সিঙ্গাপুর কানাডা থেকে নেমে স্বল্পোন্নত দেশ!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩০:৫৮ অপরাহ্ন
বলা হলো, বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে কিংবা উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটি বছর এমনকি ৬টি মাস অতিক্রান্ত হতে না হতেই, এখন বলা হচ্ছে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেখতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলকে ভোট দিতে হবে। কী বিস্ময়কর ও হতাশাব্যঞ্জক বক্তব্য। কোথায় উন্নয়নের রোল মডেল আর কোথায় উন্নয়নের জাহাজে ওঠার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা, অকুল সাগরে সাঁতরে চলা। গত দেড় দশকে উন্নয়নের এতো দাবি ও বাগাড়ম্বর সত্বেও বাংলাদেশ আজো স্বল্পোন্নত অর্থাৎ দরিদ্র দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠে আসতে পারেনি। অথচ বিগত দেড় দশক জুড়ে এদেশের ক্ষমতাসীনরা উন্নয়নের কথা বলে ষোল/সতেরো কোটি মানুষের কান ঝালাপালা করে ফেলেছেন।
চলতি বছরের ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ অনুসারে রপ্তানি ও জিডিপিতে এখনো নীচের সারিতে বাংলাদেশ। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পণ্য ও বাণিজ্যিক সেবা রপ্তানির শতকরা হিসাবে কয়েক বছর ধরে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) ৪৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নীচের সারিতে। ২০২২ সালে এটি ছিলো ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গত ১২ বছরে ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩০তম। ২০১০ সালের পর দেশটি মাত্র এক ধাপ এগিয়েছে।
জিডিপি হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি দেশের পণ্য ও পরিষেবার আর্থিক মূল্য। জিডিপিতে বাণিজ্যিক পরিষেবা রপ্তানি শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ হলেও পণ্য রপ্তানি ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। ১৪২ দশমিক ৩ শতাংশ নিয়ে পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিবুতি তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এরপর আছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়া ও লাওস, আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ মোজাম্বিক ও জাম্বিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি। তালিকার নীচের দিকে আছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ তিমুর লেস্তে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপদশে তুভালু, পূর্ব আফ্রিকার দেশ বুরুন্ডি, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইয়েমেন, মধ্য আফ্রিকার সংঘাত পীড়িত ক্যারিবীয় দ্বীপ হাইতি ও দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল।
বিশ্লেষকরা নিম্ন অনুপাতের জন্য রপ্তানিকৃত পণ্যের পরিমাণ কমের পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যের অভাবকেও দায়ী করেছেন। ২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার কথা আছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয়। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি অনুপাতে রপ্তানি বাড়েনি। ফলে জিডিপি’র সঙ্গে রপ্তানির অনুপাত কমেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ গার্মেন্টস খাত থেকে আসায় দেশের রপ্তানির পরিধি খুবই ছোট। রপ্তানির তুলনায় স্থানীয় বাজারে বিক্রিকে বেশী লাভজনক করে তুলে, এমন নীতিমালার পাশাপাশি কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রে কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা ও কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলো রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। তাদের মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ছোট, ভারতের মতো বড়ো নয়। উপরের তথ্য উপাত্ত ও পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর অর্ধশতাব্দি অতিক্রান্ত হলেও এখনো দেশটি সিঙ্গাপুর, কানাডা, চীন, মালয়েশিয়া দূরে থাক, প্রতিবেশী থাইল্যান্ড কিংবা ভিয়েতনামের কাছাকাছিও যেতে পারেনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে। বাংলাদেশকে এখনো পড়ে থাকতে হচ্ছে আফ্রিকার দুর্ভিক্ষপীড়িত কিংবা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অখ্যাত অনুন্নত দ্বীপ দেশগুলোর সারিতে। অথচ আমরা এতোদিন শাসকগোষ্ঠীর মুখ থেকে শোনা গেছে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর কানাডাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে।
অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, খোদ প্রধানমন্ত্রীকে ভোট চাইতে গিয়ে বলতে হচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশ চাইলে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, গত দেড় দশকে তাহলে বাংলাদেশের কোন উন্নয়ন হলো? এতোদিন যা বলা হলো, তার-ই বা কী হলো?