কানাইঘাটে সমন্বয় সভা বয়কট করলেন ইউপি চেয়ারম্যানরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ আগস্ট ২০২৩, ৮:৩৭:৫৪ অপরাহ্ন
কানাইঘাট প্রতিনিধি: উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে বাকবিতন্ডার পর কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা বয়কট করেছেন উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা।
বৃহস্পতিবার পূর্ব নির্ধারিত মাসিক সমন্বয় সভা সকাল ১১টায় উপজেলা সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অতিরিক্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা এসিল্যান্ড ফয়সাল আহমেদসহ বিভিন্ন দফতরের সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভা চলাকালীন ৯টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা বিশেষ করে উপজেলা কৃষি, প্রকল্প বাস্তবায়ন, উপজেলা প্রকৌশলী, প্রাণিসম্পদ, সমাজসেবা, মৎস্য ও মহিলা বিষয়ক অফিসের সকল সরকারি উন্নয়ন ও সেবামূলক কার্যক্রমে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সম্পৃক্ত না করে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা সমস্ত কাজ করে থাকেন। এমন অভিযোগ এনে চেয়ারম্যানবৃন্দ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখলে চেয়ারম্যানদের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন সভায় উপস্থিত কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল হক, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম। এ সময় এ দুই সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে চেয়ারম্যানদের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি কর্মকর্তাদের রুঢ় আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে চেয়ারম্যানগণ সভা বয়কট করে সভা কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান।
এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী ফোন করে চেয়ারম্যানদের সভাস্থলে আসার জন্য অনুরোধ করলে তারা সভায় আর যোগদান করেননি। যার কারণে চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতিতে মাসিক সমন্বয় কমিটির সভা বেলা ১টার দিকে শেষ হয়।
সভা বয়কটকারী লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন, দিঘীরপাড় পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী, সাতবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান আবু তায়্যিব শামীম, বড়চতুল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক চৌধুরী, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, বাণীগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ, ঝিঙ্গাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর, রাজাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা সামছুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা সবসময় জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে সরকারের বিভিন্ন কাজ করে আসছেন। এ নিয়ে বার বার সমন্বয় সভাগুলোতে তারা কথা বললেও সরকারি কর্মকর্তারা তাদের কথায় কোন কর্ণপাত করেননি।
চেয়ারম্যানরা আরো বলেন কৃষি, প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রাণিসম্পদ, সমাজসেবা, মৎস্য ও মহিলা বিষয়ক অফিসের কর্মকর্তারা তাদের খেয়াল খুশি মত অফিসের মাঠ পর্যায়ের উন্নয়ন থেকে শুরু করে সকল কাজ চেয়ারম্যানদের পাশ কাটিয়ে করে থাকেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পরিপত্র আমরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে পেয়ে থাকি, কিন্তু মিটিংয়ে বার বার আলোচনা করলেও গোজামিল দিয়ে চেয়ারম্যানদের বুঝানোর চেষ্টা করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এমনকি প্রাণিসম্পদ অফিস, মৎস্য অফিসসহ বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে এসব কর্মকান্ডে চেয়ারম্যানদের কোন সংশ্লিষ্টতার সুযোগ নেই বলে আমাদের জানিয়ে থাকেন।
তারা আরো বলেন, আজকের সমন্বয় সভায় সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের এমন আচরণ নিয়ে চেয়ারম্যানরা কথা বলার সময় সভায় উপস্থিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ও কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল হক উত্তেজিত হয়ে জনপ্রতিনিধিদের হেয়প্রতিপন্ন করে বক্তব্য রাখেন। তাদের এমন বক্তব্যে ইউপি চেয়ারম্যানগণ মাসিক সমন্বয় সভা বয়কট করেছেন এবং বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সমন্বয় সভাসহ উপজেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সভায় তারা যোগদান করবেন না বলে জানান।
তাছাড়াও সমন্বয় সভায় অতিরিক্ত ইউএনও’র দায়িত্বে থাকা নবাগত সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আহমেদ প্রথম মিটিংয়ে কোন ধরণের পরিচয় পর্ব না করে দীর্ঘসময় মিটিং চলাকালীন বাইরে চলে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যানরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী বলেন, সমন্বয় সভা চলাকালে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানরা সরকারের কিছু দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে কথা বললে একপর্যায়ে চেয়ারম্যানরা সভাস্থল ত্যাগ করেন। আমি বার বার তাদেরকে সমন্বয় সভায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও পারিনি।
নবাগত এসিল্যান্ড সভাস্থল থেকে বাইরে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মুমিন চৌধুরী বলেন, সমন্বয় সভা চলাকালে ডিসির প্রতিনিধি হিসেবে কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কাজে এসিল্যান্ড আমাকে জানিয়ে গিয়েছিলেন। তবে দ্রুত বিষয়টি মিমাংসা করা হবে বলে উপজেলা চেয়ারম্যান জানান।