ফলোআপ: ওসমানীনগরের হামতনপুরে সংঘর্ষ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ৯:১৯:৪৬ অপরাহ্ন
সূত্রপাত হয় গোরস্তানে সুপারি চারা রোপণ নিয়ে
মোঃ মুহিব হাসান, ওসমানীনগর : ওসমানীনগরের প্রবাসি অধ্যুষিত হামতনপুর গ্রামে হামতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমি নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের খবর চাউর হলেও এর পেছনে রয়েছে ভিন্ন কারণ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্রামের পঞ্চায়েতি ঈদগাহে সুপারির চারা রোপণ নিয়ে রয়েল এফসি হোয়াটসআপ গ্রুপে এক প্রবাসি সদস্যের প্রশ্ন করা নিয়েই মূলত সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। এই বিষয়টিকে নিয়ে হোয়াটসআপ গ্রুপ ও ফেইসবুকে একে অপরকে ঘায়েল করে লেখালেখি, হোয়াটসআপ গ্রুপে ভয়েস রেকর্ড দিয়ে একে অপরকে হুমকি ধমকি প্রদান, গ্রামের ঈদগাহে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে সভাপতির পদসহ ৫ গোষ্ঠির আধিপত্য বিস্তার এর মতো জটিল কারণসমূহ রয়েছে সংঘর্ষের পেছনে। আর সংঘর্ষ ঘটে গেলে এসব বিষয়কে আড়াল করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হামতনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমি জটিলতার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। তাই ঘটনার পর পরই ডিলিট করা হয়েছে রয়েল এফসি নামের হোয়াটসআপ গ্রুপটি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত দুই মাস আগে হামতনপুর গ্রামের পঞ্চায়েতি কবরস্থানে সুপারির চারা রোপণ করা হয়। ১ আগস্ট রাতে গ্রামের বাসিন্দা মিয়া তুরন ওয়ালিস যুক্তরাজ্য থেকে রয়েল এফসি হোয়াটসআপ গ্রুপে মন্তব্য করেন, কবরস্থানে ফলজ গাছ তথা সুপারির চারা রোপণ করা ঠিক হয়নি। তখন তাদের প্রতিপক্ষের কোন একজন মন্তব্য করেন, পঞ্চায়েতের সকল সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে সুপারির চারা রোপণ করা হয়েছে, তুমি কথা বলার কে? প্রতি উত্তরে তুরন বলেন, আমিও তো গ্রামের সদস্য, কিন্তু আমিতো সুপারির চারা রোপণের বিষয়টি জানিনা। এই বিষয় নিয়ে দেশে বিদেশে অবস্থানরত গ্রামের লোকজন যারা এই গ্রুপের সদস্য তারা হোয়াটসআপ গ্রুপে লাইভে এসে রাতভর বাক বিতন্ডা করেন।
অন্যদিকে ২ আগস্ট সকালে দেখা যায়, হামতনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানার নেটের বেড়াটি কে বা কারা তুলে ফেলেছে। তখন উভয় গ্রুপ আরো উত্তপ্ত হয়ে সকাল দশটার দিকে শক্তি প্রদর্শনের জন্য হোয়াটসআপ গ্রুপ আর পৃথক ফেইসবুক আইডি থেকে একে অপরকে ডাকাডাকি করেন। ঐদিন দুপুর ১২টার দিকে হোয়াটসআপ গ্রুপ ও ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে একে অপরকে গালমন্দ করে মারামারিতে অংশ নিতে চূড়ান্ত ডাকাডাকি করে। এসময় শাইস্তা মিয়ার পক্ষের গ্রুপ বিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়। বিদ্যালয় বন্ধ করে দিলে গ্রামের চান মিয়া, অজিত বাবু, সহিদুর রহমান শিবলু ও ইউসুফ গংদের নেতৃত্বাধিন বাকি ৪টি গ্রুপ একত্রে দেশিও অস্ত্রশস্ত্র ইটপাটকেল দিয়ে হামলা করে হাজি শাইস্তা মিয়ার বাড়িতে। ভাংচুর করা হয় শাইস্তা মিয়ার বাড়ির সীমানা প্রাচীর, টয়লেট, দরজা জানালা। হামলায় শাইস্তা মিয়ার পক্ষের মহিলাসহ আহত হন ৮/৯জন।
অভিযোগ রয়েছে গ্রামের অসংখ্য লোকের হামলা প্রতিহত করতে শাইস্তা মিয়ার ছেলে মতিউর প্রতিপক্ষদের লক্ষ্য করে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুঁড়ে। তখন সংঘর্ষের গতি পাল্টে গিয়ে অপর ৪ গ্রুপের ৯/১০জন আহত হন। খবর পেয়ে ওসমানীনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাতে পুলিশ বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠ থেকে একটি দেশিয় শর্ট গান উদ্ধার করে। এতে অস্ত্র মামলাসহ উভয় পক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শাইস্তা মিয়া বলেন, দুই মাস আগে গ্রামের পঞ্চায়েতি কবরস্থানে সুপারির চারা রোপণ করা হয়। আমাদের পক্ষের একজন বিদেশ থেকে কবরস্থানে সুপারির চারা রোপণ ঠিক হয়নি, এমন মন্তব্য করলে এটা নিয়ে সারা রাত মোবাইলে দেশে বিদেশে ঝগড়া হয়। দিনে উভয়ে মারামারি লাগে। গ্রামের ওয়াজ কমিটিতে চান মিয়াকে বার বার সভাপতি করা হয়। একটি পক্ষ তাকে মানতে চায়নি। কথা ছিল, একবার ওয়াজ হওয়ার পর তাকে বাদ দেওয়া হবে, কিন্তু বাদ দেওয়া হয়নি। এসব বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছে। তারা আমার বাড়ির দেওয়াল, টয়লেট, দরজা জানালা, আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য শাহেনা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের ভূমি নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি। বিদ্যালয়ের জমি ছেড়ে আলাদা রাস্তা করা হয়েছে। মূলত গ্রামের গোরস্থানে সুপারির চারা রোপণ ঠিক হয়নি বলে লন্ডন থেকে মিয়া তুরন ওয়ালিস হোয়াটসআপ গ্রুপে মন্তব্য করেন। এই নিয়ে হোয়াটসআপ গ্রুপ ও ফেইসবুকে সারারাত উভয়ে কথা কাটাকাটি করতে করতে দিনে উত্তেজিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। গ্রামের বাসিন্দা বদরুল ইসলাম বলেন, শাইস্তা মিয়ার পরিবার বিদ্যালয়ের ভূমি দখল করে রেখেছে। আমরা গ্রামবাসি বিদ্যালয়ের ভূমি ছাড়তে বলি। এ নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে শাইস্তা মিয়ার ছেলে মতিউর গুলি ছুড়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহিদুর রহমান শিবলু বলেন, রয়েল এফসি হোয়াট্সআপ গ্রুপে কথাকাটি ও ফেইসবুকে গালাগালির বিষয়টি আমি শেষ করে দিয়েছি। আমি হোয়াটসআপ গ্রুপের এডমিন ছিলাম, এক পর্যায়ে গ্রুপটি ডিলিট করে দিয়েছি। গ্রামের সকল একমত হয়ে সুপারির চারা রোপন করেছেন, এ নিয়ে সংঘর্ষ হয়নি। বিদ্যালয়ের ভূমি দখল নিয়ে মূলত সংঘর্ষ হয়েছে।