুষকে খাইয়ে বিদেশে চাল রফতানি করতে পারলেও বাংলাদেশ দেশের জনগণের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পারছে না। এটা যুগপৎ দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জার বিষয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের উর্ধ্বতন মহলকে এসব বিষয়ে অবিলম্বে দৃষ্টি ও মনোযোগ দিতে হবে, এমন প্রত্যাশা ও দাবী এদেশের জনগণের।