বিয়ানীবাজারে ভুয়া ও হাতুড়ে চিকিৎসকের দৌরাত্ম
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ৬:৩১:০৯ অপরাহ্ন
তোফায়েল আহমদ, বিয়ানীবাজার: সিলেটের বিয়ানীবাজারে দিনদিন বাড়ছে ভুয়া ও হাতুড়ে ডাক্তারদের দৌরাত্ম। প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলায় ফার্মেসীতে কিছু হাতুড়ে চিকিৎসক দিচ্ছেন ব্যবস্থাপত্র। পৌরশহরসহ উপজেলার অন্যান্য স্থানে অন্তত ১০ জন ভুয়া চিকিৎসক রয়েছেন। এদের মধ্যে ডেন্টালের কথিত চিকিৎসক বেশী। প্রায় ৪ বছর পূর্বে পৌরশহর ও বৈরাগীবাজার এলাকার দুই ভুয়া সনদধারী দন্ত চিকিৎসককে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু এমবিবিএস বা অন্যান্য ডিগ্রীধারী ভুয়া চিকিৎসকের বিষয়টি কেউ নজরে আনেনি। তবে এবার বিয়ানীবাজারের চারখাইয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে এক ভুয়া চিকিৎসক শনাক্তের ঘটনা চাউর হলে ভুয়া চিকিৎসক নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনেরা। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজারের সভাপতি এডভোকেট আমান উদ্দিন বলেন, বিষয়টি রীতিমতো উদ্বেগজনক। তিনি ভুয়া চিকিৎসক শনাক্তে সিলেটের সিভিল সার্জনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জানা যায়, সম্প্রতি ধরা পড়া ভুয়া ঐ চিকিৎসকের নাম মোর্শেদ আলম। তিনি চারখাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগের জন্য আবেদন করলে ইন্টারভিউয়ে আচরণ সন্দেহজনক হলে কর্তৃপক্ষ তাকে চ্যালেঞ্জ করেন। তখন তার প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে। চারখাইয়ের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মোর্শেদ আলম কান ধরে ওঠবস করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এরকম অপকর্ম আর করবেনা বলে ছাড়া পান। এর আগে এই চিকিৎসক বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। স্থানীয়রা জানান, ভবিষ্যতে হয়তো সে পুনরায় কোন স্থানে প্র্যাকটিস শুরু করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করতে পারে। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে সিলেট-ঢাকা থেকে আসা চিকিৎসকদের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন এখানকার স্থানীয় চিকিৎসকরা।
বিয়ানীবাজার ডায়াবেটিক সেন্টারের পরিচালক ডাঃ শিব্বির আহমদ সোহেল বলেন, এখানে ফার্মেসীগুলোতে অনেক চিকিৎসক ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আসছেন। তাদের সনদের ব্যাপারে প্রশাসনের পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। তিনি উল্লেখ করেন, মুর্শেদ আলম বিয়ানীবাজারে গত কয়েক বছর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসাবে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন, অথচ তার সনদ পুরোপুরি ভুয়া।
ভুয়া চিকিৎসক শনাক্তকারি চিকিৎসক ডাঃ শহীদ আহমদ তুহিন বলেন, অন্য চিকিৎসকের সনদ নিজের করে মুর্শেদ আলম চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিলেন। তিনি এর আগেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ধরা পড়ে জরিমানা দিয়েছিলেন।তবে ভুয়া চিকিৎসকের বিষয়টি এখানে সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন অভিযানে ধরা পড়া আলম খান নামের একজন ভুয়া চিকিৎসকও পৌরশহর এলাকায় ফার্মেসীতে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। শুধু আলম খান নয় স্বল্প মেয়াদি কোর্স করে বিয়ানীবাজারের গ্রামীণ বাজারগুলোতে নিজস্ব ফার্মেসী খুলে ডাক্তার পরিচয়ে নিয়মিত রোগী দেখাসহ ওষুধ বিক্রি করছেন কিছু হাতুড়ে ডাক্তার। রোগীদের কাছে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ওষুধ বিক্রিসহ বিভিন্ন ছোট সার্জারীও করেন এসব হাতুড়ে ডাক্তার- অনুসন্ধানে এমনটা জানা যায়। বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শাহরিয়ার রহমান শুভ বলেন, আমি বিগত কয়েকদিন আগে আমাদের উপজেলা পরিষদের সমন্বয় মিটিংয়ে ভুয়া চিকিৎসকদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আসলে বিষয়টি আমাদের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক রোগী না বুঝে এ সকল ভুয়া ডাক্তারদের কাছে গিয়ে ভুল চিকিৎসা নিয়ে নিজেকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসলিম প্রতিবেদককে বলেন, আমি এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে শীঘ্রই ভুয়া এবং হাতুড়ে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামবো।