আখালিয়া কাণ্ডে পুলিশের ২ মামলা : কারাগারে ৩
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ৯:৫১:৩৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : নগরীর আখালিয়াস্থ আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভুল ছাপা ও পুরনো ছেড়াফাড়া কুরআন পুড়ানোকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা। অপরটি ধর্মগ্রন্থ পুড়ানোর মামলা।
সোমবার রাতেই কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়। পুলিশ অ্যাসল্ট মামলার বাদী কোতোয়ালী থানার এসআই অঞ্জন কুমার দেবনাথ। মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০০-৩০০ জনকে আসামী করা হয়। আর ধর্মগ্রন্থ পুড়ানো মামলার বাদী কোতোয়ালী থানার আরেক এসআই এএইচএম রাশেদ ফজল। এ মামলার আসামী তিনজন। তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত রোববার রাত ১০টার দিকে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর অভিযোগ ওঠে। রাত ১১টার দিকে হঠাৎ উত্তাল হয়ে পড়ে নগরীর আখালিয়া এলাকা। স্থানীয় জনতা তাদের দুজনকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও ওই শিক্ষককে প্রতিষ্ঠানটির একটি কক্ষে আটকে রেখে ক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে রক্ষা করে।
এসময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপর হামলা করে। ঘটনাস্থল থেকে ১৩টি লাঠি, ২৩টি ইটের টুকরা ও ১টি পোড়া মোটরসাইকেলসহ ২টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ।
আর কোরআন শরীফ পুড়ানোর মামলায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন-আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান নুরুর রহমান (৫০)। তিনি কোতোয়ালি থানাধীন আখালিয়া তপুবন এলাকায় থাকেন। অপরজন ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানাধীন বাউলাপাড়া এলাকার ইদ্রিস আলীর ছেলে মাহবুব আলম (৪৫)। তিনিও আখালিয়া ধানুহাটারপাড় এলাকায় থাকেন। এছাড়া গ্রেফতারকৃত ক্বারী ইসহাক ফতেহপুর মাদ্রাসার শিক্ষক ও আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের খন্ডকালীন শিক্ষক। সিলেট বেতারের ক্বারিও তিনি। মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো: আজবাহার আলী শেখ।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুরআন পোড়ানোর মামলায় গ্রেফতারকৃত আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান ড. নুরুর রহমান একজন দ্বীনদার, ধর্মপ্রাণ ও পরোপকারী ব্যক্তিত্ব। ইসলামের বিধান মতে পড়ার অনুপযোগি কুরআন পোড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।
কুরআন শরীফ যদি পড়ার অনুপযুক্ত হয়ে যায় তবে তা পুড়ানোর বিধান আছে ইসলামে। এমন মতামত ব্যক্ত করেছেন মাওলানা শায়েখ আহমদুল্লাহ। তাঁর এমন বক্তব্য সম্বলিত ভিডিওটি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখা গেছে। শুধু আহমদুল্লাহই নয়, ইউটিউব খুঁজলে দেশবরেণ্য আরও অনেক আলেমেরও এমন মতামত জানা যাবে।
ঠিক এই কাজটিই করছিলেন নগরীর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান। কিন্তু সেখানে উপস্থিত কেউ ভুল বুঝে ফেসবুক লাইভের সাথে জড়িতদের কয়েকজনকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত করেন। শুরু হয় সম্প্রচার। মুহুর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা নগরজুড়ে। ফলে পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকে একশনে যেতে হয়েছে। মঙ্গলবার স্থানীয় জনসাধারণসহ বিভিন্ন সূত্রের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
রোববার (৬ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আখালিয়াস্থ আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পবিত্র কুরআন শরিফ পুড়ানোর অভিযোগ তুলে মারধর করেন স্থানীয়রা। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান এবং কোতোয়ালী ও জালালাবাদ থানা পুলিশ তাদের হেফাজতে রাখেন। রাত ১২টার দিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বিশেষ টিম সিআরটি এবং জালালাবাদ ও কোতোয়ালি থানার অতিরিক্ত পুলিশ এবং র্যাব-৯ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন।
এসময় উত্তেজিত জনতার একাংশ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। রাত সাড়ে ১২টার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাধ্য হয়ে ফাঁকা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। রাত ২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। উত্তেজিত মানুষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশের কয়েকজন সদস্যও আহত হন।
এ ব্যাপারে সোমবার ও মঙ্গলবার বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোরআন পুড়ানোর ঘটনাটি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কোন পরিকল্পিত ঘটনা ছিলনা। কিছু কপি পড়ার অযোগ্য হয়ে পড়ায় সেগুলো ধ্বংস করতেই পুড়াচ্ছিলেন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান নুরুর রহমান। তখন তার কাছে ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলেন ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানাধীন বাউলাপাড়া এলাকার ইদ্রিস আলীর ছেলে মাহবুব আলম। তিনিও ফেঁসে যান। তাদের দু’জনকে রোববার রাতেই পুলিশের হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। আর সোমবার বিকেলে ৩টার দিকে টুকেরবাজার থেকে আটক করা হয় ফতেহপুর মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ইসহাক আহমদকে।
এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরুর রহমান জানিয়েছেন, পুরানো কিছু কুরআন শরীফ পুড়িয়ে ফেলতে এবং তার বদলে নতুন কিছু কোরআন শরীফ লোকজনের মধ্যে বিতরণ করতে তার কাছে দিয়ে গিয়েছিলেন তার সহকর্মী শিক্ষক মাওলানা ইসহাক আহমদ। তিনি তাই করছিলেন। কিন্তু কুরআনের কপিগুলো পুড়তে দেরি হচ্ছিল দেখে তিনি দোকান থেকে আধা লিটার কেরোসিন আনিয়ে পুড়াতে গেলে স্থানীয়রা বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর কুরআন পোড়ানোর স্থানে স্থানীয় কয়েকজন জড়ো হয়ে চিৎকার চিচামেচি শুরু করেন। এর প্রেক্ষিতে কতিপয় স্থানীয় জনতা ও ফেসইবুক লাইভাররা অতিউৎসাহী ফেসবুকে লাইভ করতে শুরু করলে উত্তেজনা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।