যা করতে হবে মহাসড়ক বিনির্মাণে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩০:৫৯ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি জাতীয় মিডিয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক একটি মরণ ফাঁদ! শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একের পর এক দুর্ঘটনায় যেনো মরণ ফাঁদ হয়ে দাড়িয়েছে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও চিহ্নহীন স্পিড ব্রেকার ছাড়াও খানাখন্দ এবং মাত্রাতিরিক্ত থ্রিহুইলার চলাচল এ মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এছাড়া খরচ কমাতে নতুন পদ্ধতিতে সড়কের ওপর পাথর বসিয়ে অতিরিক্ত বিটুমিনের ব্যবহারের কারণেও দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেখা গেছে, বৃষ্টি হলে অত্যন্ত পিচ্ছিল হয়ে যায় সড়কটি। অনেকটা টাইলসের মতো। যার ফলে ঠিকমতো কাজ করেনা, ডানে-বামে গাড়ি সরে যায়। এছাড়াও আছে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। তার ওপর সড়কটি খানাখন্দে ভরা। সব মিলিয়ে দুর্ঘটনা প্রবণ হয়ে আছে মহাসড়কটি।
লক্ষণীয় যে, ২০২১ সালে এই মহাসড়কে ১০২ জনের প্রাণহানি হয়। ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ১২৩ জনে, এসব দুর্ঘটনার কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫৪টি বাঁকপূর্ণ স্থান। জানা গেছে, এই সড়কটি ছয় বিশিষ্ট সড়ক হিসাবে তৈরী করা হবে।
সচেতন মহলের মতে, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এর সাথে দেশের একটি বিশাল অংশের সড়ক যোগাযোগ জড়িত। প্রতিদিন লাখো লোক ও যানবাহন চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। তাই যখন ৬ লেন হিসেবে এই মহাসড়ক নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে তখন যেনো উপরোক্ত অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনাপ্রবন ব্ল্যাকস্পটগুলোর বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নেয়া হয়। শতাব্দি আগে যখন এই সড়কটিতে যান চলাচল ছিল নিতান্তই কম, তখন রাস্তার এসব ব্ল্যাকস্পটগুলো তেমন কোন সমস্যা ছিল না। ফলে এসব বাঁক পরিবর্তনের কোন উদ্যোগও গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে এসব বাঁকপূর্ণ ব্ল্যাকস্পটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে। বিস্ময়কর হলেও সত্য এসব ব্ল্যাকস্পটগুলোতে চোখে পড়ার মতো তেমন কোন সাইনবোর্ড বা নির্দেশনা সম্বলিত বোর্ডও নেই। নেই ডিভাইডার কিংবা গার্ডওয়াল।
পরবর্তী সময়ে এই মহাসড়কটি যখন ৬ লেনে রূপান্তরিত হবে তখন যেনো দুর্ঘটনার কারণ সংক্রান্ত এসব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয় এমন প্রত্যাশা এই পথে চলাচলকারী সকলের।
জানা গেছে, শুরু হতে যাচ্ছে ৬ লেন বিশিষ্ট ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়কের কাজ। আর এটা হলে বদলে যাবে ঢাকা থেকে তামাবিল পর্যন্ত ২৬৫ কিলোমিটার সড়কপথ। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ঢাকা-সিলেট অংশের ১৩টি প্যাকেজের টেন্ডার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়ে গেছে। সচেতন মহলের প্রত্যাশা, এই কাঙ্খিত সড়ক নির্মাণে যেনো অতীতের সড়ক নির্মাণের ভূলগুলোর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। বাঁক সরলীকরণ, বিটুমিসের অতিরিক্ত ব্যবহার না করা, পর্যাপ্ত দর্শনীয় সাইনবোর্ড ও দিক নির্দেশনা স্থাপন, গার্ডওয়াল, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখা, এসব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল। সর্বোপরি সড়কের বিভিন্ন স্থানে অত্যাধুনিক সিগনাল ও স্পিড মনিটরিং ব্যবস্থাসহ হাইওয়ে পুলিশের বিশেষ পেট্রোলের ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।
আমরা সিলেট অঞ্চলের উপরোক্ত দুটি সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন বিনির্মাণে এসব বিষয়ে দৃষ্টি ও মনোযোগ দেয়ার জন্য সওজ-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। অন্যথায় সড়ক ও মহাসড়ক হবে ঠিকই কিন্তু দুর্ঘটনা কমানো যাবে না।